নয়াদিল্লি, 17 মে: চব্বিশের ভোটের প্রস্তুতি কর্ণাটক থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে চায় কংগ্রেস ৷ আর সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধী ঐক্যের শক্তিপ্রদর্শনই মূল লক্ষ্য হতে চলেছে কংগ্রেসের ৷ হাত শিবিরের তরফে ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ৷ আমন্ত্রণ গিয়েছে ওড়িশা, বিহার, ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ডের মতো অবিজেপি মনোভাবাপন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছেও ৷
আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশর প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকেও ৷ আর এই আমন্ত্রণ থেকেই স্পষ্ট মূলত এই শপথগ্রহণকে সামনে রেখেই কর্নাটকের মঞ্চ থেকে বিরোধী জোটের ছবি দেখাতে মরিয়া কংগ্রেস ৷ মুখ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণ স্বীকার করলেও, নবান্ন সূত্রের খবর, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সম্ভবত নাও যেতে পারেন মমতা ৷ তবে বিরোধী ঐক্যের ছবিতে থাকলেও আদৌ 24-এর ভোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব তৃণমূল স্বীকার করবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে রাজনৈতিক মহল ৷
আগামী বছর দেশে লোকসভা ভোট ৷ তার আগে 20 মে কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী পদে সিদ্দারামাইয়ার শপথ অনুষ্ঠানের দিনই বিরোধী শক্তি প্রদর্শন করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস ৷ আর সেকারণেই তিক্ততাকে দূরে সরিয়ে রেখে আপাতত অবিজেপি সবক'টি দলকেই পাশে পেতে চাইছে কংগ্রেস ৷ তাই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সমস্ত সমমনোভাবাপন্ন দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত যতদূর জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এদিন নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে না-গেলেও তাঁর এক প্রতিনিধি অবশ্যই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ৷ নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভবত সিদ্দারামাইয়ার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে তাঁর হয়ে অন্য কেউ সেখানে প্রতিনিধিত্ব করবেন ৷ যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে এখনই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।
এদিন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল বলেন, "আমরা 20 মে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে সব সমমনা দলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ৷" কংগ্রেস দলীয় সূত্রে খবর, এনসিপি, তৃণমূল, আপ, শিবসেনা, আরজেডি, জেডিইউ, ডিএমকে, সিপিআইএম, সিপিআই, আরএসপি, কেরালা কংগ্রেস, জেএমএম-সহ মোট 19টি অবিজেপি দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের আশা অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতারা সকলেই এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী পদে সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে ডিকে শিবকুমার ছাড়াও ওইদিন 11 জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীও শপথ নেবেন বলে খবর মিলেছে ৷
এদিন কংগ্রেসের তরফ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, হাজির থাকতে পারেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, রাজস্থানের অশোক গেহলট, হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিং সুখু, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর এমকে স্টালিন, তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও, বিহারের নীতিশ কুমার এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককেও। যদি শেষ পর্যন্ত এরা সকলেই উপস্থিত থাকেন তবে বিজেপি বিরোধী জোটের একটা সুস্পষ্ট ছবি শনিবার দেখা যেতে পারে বেঙ্গালুরু থেকে ৷ প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে তৎকালীন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এসডি কুমারস্বামী শপথেও একইভাবে বিরোধী ঐক্যের ছবি দেখা গিয়েছিল। সেবারও একই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরিরা। সে সময়ও একইভাবে শপথকে কেন্দ্র করে বিরোধী ঐক্যের ছবি ধরা পড়লেও পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে সেই ঐক্য কোনও কাজেই আসেনি।
অন্যদিকে, সম্প্রতি তৃতীয় ফ্রন্ট বা জোটের সম্ভবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তৃতীয় কোনও জোটেই বিজেডি থাকবে না ৷ তাঁর দল বিজেডি 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে একাই লড়াই করবে ৷