কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: রাজভবনের বিরুদ্ধে শিক্ষা দফতরের কাজে অহেতুক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । অযাচিতভাবে এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে রাজভবনের বাইরে ধরনা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি । মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ধনধান্য স্টেডিয়াম থেকে এ ভাবেই রাজভবনের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । অতীতে রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধরনার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । এ বার রাজ্যে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টার অভিযোগ তুলে সরাসরি রাজভবনের বিরুদ্ধেই ধরনার কথা বললেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ।
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও বিভিন্ন স্কুলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই এ দিন সরাসরি রাজ্যপালকে নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যেভাবে উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এ দিন মমতা বলেন,
"আমি আমার চিফ সেক্রেটারি, ব্রাত্য বসুকে বলব আমাদের এই ব্যাটেলটায় ফাইট করতে হবে । যদি মনে হয় কারও অধিকার কেউ কেড়ে নিয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে, তাহলে আমি কিন্তু বাধ্য হব গভর্নর হাউজের সামনে ধরনা দিতে । কারণ কোনওভাবেই আমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে এ ভাবে ভেঙে দিতে দেব না ।"
উল্লেখ্য, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 26 দিনের অনশন ধরনা কারও অজানা নয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী হওয়াক পর ধর্মতলায় তিনি সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ধরনা দিয়েছিলেন ৷ আর এরপর চলতি বছরেই 29 ও 30 মার্চ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে বকেয়া আদায়ের দাবিতে রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে দু'দিনের ধরনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন: মোদি সরকারের 'ইন্ডিয়া' অ্যালার্জি, দেশের নাম বদল নিয়ে সরব মমতা
মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বদল নিয়েও মুখ খুলেছেন । তিনি বলেন, "হঠাৎ মধ্যরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিবর্তন হয়ে গেল, কখনও শুনেছেন । 16 জনকে টপকে । হঠাৎ শুনলাম, কেরল থেকে একজন আইপিএস অফিসার যাঁর শিক্ষায় কোনও অভিজ্ঞতাই নেই, তাঁকে আপনি বসালেন আলিয়া ইউনিভার্সিটির মতো একটা সেনসেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় । আর রবীন্দ্রভারতীতে বসানো হচ্ছে একজন এক্স জাজকে । তাঁকে আমি চিনি । তিনি আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন । তিনি আইনি বিষয়ে পরামর্শ দিতেই পারেন । কারণ তিনি সেই কাজ করেছেন । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কী কাজ !"
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, "এ সবের মাধ্যমে বাংলায় শিক্ষা ব্যবস্থায় অচলাবস্থা তৈরির চক্রান্ত হচ্ছে । এই চক্রান্ত আমরা মানব না । আমি তাঁকে অনেকবার বলেছি, আমরা ইলেকটেড । আপনি কনভেনশনাল, দেখানোর জন্য একটা নমিনেটেড পোস্ট । আপনি যদি মনে করেন আমি চিফ মিনিস্টারের থেকে বড়, তাহলে তো হয়েছে । বড় আপনি হতেই পারেন । কিন্তু মনে রাখবেন সমস্ত পলিসি ঠিক করে স্টেট গভর্নমেন্ট । আপনি নন ।"
অন্য রাজ্য থেকে শিক্ষা জগতের কারওকে এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসালে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । রাজভবন যে হয় সরাসরি সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটছে তাতে আপত্তি রয়েছে তাঁর । এ দিন তারই সমালোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কেরলের কারওকে প্রফেসর করা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই । যাদবপুরে মধ্যরাত্রে বিজেপির একটা প্রেসিডেন্টকে উপাচার্য করা হল, কী চলছে এসব !"
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্যপালের কথা শুনে চললে অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব, হুঁশিয়ারি মমতার
রাজভবনের বিল আটকে রাখা নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "রাজ্যপাল প্রত্যেকটা বিল আটকে রেখে দিচ্ছেন । এমনটা করার অধিকার ওনার নেই । সংবিধান বলছে, রাজ্যপালকে যদি অর্থবিল ছাড়া অন্য কোনও বিল পাঠানো হয়, তবে তাতে সই না করলে তা ফেরত পাঠাতে হয় । একবারের বদলে দু'বার পাঠানো হলে তা আইন হয়ে যায় । আশা করছি এটা ভুল বলছি না । কিন্তু উনি একটাও বিল ফেরত পাঠাচ্ছেন না । রাজভবনের মধ্যে নাচাগানা চলছে । প্রাক্তন ডিজিকে ডেকে এনে সেরিমনিয়াল রিসেপশন দেওয়া হচ্ছে । কী চলছে এ সব ।"