কলকাতা, 23 জুলাই : 1984 সালে প্রথম বার পা দেন গণতন্ত্রের মন্দিরে ৷ তার পর থেকে মোট সাত বার ৷ তাঁর হাত ধরেই দল আসন মজবুত করে সংসদে ৷ লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভাতেও তৃণমূল আসন পাকা করে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই ৷ এবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই 2024-এ দেশব্যাপী 'তৃণমূলীয় ঝড়' তোলার ক্ষেত্র প্রস্তুত শুরু হল ৷ যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আজ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন মনোনীত করা হল ৷ সন্দেহ নেই, এই পদটি আদতে আলঙ্কারিক ৷ কোনও নির্বাচনের মাধ্যমে মমতাকে এই পদে বেছে নেওয়া হয়নি ৷ এটি সম্পূর্ণ, সর্বসম্মতিক্রমে একটা দলীয় সিদ্ধান্ত ৷ আর তাই দলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলছেন, "সংসদের উভয় কক্ষের প্রতিনিধিরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারপার্সন হিসেবে মেনে নিয়েছেন ৷ এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত কারও মধ্যে নেই ৷"
দলের সর্ব ভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন ঘোষণা করলেন, মমতাকে চেয়ারপার্সন করার কথা ৷ তিনি আরও জানান, গতকালই নাকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ৷ এর পর অপর সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানান, মমতা দলের সভানেত্রী ৷ তাঁর হাতেই দলের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সনের্ দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল । প্রসঙ্গত, আগামী সোমবার অর্থাৎ ২৬ তারিখ দিল্লি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
তৃণমূলের এই ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় নয়া কৌতূহল ৷ মমতা এই মুহূর্তে দলের সাংসদ নন ৷ এক জন সাংসদ ছাড়া কীভাবে তিনি সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন হবেন? প্রশ্নটা শুরু হয়েছিল এখান থেকেই ৷ এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের গঠনতন্ত্র ৷ দলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতকের কথায়, "আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে এমন কোনও কথা বলা নেই, যে এই পদটির জন্য সাংসদ হতেই হবে ৷ আসলে সংসদের উভয় কক্ষের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব এনেছেন ৷ তাতে দল সিলমোহর দিয়েছে ৷"
এবারের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস জনসমর্থন পেয়েছে, বিজেপির 'জয় রথ'কে বাংলায় রুখে দিয়েছে, তার পর থেকেই দেশজুড়ে একটা সবুজ হাওয়া বইতে শুরু করে ৷ আরও স্পষ্ট করে বললে, মমতা ঝড় বইতে শুরু করে দেশজুড়ে ৷ আর সেই ঝড়কে হাতিয়ার করে দেশব্যাপী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যুব নেতাকে দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে নিয়ে আসা হয় ৷ উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা, গুজরাতের মতো রাজ্যে এ বছর 21 জুলাই পালিত হয় ৷ শুধু তৃণমূলের প্রসার বা প্রচার নয়, ঘুঁটি সাজানো শুরু হয় 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্যও ৷ তৃণমূল তথা মমতাকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরির পদক্ষেপ আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা হয় ৷ সেই মতো ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে সামনে রেখে বেশ কয়েক দফা বৈঠকও হয় ৷
সন্দেহ নেই, বিজেপি বিরোধী যে ফ্রন্টই তৈরি হোক না কেন, তার 'মুখ' নিঃসন্দেহে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁকে সামনে রেখে জোট গঠন, আলোচনা সব কিছুই এগিয়ে নিতে চায় দল ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাত বারের সাংসদ মমতার গ্রহণযোগ্যতা শুধুমাত্র রাজ্য নয়, দেশের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই রয়েছে ৷ এই মুহূর্তে মমতাই এক মাত্র বিজেপি বিরোধী মুখ ৷ এক দিকে সাত বারের অভিজ্ঞতা অন্য দিকে গ্রহণযোগ্যতা-- এই দুটি বিষয়কে কাজে লাগাতে চায় দল ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : দিল্লি সফরের আগেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন মমতা
আর একটি দিকও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ এই মুহূর্তে দলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' নিঃসন্দেহে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, তরুণ অভিষেকের 'নেতা' উপস্থিতি অনেক প্রবীণের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে ৷ তাঁরা রুষ্ট হতেই পারেন ৷ যে ভাবে সোনিয়া গান্ধি কার্যত একক সিদ্ধান্তে, কারও সঙ্গে সে ভাবে আলোচনা না করে রাহুল গান্ধিকে দলের সভাপতি ঘোষণা করে ছিলেন, তার ফল হাতেনাতে পায় কংগ্রেস ৷ দলের বেশ কিছু নেতা প্রকাশ্যেই সুর চড়িয়েছিলেন তখন ৷ যাতে তৃণমূল কংগ্রেসে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য আগে থেকেই সতর্ক টিম পিকে এবং মমতা-অভিষেকরা ৷ আর সেই পদক্ষেপের প্রথম ধাপ যদি হয়ে থাকে সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের প্রবীণ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে, তাঁদের পায়ে হাত দিয়ে অভিষেকের প্রণাম করা, তাহলে তার দ্বিতীয় ধাপ নিঃসন্দেহে আজ মমতাকে মমতাকে চেয়ারপার্সন ঘোষণা করা ৷
আরও পড়ুন : সচিবদের দেওয়া কেন্দ্রের প্রশ্নের জবাব খতিয়ে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী
এক দিকে, কোনও ক্ষোভ থাকলে তা সহজেই প্রশমিত করা যাবে ৷ গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না ৷ মমতার লড়াইকে সামনে রেখে আগামী দিনের রূপরেখা তৈরি করা যাবে ৷ অন্য যে কোনও দলের নেতা-নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না ৷ আর অবশ্যই 2024-এর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে সর্বোতভাবে তুলে ধরা যাবে মমতাকে ৷