কলকাতা, 5 জুন: বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী মেধা পাটকর । তাঁর অভিযোগ, দেশের একাধিক গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করার লাগাতার চেষ্টা চলছে বর্তমান শাসকের উদ্যোগে । ব্যবসায়িক স্বার্থে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য জল, জমি ও জঙ্গলকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ । কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা একটুও ভাবা হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি । এর বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে বলে মনে করেন মেধা । সেই কারণেই জল, জমি ও জঙ্গল রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গ্রাম সংসদের গুরুত্বকে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন ।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেধা পাটকর ৷ তিনি বলেন, সিবিএসসি বোর্ডে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের একটি অধ্যায় পাঠ্যক্রমে ছিল, সেটিকেও বাদ দেওয়া হয়েছে । তাঁর কথায়, "সার্বিকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতিতে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্যবসায়িক স্বার্থে । জলপরিবহণে 22 হাজার কিলোমিটার ক্রুজ চালানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার । এ রকম একাধিক পরিবেশ বিরোধী প্রজেক্ট সরকার চালু করছে, তারপরে মন্ত্রক থেকে অনুমতি হচ্ছে । বর্তমান শাসক দল নির্দিষ্ট কর্পোরেট গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় মরিয়া, যেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়ার পাশাপাশি পুনরায় ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে মেতে উঠেছে তারা ।"
পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক যে আইন রয়েছে সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেধা । তিনি বলেন, বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ড, বন সংরক্ষণ আইন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতো একাধিক যে পরিবেশ বাঁচানোর আইন এবং সংস্থা রয়েছে, সেগুলিকে কোনও রকম ভাবে বাঁচিয়ে রেখে আইন লঙ্ঘন করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার । এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও শামিল হয়েছে ।
মেধার দাবি, পরিবেশ সংক্রান্ত 2003 সাল থেকে 2017 সাল পর্যন্ত যে সমস্ত আইন ছিল, সেগুলিকে বদলের চেষ্টা করছে সরকার । গ্রাম সভার অনুমতি ছাড়াই জঙ্গল উজাড় করার চেষ্টা চলছে । নদী থেকে মাটি তোলা হচ্ছে । ঘন জঙ্গলে এলাকার খনিজ সম্পদ উত্তোলনের নামে সবুজ ধ্বংস করা হচ্ছে । বিভিন্ন কারখানার যে অবশিষ্ট, তা নদীতে ফেলা হচ্ছে ৷ সে বিষয়ে সরকারের কোনও নজর নেই । মহাকাল উজ্জয়িনী দেখতে লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছেন । কিন্তু শিপ্রা নদীর যে ভয়াবহ অবস্থা, তার দিকে কেউ দৃষ্টিপাত করছে না । এর বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে যাঁরা সচেতন আছেন, তাঁদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই জোরদার করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি ৷
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস ! জেনে নিন তাৎপর্য
মেধা আরও জানিয়েছেন যে, পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নদী বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও, মৎস্যজীবী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও নামে একাধিক জনসংগঠন গুলির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ 2018 সালে ভারতের 351টি নদী অংশকে দূষিত বলে চিহ্নিত করেছিল । যেগুলি 2022 সালের মধ্যে সংস্কার করে অবস্থার উন্নতির টার্গেটও নিয়েছিল । কিন্তু তার মধ্যে 311টি নদী এখনও অত্যন্ত দূষিত ।
ভারতের প্রধান নদী গঙ্গা এগারোটি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । প্রায় 50 কোটি মানুষ এই নদীর উপর কোনও না কোনও ভাবে নির্ভরশীল । অথচ দূষণের নিরিখে পৃথিবীর পঞ্চম স্থানে রয়েছে গঙ্গা । অথচ এই গঙ্গাকে সংস্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর বা সরকার নানা রকম দাবি করছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই বলেও অভিযোগ পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের ।