WBCHSE Syllabus: সংশোধিত পাঠক্রমে রয়েছে দূরদর্শিতার অভাব, মনে করছে শিক্ষক মহল

উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিভাগের সংশোধিত পাঠক্রমের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করল শিক্ষক মহলের একাংশ ৷ তাঁরা মনে করছে এই বদল হওয়া পাঠক্রমে রয়েছে দূরদর্শিতার অভাব ৷

কলকাতা, 10 অক্টোবর: উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার জন্য কমানো হয়েছে পাঠ্যসূচি । এই বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি করেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ । ইতিমধ্যেই শিক্ষক মহলে সিলেবাসের রদবদল নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে । বিশেষ করে সিলেবাস থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষামূলক প্রবন্ধ এবং অধ্যায় একেবারে ছেঁটে ফেলাকে কেন্দ্র করে উঠেছে বিতর্কের ঝড় । করোনা প্যানডেমিকে বাতিল করা হয় চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । আগামী বছরও পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে । তাই পরিস্থিতির গভীরতা বিচার করে সিলেবাস কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেবাস কমিটি ।

আগামী বছর থেকে নতুন সিলেবাস অনুসারেই পরীক্ষা নেওয়া হবে । 2020 সালে প্রথমবার উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে সিলেবাসে কাটছাঁট করার কথা জানানো হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুগত বসু জানান, নতুন করে পাঠ্যক্রম থেকে কিছুই বাদ পড়েনি । 2020 সালের ডিসেম্বর মাসে যে পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হয় সেই অর্ডারটি পাঁচটি পৃথক মেমো নম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল । এবার সেগুলিকেই একত্রিত করে একটি নোটিফিকেশন প্রকাশ করা হয়েছে । তবে সম্প্রতি 99 নম্বর নোটিফিকেশনে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একাধিক রদবদল আনা হয়েছে । পাঠ্যক্রম থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষামূলক বিষয় ছেঁটে ফেলার সম্পর্কে সুগতবাবু বলেন, "সিলেবাসে কী যুক্ত করা হবে কিংবা কি বাদ দেওয়া হবে তা একটা নির্দিষ্ট যুক্তি মেনে ঠিক করা হয় । আর এই রদবদল করেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিতরা । তবে অনেকক্ষেত্রেই এই ধরনের কমিটিতে এদের রাখা হয় না । তাই সিলেবাস কম করার ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষদের দূরদর্শিতার অভাব থেকে যায় । এই ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে বলে আমার ধারণা ।"

প্রসঙ্গত, বিজ্ঞানের মধ্যে বায়োলজির ক্ষেত্রে প্রথমে বাদ পড়েছিল বায়োটেকনোলজি ৷ তবে আবার সেই অংশটিকে যুক্ত করা হয়েছে । প্রথমবার বিজ্ঞানের পাঠক্রম থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার । তবে সেগুলির গুরুত্বকে মান্যতা দিয়ে পুনরায় যুক্ত করা হয়েছে ।

একাদশ-দ্বাদশের বিজ্ঞানের সিলেবাসের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার মত আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়া হয় । পাশাপাশি কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে যা বাদ চলে গিয়েছিল তাই বাদ রয়েছে । অঙ্কের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু জিনিস বাদ চলে গিয়েছিল সেগুলি আবারও ফিরিয়ে আনা হয়েছে । জানা গিয়েছে, সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের সিলেবাসের বিষয়ে একটি বৈঠক করেন । তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিকে সিবিএসসি বোর্ডের পাঠ্যসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করার নির্দেশ দেন । এরপরই বদল করা হয় বিজ্ঞানের সিলেবাসে ।

বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষিকা মনিমেখলা ভৌমিক বলেন, "করোনাকালে অনলাইনে পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে । তাই সিলেবাস কমানোর ক্ষেত্রে আমি একমত । তবে যে পদ্ধতিতে সিলেবাস ছোট করা হয়েছে তাতে চিন্তাভাবনার অভাব রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । কারণ, একটি গোটা চ্যাপ্টার ধরে বাদ দেওয়া হয়েছে । বইয়ে প্রত্যেকটি চ্যাপ্টার একটা লজিক মেনে সাজানো থাকে । বাদ পড়েছেন বিদেশি লেখক গ্যাব্রিয়েল মার্কয়েস ও লেখক আইয়াপ্পা পানিকর ।" তিনি আরও বলেন, "দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল বড় মনীষীদের মধ্যে বাদ গিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ ও কাজি নজরুল ইসলামের লেখা । নাটকের মধ্যে বাদ পড়েছেন দীনবন্ধু মিত্র ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।"