কলকাতা, 21 জুন: মন ভালো রাখতে অপরিহার্য সঙ্গীত ৷ গলা ছেড়ে না-গাইলেও গুনগুন করে গান করেন না এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে নেই ৷ কিন্তু জানেন কী ? অপারেশন টেবিলেও গানের গুরুত্ব রয়েছে ৷ চিন্তা থেকে শুরু করে ভয় ও ব্যথা-যন্ত্রণার উপশমে ভীষণ কাজ করে গান ৷ মিউজিক থেরাপি এ রাজ্যে ততটা চালু না-হলেও বাগুইহাটির এক হাসপাতালে রোগীদের গান শুনিয়েই অর্ধেক চাঙ্গা করে তুলছেন অস্থি রোগের চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল মিউজিক থেরাপিস্ট সুমন্ত ঠাকুর ৷
হাসপাতালে গেলে দেখা যাবে অপারেশন টেবিলে শুয়ে রয়েছেন আশঙ্কাজনক রোগী ৷ তার প্রাণ বাঁচাতে হবে চিকিৎসককে । মাথা ঠান্ডা রেখে করতে হবে অস্ত্রোপচার । উপায় একমাত্র গান । নিজের মনে গান গাইছেন চিকিৎসক, গলা মেলাচ্ছেন শুয়ে থাকা রোগী । বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বললেন চিকিৎসক ও রোগীরা ৷ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় কেমন কাজ করছে সঙ্গীত ? জানালেন তাঁরা ৷
20 বছরেরও বেশি সময় ধরে রোগী দেখে চলেছেন চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর । কিন্তু এই রোগী দেখার মাঝেও তিনি বজায় রেখেছেন তাঁর ভালোবাসার জিনিস গান। ছোটবেলায় তাঁর গুরু বলেছিলেন, চিকিৎসক হয়ে গানকে ভুলে যেও না। বরং মানুষের স্বার্থে এই গান ব্যবহার কর। সেই কথাই কুরে কুরে খেত তাঁকে । তাই 2007 সালে তিনি নিজের ওয়ার্ডে শুরু করেন মিউজিক থেরাপি । এরপর 2014 সাল থেকে অপারেশনের থিয়েটারেও শুরু হয় এই থেরাপি । একদিকে চলে হাড়ের চিকিৎসা, অন্যদিকে চলে গানের মাধ্যমে মন ভালো করার কাজ ।
আরও পড়ুন: উদ্বেগ কমাতে রোগী ও তাঁর পরিজনদের স্বার্থে হাসপাতাল চত্বরে বসল মিউজিক সিস্টেম
তাঁর কথায়, "যাতে কোনও রোগী অস্ত্রোপচারের সময় চিন্তিত হয়ে না পড়েন সেই জন্যই এই পরিকল্পনা । কোন গান তারা পছন্দ করতে পারেন সেইগুলো ভাবনাচিন্তা করেই আমরা গান সাজাই । যে বাজাতে পারে তাকে বাজাতে বলি, যে আবৃত্তি করতে চায় তার জন্য আবৃত্তির ব্যবস্থা থাকে । অস্ত্রোপচারের সময় যদি এই ব্যবস্থাগুলো আমরা রাখি রোগীর মনোবল বৃদ্ধি পায় । যা চিকিৎসার জন্য পজিটিভ । শুধু অপারেশন থিয়েটার নয়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোনও রোগী ভর্তি হলে আইসিইউতেও চলে এই গান ।"
বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা রুমা মণ্ডল ভর্তি রয়েছেন এই চিকিৎসকের অধীনে । মেদিনীপুরে বাড়ি তাঁর। বোন ম্যারো অর্থাৎ অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি । এই হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি চলছে তাঁর মিউজিক থেরাপিও । চিকিৎসকের সঙ্গেই গলা মেলাচ্ছেন তিনি । রুমা মণ্ডল বলেন, "এই গান আমার বেশ ভালোই লাগে । গানের মাধ্যমেই আমি যেন সুস্থ হয়ে যাচ্ছি ।" তবে শুধুই উনিই নন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন জয়দীপ ভট্টাচার্য । তাঁর কথায়, "বাইক অ্যাক্সিডেন্টের জন্য আমার পায়ের অবস্থা খুবই সংঘাতিক হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে । সেই জন্য আমি চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কাছে আসি। অপারেশনের ঘরে ঢুকে আমি অবাক হয়ে যাই। গানবাজনার জন্য বিভিন্ন আয়োজন রাখা রয়েছে সেখানে । সেই গান হতে হতেই আমার অপারেশন হয় ।" এরকমই একের পর এক রোগীকে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর দেখেন গানের মাধ্যমে । তবে শুধু ডাক্তারবাবু একা নন, তাঁর সঙ্গে থাকে পাঁচ সদস্যের একটি দল ।
তবে বর্তমানে রোগীদের চাপ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা থাকলেও রোগীর পরিবারে মানসিক অবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে । এই বিষয়ে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে মিউজিক্যাল ক্যাফে তৈরি করার চেষ্টা চলছে হাসপাতালে ৷ যেখানে রোগীর পরিবার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি গান শুনেও মন ভালো করা বা রোগীর জন্য উদ্বিগ্নতা একটু হলেও কাটাতে পারবেন ।"
আরও পড়ুন: শরীর-মন নিয়ে নাজেহাল ? ভরসা রাখুন মিউজিক থেরাপিতে