কলকাতা, 27 ডিসেম্বর: বছরের শুরুতেই গঙ্গাসাগর মেলা। মেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলা উপলক্ষে দফতর ধরে ধরে সমস্ত ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন তিনি। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ট্রেন-বাস চালানো শুরু করে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা-নিরাপত্তার সব দিক বুধবার খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 12 জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এবছরের গঙ্গাসাগর মেলা। পুর্ণাথীরা আসতে শুরু করবে 8 জানুয়ারি থেকে। মেলা চলবে 17 জানুয়ারি পর্যন্ত। এই মেলা নিয়ে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় তার জন্য এদিন প্রশাসনের শীর্ষ অফিসারা নজরদারি করবেন। বুধবার নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মেলায় যাতায়াতের জন্য পূর্বরেল শিয়ালদা থেকে 66টি অতিরিক্ত ট্রেন চালাবে। প্রতিদিন 16 থেকে 17টি অতিরিক্ত ট্রেন চলবে ক্যানিং, নামখানা, কাকদ্বীপ শাখায়। এদিনের বৈঠকের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় বাস রাখতে।
দুই হাজার 250টি অতিরিক্ত বাস তীর্থযাত্রীদের জন্য রাখা হবে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে এক হাজার 150টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। 30টি আলার্ম বোতাম থাকবে মেলার বিভিন্ন প্রান্তে। বিপদ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই জন্যই এই আয়োজন । অগ্নি নিরাপত্তার কথা ভেবে 50টি ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িও থাকবে। এছাড়া পুণার্থীদের যাতায়াতের জন্য 32টা ভেসেল, 100 লঞ্চ থাকবে যাতায়াতের জন্য। গঙ্গাসাগরে আসা মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সাতটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। যেখানে থাকছে 300টি বেড। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবার থাকছে 10 হাজার বড় শৌচালয়। 700 বাথরুমও থাকবে। পানীয় জলের জন্য ছোট ছোট সাত লক্ষ পাউচ রাখা হবে মেলা প্রাঙ্গণে। 28 জায়গায় ফার্স্ট এইড সার্ভিসও রাখা হবে। 12টা জায়গায় মেডিক্যাল টিম থাকবে ও 100 অ্যাম্বুল্যান্স থাকবে । রাখা হচ্ছে তিনটি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্সও। থাকবে একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সও।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ভিআইপিরা পাইলট কার নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। বাংলা-সহ আর্ট ভাষায় তীর্থযাত্রীদের জন্য মাইকিং করা হবে। সব বাসে একজন করে সাগর বন্ধু ভলেন্টিয়ার থাকবে যারা তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করবে। তীর্থযাত্রী ও সংবাদমাধ্যমের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার বীমা। জিপিআরএস সিস্টেম চালু থাকবে। মেলা প্রাঙ্গনে নিরাপত্তার জন্য 20টা ড্রোনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করা হবে। ইসরোর সাহায্যে এই প্রথম স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হবে।
এই প্রথমবার মেলা প্রাঙ্গণে কিউআর কোড চালু হচ্ছে । এই কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখে নেওয়া যাবে মেলায় কোথায় কী রয়েছে । এদিন মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত মন্ত্রী, বিধায়কদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। মেলা চলাকালীন কপিল মুনির আশ্রমে থাকবেন, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। একইভাবে কচুবেড়িয়ায় থাকবেন বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্ত, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু । লট এইটে থাকবেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পরিবহণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। এছাড়া কলকাতা থেকে নজর রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
পাশাপাশি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাও নজরদারিতে থাকছেন। এই সমস্ত মন্ত্রীরা মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। এছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন প্রথম সারির একাধিক পুলিশ কর্তাও। মোটের উপর বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন তার আগে গঙ্গাসাগর মেলায় কোনওরকম খামতি রাখতে চাইছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এদিনের বৈঠক থেকেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি পাঠটা নিয়ে নিলেন তিনি।
আরও পড়ুন