কলকাতা, 11 এপ্রিল : কলকাতা পৌরনিগমের 131 নম্বর ওয়ার্ড । প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ওয়ার্ড বলেই 131-কে চেনেন সকলে । এককালে হাসিমুখে এই ওয়ার্ডের মানুষজন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল । কিন্তু আজ তাঁদেরই দুর্দিনে দেখা নেই তাঁর । শোভন চট্টোপাধ্যায় পর্ণশ্রী এলাকায় আসেন না বহুদিন । এই এলাকা তাঁর কাছে এখন অতীত । দল ত্যাগ, দল বদল । পালটায় ছবি । এই পরিস্থিতিতে শোভন-স্ত্রী রত্নাই ভরসা জোগাচ্ছেন এইসব মানুষের । খেতে না পাওয়া, অর্ধাহারে কাটানো পর্ণশ্রীর এমন প্রায় 800 জনকে প্রত্যহ খাবার দিচ্ছেন তিনি ।
লকডাউনের 18 নম্বর দিন । রোজগার নেই তার দিনকয়েক আগে থেকেই । বন্ধ দোকানপাট । কাজ হারিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা গুনে বলা মুশকিল । আয় নেই এমন মানুষও বহু । টাকার চিন্তায় কোথাও আত্মহত্যা, তো কোথাও পালিয়ে যাওয়া । লকডাউনে এ চিত্র এখন সকলের চেনা । পকেটে টাকা না থাকায়, ভিক্ষা না জোটায় পচা খাবার খেয়ে মৃত্যুও নতুন নয় । কিন্তু বাকি ? অর্ধাহারে দিন কাটছে, কোনওমতে দু-তিন দিন অন্তর খাবার জুটছে । তাতে কীভাবে চলবে ? 131 নম্বর ওয়ার্ডের এমন অনেকেরই পাশে দাঁড়ালেন রত্না চট্টোপাধ্যায় । শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে তিনিই খাবার দিলেন প্রায় 800 জনকে ।
বাড়ির আশপাশের এত মানুষের অনাহারে দিন কাটছে একথা জানতে পেরে প্রথমেই রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁদের চাল, ডাল, আলু দিয়ে সাহায্য করেন । কিন্তু সাহায্য করলে কী হবে, কেরোসিন ও গ্যাসের অভাবে বেশিরভাগ পরিবারই পারেনি তা দিয়ে রান্না করে খেতে । এই খবর কানে যাওয়ার পরই রত্না চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন রান্না করা খাবার দেবেন তাঁদের । এরপর নিজেই সমস্ত ব্যবস্থা করে রান্না শুরু করেন । তাঁর রান্না করা খিচুড়ি আর আলুর দমই এখন ভরসা 750- 800 জনের । নিজের এলাকার এতজনের পাশাপাশি ওড়িশা, বিহারসহ ভিন রাজ্যের আটকে পড়া প্রায় 250 জন শ্রমিককেও খাবার দিচ্ছেন তিনি ।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র বেহালা পূর্বের দায়িত্ব রত্না চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হলেও পৌরসভার নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই সেই দায়িত্ব থেকে সরানো হয় তাঁকে । তাঁর জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সুশান্ত ঘোষকে । ঘটনার পর থেকে কিছুদিন আড়ালেই ছিলেন তিনি । অনেকেই ভেবেছিলেন রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কার্যত অন্য ছবি দেখা গেল । নিজের এলাকায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে চলেছেন তিনি । এবিষয়ে তিনি বলেন, "এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় । অনাহারে থাকা মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করার সময় । বর্তমানে সারাদিন সেই কাজটি করে যাচ্ছি ।"