কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর : কলকাতায় এই প্রথম । উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কের মধ্যেই এক টুকরো গ্রন্থাগার । পার্কের এক নিরাপত্তা রক্ষী সত্যরঞ্জন দলুইয়ের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই গ্রন্থাগার । শরীর চর্চার সঙ্গে চলছে জ্ঞান চর্চাও ।
উত্তরের বাগবাজার এলাকার জগৎ মুখার্জি পার্ক । পার্কের ভিতর সুন্দর বসার জায়গা রয়েছে । শিশুদের খেলার জন্য দোলনা-সহ নানা জিনিস রয়েছে ৷ পার্কটি নানা ধরণের সবুজ গাছে ভরা । এলাকার মানুষ এই পার্কে সকাল সন্ধ্যায় হাঁটতে আসেন । বিকেল গড়াতেই শিশুদের কলতানে মুখর হয়ে ওঠে পার্ক চত্ত্বর ৷ এলাকার বাসিন্দারা এই পার্কে বসে সময় কাটান । অফিস ফেরত মানুষজনও সারাদিনের পরিশ্রমের পর একটু অক্সিজেনের খোঁজে আসেন ৷ পার্কে আসা এই মানুষগুলিকে রোজই দেখতেন নিরাপত্তারক্ষী সত্যরঞ্জন দলুই ৷ দেখতেন একটা কাগজ নিয়ে সবাই ছোটদের মতো কেমন কাড়াকাড়ি করে ৷ প্রথম দিকে কয়েকটি বাংলা কাগজ, ও হিন্দি কাগজ রাখতেন ৷ কিছু বইও রেখেছিলেন ৷ কিন্তু তাতে খিদে বাড়ল বই কমল না ৷ পার্কে আসা লোকজনের উৎসাহ ও সাহায্য দুটোই পেলেন সত্যবাবু ৷ আর তাতেই পার্কের মধ্যে গড়ে ফেললেন একটা ছোটখাটো গ্রন্থাগার ৷
এই গ্রন্থাগারে 1 হাজারের বেশি বই আছে । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বাংলার মনীষীদের বই রাখা হয়েছে । স্থানীয়রা অনেকেই বাড়ির বই এখানে দান করেছেন । কেউ বই দিতে চাইলে তাঁর বাড়ি পৌচ্ছে যান সত্যরঞ্জন দলুই । গ্রন্থাগারটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচা করতেও পিছপা হন না ৷ পার্কের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে মাসে যে মাইনে পান তার একটা অংশও খরচ করেন এই গ্রন্থাগারের জন্য ।
আরও পড়ুন : Climate Change : জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে বই লিখে হইচই ফেলে দিল 10 বছরের শিরিষ
এই বিষয়ে খোদ সত্যরঞ্জন দলুই বলেছেন, "এই পার্কে আমি প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীর কাজে যোগ দিই । পার্কে নজর রাখার পাশাপাশি এটিকে কীভাবে সাজানো যায় তা ভাবতে থাকি । তাই গাছপালা বসাতে লাগলাম । পার্কে প্রচুর মানুষজন আসেন । কচিকাঁচা থেকে বয়স্ক । স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এই পার্কে আসে । তাদের কথা ভেবেই গ্রন্থাগার তৈরি করার ভাবনা আসে । প্রথমে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা দিয়ে শুরু হয় গ্রন্থাগার । এখন শুধু বই নয়, কোভিড পরিস্থিতির কারণে এই গ্রন্থাগারে রাখা হয়েছে অক্সিমিটার, প্রেসার মাপার যন্ত্র ।"
শুধু পার্কে আসা লোকজনের জন্যই নয়, জগৎ মুখার্জী পার্কের এই গ্রন্থাগার বর্তমানে পথশিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কাজে লাগছে ৷ প্রায় 30-35 জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে স্কুল চালু হয়েছে । তাদের জন্য আঁকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই পার্কের মধ্যেই পথশিশুদের গান শেখানো হয় । সবটাই সত্যরঞ্জন দলুইয়ের উদ্যোগে ৷ এই কাজে তাঁকে উৎসাহ দেন পাড়ার বাসিন্দারা ৷ এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিল পার্থ মিত্রের সহযোগিতার কথাও উঠে এসেছে সত্যবাবুর গলায় ।
ওই এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷ তিনি বলেছেন, "খুবই ভাল উদ্যোগ । কলকাতা পৌরসভা এই গ্রন্থাগারটাকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে । গ্রন্থাগার দফতরের সঙ্গে কথা বলব । যদি রাজ্য সরকার এই গ্রন্থাগারটিকে অধিগ্রহণ করে নিতে পারে সেই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছি ৷"
আরও পড়ুন : তেলাঙ্গানায় 60 মিনিটে 10 লক্ষ চারা রোপণ, কর্নাটকে 21 একরের জঙ্গলে সবুজায়নের বার্তা