কলকাতা, 8 জুন: ওড়িশার রেল দুর্ঘটনায় যেভাবে তদন্ত হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরেই তা নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বারবার তিনি বলেছেন সত্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে রাজ্য সরকারের নতুন জনসংযোগ প্রকল্প 'সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী' উদ্বোধনের দিন রেল দুর্ঘটনা নিয়ে আরও একবার কেন্দ্রকে একহাত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এ দিন রেলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার একে মোহান্তি একটি রিপোর্ট দিয়েছেন । সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিগনালে কোনও সমস্যা ছিল না । এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন তুলেছেন, সিগনালের সমস্যা না থাকলে দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে ! তদন্ত শেষ করতে কেন তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে ! আসল ঘটনাকে চাপা দিতেই কি তৎপরতা ?
প্রসঙ্গত, যে প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা হচ্ছে তাতে যে তিনি খুশি নন, বারবার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা । বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি রেলমন্ত্রককে হাতের তালুর মতো চেনেন । কারণ তিন তিনবার রেলমন্ত্রী হয়েছেন তিনি । কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ হয় কীভাবে, এই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ৷
আরও পড়ুন: ৮ জুলাই এক দফাতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, মনোনয়ন পেশ শুক্রবার থেকেই
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত কোথায় হল ! এত তাড়াহুড়ো কীসের ! এখন বলা হচ্ছে সিগন্যালের সমস্যা নেই, তাহলে আগে সিগন্যালের সমস্যার কথা কেন বলা হয়েছিল ! মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি চাই সত্য প্রকাশ্যে আসুক । কিন্তু আমি দেখছি আসল ঘটনাকে চাপা দেওয়ার জন্য এদের তৎপরতা চলছে । আমি আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য এই কারণে রাখিনি ৷ কারণ আমি চেয়েছি সত্যটা মানুষ জানুক । আমরা চেয়েছিলাম আগে উদ্ধারকাজটা চলুক । এখনও অনেকগুলো বডি পড়ে রয়েছে । আমাদের ওই দেহগুলো উদ্ধার করার দরকার আছে । সেগুলিকে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে । কিন্তু এ সব ঠিকমতো না করে এক একদিন এক-এক কথা বলা হচ্ছে ।"
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, আদতে কিছুই যখন সমস্যা ছিল না, তাহলে এই ঘটনা কী করে ঘটল ! কিছু তো হয়েছিল ! যার কারণে তিনটে ট্রেন একসঙ্গে এক জায়গায় চলে এসেছিল । কী হয়েছিল সেটা বের করার দায়িত্ব কার । মমতার কথায়, "আমার কাছে সরকার আছে বলে আমি যা খুশি তাই করতে পারি এমনটা চলতে পারে না । তদন্তেরও একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে । ওদের নির্দেশমতো একেক জন ব্যক্তি একেক দিন একেক রকম কথা বলছেন, তাহলে কী করে চলবে । এ ভাবে তো মানুষগুলোর জীবন আর ফেরত পাওয়া যাবে না । যে মৃত্যু, যে রক্তপাত, যে অশ্রু আমরা দেখলাম তার জন্য কে কৈফিয়ত দেবে ! এর ক্লারিফিকেশন কে দেবে ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন বলেন, আমি ওদের দেওয়া রিপোর্টকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি না । দুদিনে কোনও ভাবেই তদন্ত শেষ হতে পারে না । কোন সিগনাল গ্রিন ছিল, কোন সিগনাল রেড ছিল সেটা আমাদের জানার কথা নয় । আদতে সবকিছু ঠিক ছিল তো দুর্ঘটনাটা ঘটল কীভাবে !"
আরও পড়ুন: অভিযোগ এলে গড়িমসি চলবে না, আধিকারিকদের কড়া হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর
কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, "কার ভুল ছিল সেটা বের করা ওদের কাজ, জনগণের কাজ নয় । কালকেও ওড়িশায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । তাই আমরা চাই সত্য সামনে আসুক । এটা এত ছোট বিষয় নয় । যাতে যেমন তেমন করে একটা ব্যাখ্যা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যায় । সত্যকে চাপা দিতেই এক এক দিন, এক এক কথা বলা হচ্ছে ।"