কলকাতা 28 মে : লকডাউন ৷ বন্ধ স্কুল, কলেজ ৷ বন্ধ পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ৷ চিন্তায় পড়ুয়া থেকে অভিভাবকেরা ৷ অনেক স্কুলে আবার শুরু হয়েছে অনলাইনে ক্লাস ৷
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা নীলাঞ্জন চৌধুরি ৷ তাঁর দুই ছেলে জোকার এক বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে ৷ একজন ক্লাস টু ও অপরজন ক্লাস এইটে ৷ একেকজনকে প্রায় 70 হাজার টাকা দিয়ে ভরতি করিয়েছিলেন স্কুলে ৷ বার্ষিক প্রায় 15 হাজার টাকা দিতে হয় ৷ প্রতিমাসে 3100 টাকা ৷ যাতায়তের খরচ হিসেবে মাসিক দিতে হয় 2650 টাকা ৷ কিন্তু, লকডাউনে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ ৷ বন্ধ কাজ ৷ বেতন মিলছে না দু মাসের উপর ৷ এর উপরে আবার স্কুলের ফি সহ অন্য খরচ দেওয়ার জন্য বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছে ৷ তাঁর অভিযোগ, ''এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে স্কুল ৷ প্রথমে, এপ্রিল ও মে মাসের ফি চাওয়া হয় ৷ সেক্ষত্রে বর্ধিত ফি দেওয়ার কথাই বলা হয় ৷ এরপরেই আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে আবেদন করি, যাতে ফি না বাড়ানো হয় ৷ স্কুলের তরফে টাকা কমানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও যাতাযতের খরচ বাবাদ প্রায় 6 হাজার টাকা দিতে বলা হয় ৷ কিন্তু, স্কুল বন্ধ, সুতরাং স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসার কোনও খরচই লাগছে না ৷ তা সত্ত্বেও এত টাকা দিতে হবে ৷ বিগত 2 মাস ধরে কোনও বেতন মিলছে না ৷ এর মধ্যেও যদি স্কুলে টাকা দিতে হয়, তাহলে চলবে কী করে?''
নিউটাউনের এক বেসরকারি স্কুলের দুই পড়ুয়ার অভিভাবক সঙ্গীতা শর্মা ৷ দুই বাচ্চার সেশন ফি, কোয়র্টারলি ফি ও অন্য ফি বাবদ খরচ প্রায় 1 লাখের কাছাকাছি ৷ কিন্তু, এই লকডাউনেও ফি-এর থেকে কোনও রকম সুরাহা মিলছে না তাঁদের ৷ তিনি জানান, ''এ বছর ফি স্ট্রাকচার বাড়িয়েছে স্কুল। ক্রমাগত ফি জমা দেওয়ার জন্য চাপ আসছে। প্রিন্সিপালের তরফে ক্লাস টিচার জানান, ''আপনারা ফি দিন না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷'' কিন্তু, তিন মাস ধরে কোনও ইলেকট্রিসিটি লাগছে না ৷ পেট্রল লাগছে না ৷ অথচ স্কুলের তরফে সবকিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে ৷ আমি কী করে দেব? আমি বলেছিলাম, সরকারও বলে দিয়েছে যে ফি জমা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে স্কুলের তরফে বলা হয়, যাঁরা সার্ভিস দিচ্ছেন তাঁরা ফি চাইতেই পারে ৷''
এমনই অভিযোগ অন্য স্কুলের অভিভাবকদের ৷ তাঁদের বক্তব্য, শহরের বহু বেসরকারি স্কুল এই সময়ে ফি নিয়ে বিন্দুমাত্র বিবেচনা করছে না ৷ আবেদন অনুরোধ করা হলেও কর্তৃপক্ষ সেদিকে কর্ণপাত করছে না ৷
শুধু নীলাঞ্জন চৌধুরি বা সঙ্গীতা শর্মা নন ৷ লকডাউন-স্কুলের বর্ধিত ফি সহ অন্য খরচ-বেতন না পাওয়া নিয়ে জর্জরিত শহরের অনেক অভিভাবক৷ তাঁদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষকে বললেও কোনও লাভ হচ্ছে না ৷ রাজু সর্দার, শ্বেতা দাসেদের দাবি, স্কুল ফি নেওয়ার জন্য চাপ তো দিচ্ছেই, পাশাপাশি বর্ধিত ফি দেওয়ার কথাও বলছে ৷ মার্চ থেকে স্কুলে যাতায়ত বন্ধ রয়েছে ৷ কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে যাতায়তের ফি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ৷
অথচ রাজ্যের তরফে একাধিকবার বেসরকারি স্কুলগুলোকে ফি না বাড়ানোর জন্য বলা হয় ৷ এমনকী, এই পরিস্থিতিতে কেউ ফি না দিতে পারলে মানবিকভাবে তা বিবেচনা করার আবেদন জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷
এখানেই শেষ নয়, অনলাইনে ক্লাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক অভিভাবক৷ তাঁদের মতে, রাজ্যের অনেক স্কুল অনলাইনে পঠন পাঠন শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু তা ক্লাসরুমের পঠনপাঠনের সমতুল্য নয় ৷ অভিভাবকদের দাবি, অনলাইনে পড়াশোনার জন্য এতক্ষণ ধরে কম্পিউটার, মোবাইলের সামনে বসে থাকতে হচ্ছে বাচ্চাদের ৷ ফলে চোখের সমস্যা শুরু হতে পারে ৷ কিন্তু, স্কুলের নির্দেশ অমান্য করতে পারছেন না কোনও অভিভাবকই ৷
সব মিলিয়ে দিশেহারা অভিভাবকরা ৷ সরকারের কাছে তাঁদের আর্জি, পুরো বিষয়টির উপর যেন নজর দেওয়া হয়৷