কলকাতা, 17 অক্টোবর: সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি বৈধতা দেয়নি । তবে রূপান্তরকামীদের জন্য নিয়ম কিছুটা শিথিল হয়েছে ৷ শীর্ষ আদালতের রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল এলজিবিটিকিউপ্লাস সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ৷ তবে তাঁরা লড়াই ছাড়তে নারাজ ৷
সুপ্রিম কোর্ট আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, আইন তৈরির বিষয় সংসদের । তাতে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় । তাই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক সংসদেই । তবে সমলিঙ্গের দু'জন মানুষ সহবাস করতে পারবে । অন্যদিকে, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতদের ক্ষেত্রে অনেকটাই শিথিল হয়েছে নিয়ম । দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে যে, একজন রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত ব্যক্তি অন্য লিঙ্গের কোনও ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন । এই ক্ষেত্রে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও বাধা থাকছে না ।
এই রায়ের পর মেম্বার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য এবং রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিনহা জানিয়েছেন যে,
"রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত ব্যক্তিদের বিয়ে বা দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই ৷ তবে সমলিঙ্গের যুগলদের বিবাহের ক্ষেত্রে আইনি স্বীকৃতি মিলল না । তাই এখানেই আমাদের পথ চলা বা লড়াইটা শেষ করলে হবে না ৷ এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে । আশা করি, সংসদে এই বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হবে ।"
তবে এই বিষয়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের অবতারণা করেছেন । তিনি জাানিয়েছেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে সমলিঙ্গের মানুষজন অর্থাৎ 'গে' ও 'লেসবিয়ান' যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা অনেকেই কিন্তু এখনও প্রকাশ্যে এসে নিজেদের অবস্থান জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেন । অন্যদিকে, ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠী কিন্তু সংখ্যায় অনেক বেশি । তাই নিজেদের কথা এবং সমস্যা নিজেদেরই তুলে ধরতে হবে । আর সেই জন্য সবাইকে সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে ।
আরও পড়ুন: সমকামী যুগলের বিয়েতে আইনি বৈধতা দিল না সুপ্রিম কোর্ট
সমকামী ব্যক্তি ভেঙ্কদেশ কোদুকুলা এ বিষয়ে বলেন, "আজকের রায় যে সমলিঙ্গের মানুষদের পক্ষে যাবে না, তা নিয়ে আমরা এক রকম স্থির ছিলাম । কারণ এই রায় পাশ হওয়ার জন্য যে সামাজিক মানসিকতা এবং প্রচারের প্রয়োজন, তার এখনও অভাব রয়েছে এই দেশে । 2014 সালে নালসা আইন পাশ হয়েছিল । প্রায় 10 বছর হতে চলল, কিন্তু তারপর এখনও বহু জায়গায় রূপান্তরকামী মানুষদের অন্য চোখে দেখা হয় । এখনও তাঁরা সমাজে ব্রাত্য । তাই শুধু আইন পাশ করলেই হবে না, সেই আইন ঠিকমতো প্রণয়ন হচ্ছে কি না সেই বিষয়েও নজর দিতে হবে ।"
তিনি আরও বলেন যে, মানুষকে এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করতে হবে । সচেতনতার অভাব রয়েছে । তাই এখনই যে এই ধরনের যুগান্তকারী রায় পাশ হবে সেটা মনে হয় না । তবে একটা কথা ঠিক যে, এই আলোচনাটা যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং এরপর সংসদে পৌঁছবে সেটাই অনেকটা ইতিবাচক দিক ।