ETV Bharat / state

টালিগঞ্জে কফি উইথ কার্টুন, অজানা ঢপেশ্বর মহারাজ আর চেনা শ্যামাপ্রসাদের গল্প - কফির সঙ্গে কার্টুন

Coffee with cartoon: সন্ধে ছ'টা থেকে 10টার মধ্যে টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে গেলে ঢুঁ মারতে পারেন এখানে ৷ কেতাদুরস্ত কফিশপ না হলেও এখানে মানুষ ভিড় জমান সৃষ্টিশীল কফিবিক্রেতার টানে ৷

Man sells coffee
টালিগঞ্জে কফি উইথ কার্টুন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 4, 2023, 8:37 PM IST

টালিগঞ্জে কফি উইথ কার্টুন

কলকাতা, 4 ডিসেম্বর: এ এক কফি বিক্রেতার গল্প । দক্ষিণ কলকাতার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁকে অবশ্য অন্য এক পরিচয়ে চেনেন । তিনি ঢপেশ্বর মহারাজ । ভালো নাম অবশ্য একটা আছে । বাবা-মা তাঁকে ভালো নাম দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ দে । কিন্তু টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনের রাস্তায় সন্ধে ছ'টা থেকে 10টা যাঁকে রোজদিন দেখা যায়, তাঁকে বেশিরভাগ মানুষই চেনেন ঢপেরশ্বর মহারাজ নামে । এখানে নামের পেছনে অবশ্য অন্য একটা রহস্য আছে । ইনি এমন একজন কফি বিক্রেতা, যাঁর সৃষ্টিশীল কাজ প্রতিদিন মহানগরের একটা বড় অংশের মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । সারাদিনের হাজার ব্যস্ততা, স্ট্রেস, ঘটনাবহুল নগর জীবনের মাঝেও যেখানে এলে মানুষ খুঁজে পায় এক অন্য সময়ের সন্ধান ।

শ্যামাপ্রসাদ দে প্রথম জীবনে চেয়েছিলেন কার্টুনিস্ট হতে । আঁকার হাতও নিতান্ত মন্দ নয় । মন্দ নয় তাঁর ভাবনা এবং সৃজনশীলতাও । কিন্তু প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে তাঁর আর কার্টুনিস্ট হয়ে ওঠা হয়নি । যিনি হয়তো সুযোগ পেলে সংবাদমাধ্যমে হাজার কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াতে পারতেন, তিনি তাঁর জীবনকে বইয়ে দেন অন্য খাতে । সৃষ্টিশীল কার্টুনকে দূরে সরিয়ে রেখে ম্যাগাজিন ব্যবসাকে বেছে নেন পেট চালানোর জন্য । কিন্তু কার্টুন বা তাঁর আঁকা, তাঁর ভাবনাকে তিনি ছেড়ে দেননি । আজ তিনিও কার্টুনিস্ট । কফি বিক্রির সঙ্গে চলে তাঁর কার্টুন চর্চা ।

যাঁরা এই চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে আসেন তাঁরা জানেন, অতীতে তিনি টালিগঞ্জের এই চত্বরেই পেপার ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন ৷ তার সঙ্গে ছবি আঁকতেন, কার্টুন তৈরি করতেন । কিন্তু সংকটের তখনও কিছু বাকি ছিল । এই সৃজনশীলতা এবং জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে বাধ সাধে করোনা । একটা সময় বন্ধই হয়ে যায় ম্যাগাজিন ব্যবসা । কারণ অতিমারি করোনা সংক্রমণের ছোঁয়াচ থেকে বাঁচতে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল মানুষ । ফলে শ্যামাপ্রসাদ দে পড়লেন বিপাকে । পেট তো আর করোনা বোঝে না ৷ তাঁর সঙ্গে সংসার আছে, পরিবারের ভরণ পোষণ, মেয়ের পড়াশোনা । বাধ্য হয়েই সবকিছু ছেড়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে । এখন সকালবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চা বিক্রি করেন শ্যামাপ্রসাদ দে । বিকেল বেলায় এই টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে ছোট্ট দোকানটিতে কফি বিক্রি করেন । আর তার সঙ্গেই চলছে তাঁর কার্টুন আঁকা এবং সৃজনশীলতার সাধনা । আজ যাঁরা তাঁর দোকানে আসেন, তাঁরা এই কার্টুন দেখে উদ্বুদ্ধ হন ৷ কখনও কখনও তাঁদের কার্টুন এঁকে দিয়েও হয় কিছুটা বাড়তি ইনকাম । আর এ সব নিয়েই আজ চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ ।

ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্যামাপ্রসাদ দে বলেন, তাঁর কার্টুন বা ছবির অনুপ্রেরণা হল রোজ চারপাশে ঘটা ঘটনাবলী । রোজ যা দেখেন, তাকেই কার্টুনে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন । যারা তাঁর দোকানে যান, তাঁদের স্ট্রেস কিছুটা কমাতেই তাঁর এই প্রচেষ্টা ৷

তাঁর কথায়, "এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকের প্রশংসা আমি পেয়েছি । এমনকি বিভিন্ন সময় রাজ্য সরকারের আয়োজন করা বিভিন্ন মেলাতেও আমার কাজের প্রশংসা করা হয়েছে । কিন্তু মানুষ যখন রোজ কফি খেতে এসে এখানে প্রশংসা করেন, তখন সবচেয়ে ভালো লাগে । মানুষের প্রশংসাই আমার পুরস্কার । আগামী দিনেও আমি চেষ্টা করব নতুন নতুন কার্টুন এঁকে এখানে যাঁরা কফি খেতে আসেন তাঁদের আনন্দ দিতে ।"

সবশেষে যে কথা বলতে হয়, কার্টুন এবং সৃষ্টিশীলতার জগতে তিনি আজও অজানা ঢপেশ্বর মহারাজ । তাঁর ছোট ছোট টিপ্পনি সেখানে থাকা মানুষদের আনন্দ দেয় । আর কফির কাপ হাতে মোটা ফ্রেমের চশমায় থাকা মানুষটি যে ছ'টা থেকে 10টা রোজ দিন টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে কফি খাওয়ান, তিনি হলেন চেনা শ্যামাপ্রসাদ দে । সময় চলছে ৷ শহর কলকাতা এই অচেনা ঢপেশ্বর মহারাজকে কোনওদিন চিনবে কি ! মূল্য পাবে কি তাঁর সৃজনশীলতা ! হয়তো তার উত্তর দেবে সময় ।

আরও পড়ুন:

  1. সুরার স্বাদ চায়ে মেটাচ্ছেন এমএ পাশ যুবক, বিক্রি বাড়ছে রমরমিয়ে
  2. কোন সময় কফি পান করলে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকবে, জেনে নিন
  3. কফি কাউচে সলমন ! করণের অতিথি তালিকায় লম্বা চমক

টালিগঞ্জে কফি উইথ কার্টুন

কলকাতা, 4 ডিসেম্বর: এ এক কফি বিক্রেতার গল্প । দক্ষিণ কলকাতার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁকে অবশ্য অন্য এক পরিচয়ে চেনেন । তিনি ঢপেশ্বর মহারাজ । ভালো নাম অবশ্য একটা আছে । বাবা-মা তাঁকে ভালো নাম দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ দে । কিন্তু টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনের রাস্তায় সন্ধে ছ'টা থেকে 10টা যাঁকে রোজদিন দেখা যায়, তাঁকে বেশিরভাগ মানুষই চেনেন ঢপেরশ্বর মহারাজ নামে । এখানে নামের পেছনে অবশ্য অন্য একটা রহস্য আছে । ইনি এমন একজন কফি বিক্রেতা, যাঁর সৃষ্টিশীল কাজ প্রতিদিন মহানগরের একটা বড় অংশের মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । সারাদিনের হাজার ব্যস্ততা, স্ট্রেস, ঘটনাবহুল নগর জীবনের মাঝেও যেখানে এলে মানুষ খুঁজে পায় এক অন্য সময়ের সন্ধান ।

শ্যামাপ্রসাদ দে প্রথম জীবনে চেয়েছিলেন কার্টুনিস্ট হতে । আঁকার হাতও নিতান্ত মন্দ নয় । মন্দ নয় তাঁর ভাবনা এবং সৃজনশীলতাও । কিন্তু প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে তাঁর আর কার্টুনিস্ট হয়ে ওঠা হয়নি । যিনি হয়তো সুযোগ পেলে সংবাদমাধ্যমে হাজার কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াতে পারতেন, তিনি তাঁর জীবনকে বইয়ে দেন অন্য খাতে । সৃষ্টিশীল কার্টুনকে দূরে সরিয়ে রেখে ম্যাগাজিন ব্যবসাকে বেছে নেন পেট চালানোর জন্য । কিন্তু কার্টুন বা তাঁর আঁকা, তাঁর ভাবনাকে তিনি ছেড়ে দেননি । আজ তিনিও কার্টুনিস্ট । কফি বিক্রির সঙ্গে চলে তাঁর কার্টুন চর্চা ।

যাঁরা এই চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে আসেন তাঁরা জানেন, অতীতে তিনি টালিগঞ্জের এই চত্বরেই পেপার ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন ৷ তার সঙ্গে ছবি আঁকতেন, কার্টুন তৈরি করতেন । কিন্তু সংকটের তখনও কিছু বাকি ছিল । এই সৃজনশীলতা এবং জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে বাধ সাধে করোনা । একটা সময় বন্ধই হয়ে যায় ম্যাগাজিন ব্যবসা । কারণ অতিমারি করোনা সংক্রমণের ছোঁয়াচ থেকে বাঁচতে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল মানুষ । ফলে শ্যামাপ্রসাদ দে পড়লেন বিপাকে । পেট তো আর করোনা বোঝে না ৷ তাঁর সঙ্গে সংসার আছে, পরিবারের ভরণ পোষণ, মেয়ের পড়াশোনা । বাধ্য হয়েই সবকিছু ছেড়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে । এখন সকালবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চা বিক্রি করেন শ্যামাপ্রসাদ দে । বিকেল বেলায় এই টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে ছোট্ট দোকানটিতে কফি বিক্রি করেন । আর তার সঙ্গেই চলছে তাঁর কার্টুন আঁকা এবং সৃজনশীলতার সাধনা । আজ যাঁরা তাঁর দোকানে আসেন, তাঁরা এই কার্টুন দেখে উদ্বুদ্ধ হন ৷ কখনও কখনও তাঁদের কার্টুন এঁকে দিয়েও হয় কিছুটা বাড়তি ইনকাম । আর এ সব নিয়েই আজ চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ ।

ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্যামাপ্রসাদ দে বলেন, তাঁর কার্টুন বা ছবির অনুপ্রেরণা হল রোজ চারপাশে ঘটা ঘটনাবলী । রোজ যা দেখেন, তাকেই কার্টুনে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন । যারা তাঁর দোকানে যান, তাঁদের স্ট্রেস কিছুটা কমাতেই তাঁর এই প্রচেষ্টা ৷

তাঁর কথায়, "এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকের প্রশংসা আমি পেয়েছি । এমনকি বিভিন্ন সময় রাজ্য সরকারের আয়োজন করা বিভিন্ন মেলাতেও আমার কাজের প্রশংসা করা হয়েছে । কিন্তু মানুষ যখন রোজ কফি খেতে এসে এখানে প্রশংসা করেন, তখন সবচেয়ে ভালো লাগে । মানুষের প্রশংসাই আমার পুরস্কার । আগামী দিনেও আমি চেষ্টা করব নতুন নতুন কার্টুন এঁকে এখানে যাঁরা কফি খেতে আসেন তাঁদের আনন্দ দিতে ।"

সবশেষে যে কথা বলতে হয়, কার্টুন এবং সৃষ্টিশীলতার জগতে তিনি আজও অজানা ঢপেশ্বর মহারাজ । তাঁর ছোট ছোট টিপ্পনি সেখানে থাকা মানুষদের আনন্দ দেয় । আর কফির কাপ হাতে মোটা ফ্রেমের চশমায় থাকা মানুষটি যে ছ'টা থেকে 10টা রোজ দিন টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে কফি খাওয়ান, তিনি হলেন চেনা শ্যামাপ্রসাদ দে । সময় চলছে ৷ শহর কলকাতা এই অচেনা ঢপেশ্বর মহারাজকে কোনওদিন চিনবে কি ! মূল্য পাবে কি তাঁর সৃজনশীলতা ! হয়তো তার উত্তর দেবে সময় ।

আরও পড়ুন:

  1. সুরার স্বাদ চায়ে মেটাচ্ছেন এমএ পাশ যুবক, বিক্রি বাড়ছে রমরমিয়ে
  2. কোন সময় কফি পান করলে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকবে, জেনে নিন
  3. কফি কাউচে সলমন ! করণের অতিথি তালিকায় লম্বা চমক
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.