কলকাতা, 14 মার্চ: প্রকাশ্যেই এবার চাকরিহারাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার ঋষি অরবিন্দের জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে চাকরিহারাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তাঁর আবেদন, যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া হন, কিন্তু চাকরিহারাদের বিষয়টি বিবেচনা করুন। আইন মেনে চাকরিহারাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি (Mamata Banerjee appeals for Job Losers)।
এদিন আদালতের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় ছিল আবেদনের সুর। আবেগপ্রবণ হয়েই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "আমি জেনেশুনে কখনও কোনও অন্যায় করিনি। এমনকী ক্ষমতায় আসার পর একজন সিপিএম ক্যাডারেরও চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছ ! দেওয়ার ক্ষমতা নেই কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে ৷" এরপরই বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা বক্তব্যকে উদ্ধৃতি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রায় দেখেছিলাম। চাকরি নিয়ে একটা কেস হয়েছিল সিপিএমের আমলে। উনি বলেছিলেন সংশোধন করে নাও যদি ভুল থাকে। কিন্তু চাকরি খাওয়ার কথা বলেননি। আর এখন কথায় কথায় তিন হাজার চাকরি বাদ, চার হাজার চাকরি বাদ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, কেউ যদি নিচুতলায় অন্যায়ও করে থাকে, সবাই তো তৃণমূলের ক্যাডার নয়। বা সকলেই আমার সরকারের ক্যাডার নয়। সরকারের কর্মী হলেও তারা কোনও না কোনও পলিটিক্যাল পার্টির সমর্থক। তারা নীচে বসে কেউ যদি অন্যায় করে, আমার লোকও অন্যায় করে; আমি ন্যায়ের পথে থাকব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটা আমার চিরকালের স্বভাব। কিন্তু আমি একটু ভেবে দেখতে বলব, কালকেও দু'জন সুইসাইড করেছে ৷ যদি কেউ ভুল করে থাকে তার দায়িত্ব তারা নেবে কেন!
আরও পড়ুন: চাঁদের কলঙ্ক থাকতে পারে মমতার কোনও দাগ নেই, দুর্নীতি প্রসঙ্গে বললেন ফিরহাদ
উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আজকে একটা ছেলেমেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। আজকে একটা ছেলেমেয়ে চাকরি করে বলে তার বাবা-মাকে দেখতে পাচ্ছে। হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে সে খাবে কী। আমি বলছি যারা অন্যায় করেছে অ্যাকশন নিন। টেক স্ট্রং অ্যাকশন। আমার কোনও দয়া নেই তাদের জন্য। কিন্তু এই ছেলেমেয়েগুলো যাতে ভুক্তভোগী না-হয়, তাদের চাকরিটা আইন অনুযায়ী ফিরিয়ে দিন। যদি কোনও ভুল করে থাকে তাদের আবার সুযোগ দেওয়া হোক। দরকার হলে তারা আবার পরীক্ষা দিক। দরকার হলে তাদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করা হোক। কোর্ট যেমন নির্দেশ দেবে আমরা তেমনটাই করে দেব। সিদ্ধান্ত আপনারা দিন।"
মুখ্যমন্ত্রী এরপর প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্য করে বলেন, "আমি প্রধান বিচারপতিকে পেলাম না। সুব্রতদাকে (বিচারপতি সুব্রত তালুকদার) পেলাম। আমি এটুকুই বললাম এটা আমার মনের ভাবনা। কারণ আমি যখনই ছবি দেখেছি কালকে জলপাইগুড়িতে সুইসাইড করেছে। সকাল থেকে আমার মনটা কাঁদছে। আমরা তো আইনের উপর নির্ভর করি। বিচারপতিদের আমরা শ্রদ্ধা করি। আমি অধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষে নই, অধিকার দেওয়ার পক্ষে।