কলকাতা, 28 মে : আজ রসনাপ্রিয় বাঙালির ভূরিভোজের দিন । জামাইষষ্ঠীর দিন শাশুড়ি মায়েরা জামাই বাবাজির পাতে তুলে দেন হরেক রকম মিষ্টি । কিন্তু এবছর আর মিষ্টি কোথায় ? লকডাউনের জন্য বন্ধ কলকাতার নামীদামি মিষ্টির দোকানগুলি । তাই এবার অন্তত জামাইয়ের পাতে পছন্দসই মিষ্টি তুলে দিতে পারছেন না শাশুড়িরা ।
উত্তর কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টিপাড়া অঞ্চলে পরপর রয়েছে কলকাতার আদি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকানগুলি । কিন্তু লকডাউনের ফলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ মিষ্টিপাড়া। এই এলাকাতেই রয়েছে নকুড় নন্দী ও গিরিশ চন্দ্রের মতো মিষ্টির দোকান । বন্ধ রয়েছে নলিনচন্দ্র দাস, সুবোধ মল্লিক, সাধন চন্দ্র মল্লিক, কালীচরণ এর মতো উত্তর কলকাতার জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানগুলি । শুধু তাই নয়, রসগোল্লার আবিষ্কর্তা নবীন চন্দ্র দাস মিষ্টির দোকানও বন্ধ রয়েছে । তালিকায় পড়ছে চিত্তরঞ্জন, KC দাসের মতো অতি জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানগুলিও । অবশ্য এর মধ্যেও সরকারি নির্দেশিকা মেনে দু'-একটি দোকান খোলা রয়েছে । উত্তর কলকাতার আরও একটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান হল গাঙ্গুরাম অ্যান্ড সন্স । সরকারি নির্দেশিকা মেনে সকাল 6টা থেকে সন্ধ্যা 6টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছে তারা । দোকানের কর্ণধার জানান, "পরিষ্কার-পরিছন্নতা মেনেই তাঁরা মিষ্টি তৈরি করছেন । তবে লকডাউনের ফলে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে । ফলে, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা পয়সা কম থাকায় বিক্রি-বাটাও কমেছে । তবে জামাইষষ্ঠীর দিন স্পেশাল কিছু মিষ্টি তৈরি করেছেন তাঁরা ৷ যদিও পরিমাণ থাকবে গতবছরের থেকে কম ।"
কলকাতার অধিকাংশ মিষ্টির দোকানের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কারিগররা নিজেদের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন । ফলে, তৈরি হয়েছে শ্রমিক সংকট । পাশাপাশি এখন থেকে পুরোপুরি হাইজিন মেনে চালাতে হবে দোকান ৷ তাই এসবের জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তাঁদের পক্ষে এখনই দোকান খোলা সম্ভব নয় । এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বিপদ এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত, বলছেন তাঁরা ।
নলিনচন্দ্র দাস মিষ্টির দোকানের কর্ণধার তপন দাস বলেন, "পয়লা বৈশাখ ও জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে আগে থেকে প্রচুর পরিমাণে মাল মজুত করে রাখা হয়েছিল । কিন্তু দীর্ঘদিন এই লকডাউন চলার জন্য অনেক টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়ে গেছে । সেইসঙ্গে যে মালগুলি আগেই তোলা ছিল সেগুলি নষ্ট হয়ে গেছে । আজ জামাইষষ্ঠীর দিন দোকানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না ৷ সেখানে দোকান বন্ধ। তাই বেশ বিষন্ন লাগছে ।"
নকুড় নন্দী মিষ্টির দোকানের কর্ণধার পার্থ নন্দীর কথায়, "খারাপ লাগছে অবশ্যই ৷ কিন্তু দেশজুড়ে যা পরিস্থিতি, সেখানে কিছুই করার নেই । যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের লকডাউন মেনে চলতে হবে । তার কারণ বিন্দুমাত্র গাফিলতিতে সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে । ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আমরা মিষ্টির দোকান খুলব না ।"