কলকাতা, 15 মে: মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক । আবারও সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলে এই কথাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিএ কোনও বাধ্যতামূলক নয় । পুরোটাই ঐচ্ছিক বিষয় । তবে টাকা নেই । টাকা থাকলে ভালোবেসে দিতাম ৷ দিল্লিতে রাজ্যের 1 লাখ 15 হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে । তা এনে দিন । তাহলে আরও তিন শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথাও ভাবব ।’’
মহার্ঘ ভাতা নিয়ে এদিন কড়া বার্তাও দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির শর্ত একরকম, রাজ্যে অন্যরকম । কারও যদি মনে হয় এখানে কম বেতন পাচ্ছেন, তা হলে যান না কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি খুঁজে নিন ৷’’ একই সঙ্গে এ দিন আন্দোলনকারীদের মিছিলের রুট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর প্রশ্ন, এই রুটে এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিতের মতো হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন রয়েছে । সেই একমুখী রাস্তায় কীভাবে মিছিল হয় ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ডিএ আন্দোলনকারীদের এক হাত নিয়ে বলেন, ‘‘মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্যের যেসব সরকারি কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন, মিটিং মিছিল করছেন তাঁদের জন্যই এই 36 হাজার মানুষের চাকরি চলে গিয়েছে । এই আন্দোলনকারীদের জন্যই রাজ্যের 2 লক্ষ পরিবারের মুখে ভাত কেড়ে নেওয়া হয়েছে ।’’
মমতার কথায়, ‘‘কংগ্রেস বিজেপির শুধু হম্বিতম্বী ৷ আর দাও দাও দাও । 15 হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে দিল্লিতে, টাকাটা এনে দিন না । 3 শতাংশ দিয়েছি, আরও 3 পার্সেন্ট করে দেব । যেটা আমি করতে পারি । আগে তো শিক্ষকরা ঠিকমতো মাইনে পেতেন না । তিন মাস চার মাস অন্তর অন্তর তারা মাইনে পেতেন । টোটালটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল । কিন্তু এখন 1 তারিখে সবার মাইনে পৌঁছে যায় । যত জনমুখী প্রকল্প আছে, তার টাকা সময় মতো মানুষের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায় । পেনশন মানুষ সময় মতো পায় ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে জঙ্গলমহলে অনাহারে মানুষ মারা যেত । আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি । পিঁপড়ের ডিম খেয়ে তারা থাকতো । ভাত খেত না । রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল জঙ্গলমহল ।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি একটা সরকারি চাকরি করেন, তার জন্য মাইনে পান । সুযোগ-সুবিধা যা আছে তাও পান । যদি সপ্তাহে দু’দিন তিনদিন করে রাস্তায় কাজ বন্ধ করে মিছিল করে বেড়ান । তাহলে কী করে চলবে । মিছিল করার হলে অফিস টাইম বাদ দিয়ে করুন । অফিস টাইমে লোকে সার্ভিস পাচ্ছে না । এটা কি ব্রেকিং অফ দ্য সার্ভিস রুল হচ্ছে না ?’’
এদিন মিছিলে রুট নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, মিছিল করলে তাঁরা রাস্তার একটা দিক ছেড়ে রাখেন । যাতে ইমারজেন্সি সার্ভিস পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ অসুবিধা না পড়েন । এক্ষেত্রে 5 লাখ লোকের মিছিল মাত্র 30 মিনিটে করে দেওয়া হয় ৷ ডিএ আন্দোলনকারীরা 100 লোক হলে, পাঁচ হাত পরপর হাঁটে । পিজি হাসপাতালের রাস্তা, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের রাস্তা, কালীঘাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, হরিশ মুখার্জি রোড যে ওয়ান ওয়ে সেটাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন । তার পর প্রশ্ন তোলেন, বড় বিপদ ঘটলে কোথায় যাবে ?
তিনি বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের প্রতিদিন কাজ না করার একটা হুংকার যেন ডঙ্কারে পরিণত হয়েছে । আমি পরিষ্কার বলছি, আপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল । সরকারি কর্মীদের আমার পরিবারের সদস্য বলে মনে করি । কিন্তু, সিপিএম-বিজেপির গ্যাসে ব্যাঙের মা হয়ে গিয়েছেন । 2000 সালের কাগজ নেই, 1980 সালের কাগজ নেই । সব জায়গায় কো-অর্ডিনিশেন কমিটির লোক বসে রয়েছে ।’’
এ দিন আরও একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই 126 শতাংশ ডিএ দিয়েছেন । এখনই তাঁর পক্ষে এর চেয়ে বেশি ডিএ দেওয়া সম্ভব নয় । ডিএ বাড়ানোর ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে থাকা মামলার এখনও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি ।
আরও পড়ুন: 36 হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে রাজ্য, জানালেন মমতা