কলকাতা, 2 মে: এই মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি । বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি পদে পদে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে । অন্যদিকে, একের পর এক তৃণমূলের নেতা-বিধায়কের নাম জড়িয়েছে দুর্নীতি মামলায় । গ্রেফতারও হয়েছেন শাসক দলের তিন বিধায়ক ৷ ইতিমধ্যেই কারাগারের অন্তরালে রয়েছেন একদা মমতা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী তথা মন্ত্রিসভার দু'নম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায় । এরপরও নতুন নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করে যুব প্রজন্মকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার । কিন্তু মঙ্গলবার অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ।
এদিন নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৷ সেই বৈঠকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখ থেকে কিছুটা অন্য সুর শোনা গিয়েছে । যদিও এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি । সবটাই নবান্নের একটি সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে । মন্ত্রিসভার বৈঠকে এদিন নাকি মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন অনুমতি দেওয়ার পরেও নিয়োগে কেন দেরি হচ্ছে ?
জানা গিয়েছে এদিনের বৈঠকে তিনি বলেছেন, "আইনি জালে আমরা কিছু চাকরি দিতে পারছি না ৷ কিন্তু যে চাকরিগুলি আমাদের সেগুলিতে লোক নিন ৷ অনেক দফতরেই শূন্যপদ রয়েছে । বহু ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর নিয়োগ নিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিলেও সেগুলিতে এখনও পর্যন্ত নিয়োগ হচ্ছে না।" মনে করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অভিযোগ আধিকারিকদের দিকে ।
তবে প্রশ্ন উঠছে এই মন্তব্যের মাধ্যমে কী ইঙ্গিত দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ? তার নির্দেশের পরেও কি সঠিকভাবে কাজ করছেন না আমলারা ? যার কারণে দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও বহু শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রী এমন উষ্মা প্রকাশ করে থাকেন তাহলে বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল । এই মুহূর্তে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী সকলেই এক বাক্যে সরকারকে দুষছেন যে এই সরকার সঠিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না । বিভিন্ন সরকারি দফতরে প্রচুর শূন্য পদ থাকলেও, এই শূন্য পদে লোক নেওয়া হচ্ছে না । আর এর কারণে যুব সম্প্রদায়ের একাংশের ক্ষোভ এসে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে রাজ্যের শাসকদলের উপরে ।
আরও পড়ুন: বুলডোজারের জবাব বাউলে, অমর্ত্য সেনের বাড়ি রক্ষায় দলকে প্রতিচীর সামনে ধরনায় বসার নির্দেশ মমতার
এরপর প্রশ্ন উঠতে পারে নিয়োগ প্রক্রিয়াযর এই দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী কি আমলাতন্ত্র ? শেষ পর্যন্ত আমলা তন্ত্রের ফাঁসেই কি আটকে যাচ্ছে নিয়োগ ? কিন্তু যেহেতু এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তাই এর জবাব একরকম অধরাই থাকছে । আর অভিযোগের তির বারবার উঠে আসছে তৃণমূলের দিকেই ।
এদিকে মঙ্গলবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নিয়োগের বিষয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । ইএসআই স্কিমের অধীনে মানিকতলা ইএসআইতে ওটি টেকনিশিয়ানের সাতটি শূন্যপদ তৈরি হয়েছে । আপাতত তার 3টি পূরণ করার প্রস্তাবে এদিন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইভাবে মৎস্য দফতরের অধীনে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ফিশারিজ সার্ভিসেসের গ্রেড 2 তে 81 জনকে নেওয়া হবে। অন্যদিকে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে কোষাধ্যক্ষ পদে এক জনকে নেওয়ার বিষয়েও ছাড়পত্র মিলেছে । এছাড়াও দক্ষিণ 24 পরগনা এবং কোচবিহারের একাধিক কলেজে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা ।