কলকাতা, 27 অগস্ট: দুর্গাপুজোয় আর বাকি মাসদেড়েক ৷ তবে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে । পাড়ায় পাড়ায় খুঁটি পুজো করে শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ ৷ পাশাপাশি জোর ব্যস্ততা কুমোরটুলিতেও । এখন মৃৎশিল্পীদের দম ফেলার ফুরসত নেই । তবে এরই মাঝে চিন্তায় ফেলেছে পটুয়াপাড়ায় কারিগরদের অভাব ৷ টাকা দিয়েও এখন রাজ্যে মিলছে না দক্ষ কারিগর ৷
করোনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কারিগররা আর কুমোরটুলিমুখী হচ্ছেন না ৷ বরং বেশি আয়ের আশায় পটুয়াপাড়ার রং, কাদামাটি ছেড়ে তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন ভিনরাজ্যে ৷ যে হাতে মাটির প্রলেপ ও তুলির টান দিয়ে অভ্যাস, করোনার পর আচমকাই সেই হাত চালাচ্ছে লোহার যন্ত্র । এই পরিস্থিতিতে মূর্তি গড়ায় বেজায় সমস্যায় পড়ছে পটুয়াপাড়াকে ৷
কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, "2020 সালে করোনার সময় কারিগররা আসা বন্ধ করে দিয়েছিল । সেবার আমদের মূর্তির সংখ্যাও কম ছিল । করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে যখন উঠলাম আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল ভেবেছিলাম কারিগররা ফিরে আসবে । কিন্তু দেখলাম তারা ভিনরাজ্যে চলে গেল । 2019 সালে 3500 কমবেশি শ্রমিক বা কারিগর ছিল কুমোরটুলিতে । করোনা পর সংখ্যাটা এসে দাঁড়ায় 2200-2300 ৷ এ বছর একটু বেশি 2700-এর মত কারিগর কুমোরটুলিতে কাজে এসেছে । যে কাজ 3500 শ্রমিক করতাম সেই সংখ্যা কমেছে । ফলে এতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ৷"
করোনা কাটিয়ে ফের সব কিছু স্বাভাবিক হলেও কুমোরটুলিতে যেন তার ছাপ পড়ছে এখনও । করোনার আগে যেখানে এই কুমোরটুলিতে কমবেশি 3500 শিল্পী কারিগর কাজ করতেন । সেখানে এখন সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে 2700 ৷ লকডাউনে কারিগর শ্রমিকরা ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি মুখো হয়েছিলেন । তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেশিরভাগ লোক ফের ভিন রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন ৷ আর কিছুজন ফিরলেও তারা অধিকাংশই আর বাঁশ খড় ও মাটির কাজে ফেরেনি । এক সময় ভালো শিল্পী বা কারিগরের পুজোর আগের মাসে কমপক্ষে 1500 টাকা রোজ ছিল । আর সাধারণ কারিগর মাসিক বেতন পেতেন । এখন টাকা দিয়েও মিলছে না কারিগর । ফলে আগে যেখানে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য থেকে মূর্তি গড়া শুরু হত ৷ এখন কারিগরদের অভাবে চৈত্র থেকে শুরু করতে হচ্ছে কাজ ।
আরও পড়ুন: চলছে পুজোর প্রস্তুতি, বৃষ্টির জেরে প্লাস্টিকে ঢাকল কুমোরটুলি! ক্যামেরাবন্দি দৃশ্য
মৃৎশিল্পী বাবু পাল বলেন, "এখন যাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছি তাদের বেশি টাকা দিতে হচ্ছে । অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও ভালো কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না । ফলে কাজের সময় বদল করতে হয়েছে । আগে কাজ শুরু করতাম বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্য মাসে । এখন আরও আগে চৈত্র থেকে কাজ শুরু করেছি । কারণ কারিগরের অভাব । পাশাপাশি বেশি রোজ দিয়ে তাদের কাজে নিতে হচ্ছে ।"