কলকাতা, 1 জানুয়ারি: কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল অভিমান হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের । আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তিনি নিজেকে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র ডায়মন্ডহারবারেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান । এমনও শোনা যাচ্ছিল, দলের একাংশের অসহযোগিতায় নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন তিনি । যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে নিজে মুখ খোলেননি অভিষেক । কিন্তু সোমবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে দলের রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে তৃণমূল কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ছবি ফের প্রকাশ্যে এসে গেল । সোমবার দলের 27তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতেও শোনা গেল সুব্রত বক্সিকে । তিনি বলেন, লোকসভার লড়াই থেকে আশা করছি পিছিয়ে যাবেন না তিনি ।
গত কয়েকদিন ধরে জল্পনা চলছিল, দলের অভ্যন্তরে নানা কারণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন । কারণ সাম্প্রতিক অতীতে 100 দিনের কর্মীদের নিয়ে আন্দোলন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে আন্দোলন যে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে যেতে পারছেন না তিনি । এমনকি বহু ক্ষেত্রে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি সময়ে পূরণ না হওয়ার জন্য ফেস লস হচ্ছে তাঁর । তাই তিনি চেয়েছিলেন ডায়মন্ডহারবারের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে । যদিও সবটাই অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে পাওয়া । এই জল্পনা বহুগুণ বাড়িয়ে এ দিন সুব্রত বক্সি বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না । যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি ।"
রাজনৈতিক মহল বলছে, এর থেকে স্পষ্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে যে চর্চা চলছিল তাতে সরবত্তা রয়েছে । যদিও এই নিয়ে পরবর্তীতে সুব্রত বক্সিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও জবাব দেননি । তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমান রয়েছে মেনে নিলেও দলের অভ্যন্তরে লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও দ্বন্দ্ব রয়েছে মানতে চাননি দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ।
এ দিন কুণাল ঘোষ বলেন, "রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে । তিনি দল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত এবং অনুগত সৈনিক । তবে যে কথাটি সামনে এসেছে, সেই জায়গা থেকে বলি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে ।" তিনি বলেন, "আমার মনে হয় এই বাক্য গঠনে কোথাও একটা সমস্যা আছে ।" কুণাল ঘোষের কথায়,"অভিষেকের লড়াই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো তাঁর নেত্রী । সেনাপতি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । জোড়া ফুল, দল, কর্মী-সমার্থক সব তার প্রাণ । এখানে অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না । এই পিছিয়ে যাওয়া কথাটা নেতিবাচকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কেন ?"
কুণাল আরও বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে আছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নেত্রী ৷ এর বাইরে কোনও কথা হতেই পারে না । আমার মনে হয় রাজ্য সভাপতির এই বাক্যের গঠন নিয়ে পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন ।" এখানেই শেষ করেননি কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, "কয়েকদিন আগেই তাঁকে বলতে শুনেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে, দিদি আপনি নামুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারিয়ে যাচ্ছেন । বাংলার মনের মণিকোঠায় মমতা ব্যানার্জি, কোনও কারণে অসুস্থ হয়েছেন । কোনও কারণে সাত দিন-দশ দিন তাঁকে ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে । তার জন্য কি এটা বলা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারিয়ে গেলেন !"
এরপর রীতিমতো বোমা ফাটালেন কুণাল ঘোষ ৷ নাম না করে রাজ্য সভাপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, "এই ধরনের কথাগুলির জন্যই দলে ডিভিশন তৈরি হয় ।"এ দিন কুণাল ঘোষ আরও বলেন, "তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা এই ডিভিশন পছন্দ করছেন না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেসকে তাঁরা দেখতে চান । এর মাঝখানে আমি বা অন্য কেউ যেই হই কোনও ডিভিশন হোক তৃণমূলের কর্মীরা পছন্দ করছেন না ।"
আরও পড়ুন:
তৃণমূলের 27তম প্রতিষ্ঠা দিবস, দলীয় কর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা মমতা-অভিষেকের
নষ্ট হচ্ছে ভাবমূর্তি, নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন 'অভিমানী' অভিষেক!
'ইন্ডিয়া'র বৈঠকে মমতা-অভিষেক, জট কাটিয়ে আসন সমঝোতা সম্ভব হবে ? উঠছে প্রশ্ন