কলকাতা, 4 অক্টোবর: সোনাগাছি । এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি । সেই যৌনপল্লিতেই গত দশ বছর ধরে দুর্গোৎসব আয়োজিত হয় । এ বার একাদশতম বর্ষে থাকছে বিশেষ চমক । যা আগে কখনও হয়নি । পুজোর উদ্বোধনে ধরা পড়বে সর্বধর্ম সমন্বয়ের ছবি ।
সোনাগাছির দুর্গোৎসবে এ বার হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ইসাই-সহ নানা সম্প্রদায়ের সাত জন ধর্মগুরুকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে । আমন্ত্রিতের তালিকায় বীরভূম তারাপীঠের প্রধান পুরোহিত থেকে, দক্ষিণেশ্বেরের পুরোহিত, গুরুদ্বার, নাখোদা মসজিদের ইমাম-সহ অনেকেই রয়েছেন । তাঁদের হাতেই এ বারের পুজোর উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদক বিশাখা লস্কর ।
দেশে কিংবা দেশের বাইরে, জাত-পাত-ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে মেরে ফেলা, একঘরে করে দেওয়ার ঘটনা আকছার লেগে রয়েছে ৷ কিন্তু, একমাত্র যৌন পেশায় জাতপাত নিয়ে হিংসে হয় না । যাঁরা এই পেশায় আসেন তাঁরা হিন্দু-মুসলিম নিয়ে পরস্পরের মধ্যে লড়াই করেন না । তেমনই এই যৌনকর্মীদের কাছে যাঁরা আসেন, তাঁরাও কখনও ধর্ম-জাত-পাত দেখে আসেন না । অথচ এই আগত অতিথিরা ঘরে ফিরে আবার হিন্দু, মুসলিম, শিখ ইত্যাদিতে বিভেদ করতে শুরু করেন ৷ এই চিন্তা-ভাবনাকে মাথায় রেখেই এ বারের পুজোয় সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে সোনাগাছির ।
রাজ্যে 56টি যৌনপল্লি আছে । তার মধ্যে কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে মোট 5টি জায়গায় দুর্গাপুজো হয় । যৌনকর্মীদেরই টাকায় ও উদ্যোগে সোনাগাছি, আসানসোল, দুর্গাপুর, জলপাইগুড়ি ও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের যৌনপল্লিতে দুর্গাপুজো হয় ।
আরও পড়ুন: মহামায়ার লীলা ফুটে উঠছে উল্টোডাঙা সংগ্রামীর মণ্ডপে
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদক বিশাখা লস্কর ইটিভি ভারতকে বলেন, "যৌনকর্মীদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই । জাতপাত নিয়েও টানাটানি নেই । কারণ, এখানে প্রত্যেকটা ধর্ম-জাতের মহিলা আছেন । আমরা যৌন কর্মীরা জাত বলতে পুরুষ ও মহিলা বুঝি । ফলে আমাদের পুজোয় সমস্ত ধর্মের মানুষ এলে আমাদের ভালো লাগবে । সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এ বারে আমাদের পুজোয় সব ধর্মের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে । নাখোদা মসজিদ, গুরুদ্বার, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ-সহ একাধিক জায়গায় আমন্ত্রণ চিঠি পাঠানো হয়েছে । এক-এক জন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন । প্রশাসনিক ভাবে স্থানীয় বটতলা থানার আধিকারিক, রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাকেও আমন্ত্রণ করা হবে ।"
এ বছর সোনাগাছির দুর্গাপুজোর বাজেট সাড়ে সাত লাখ টাকা । কিন্তু আর্থিক সঙ্গতির কারণে এখনও সব টাকা জোগাড় হয়নি । এখনও অনেক টাকা তুলতে বাকি রয়েছে । কোনও পুজো কমিটি, ব্যক্তি বা সংস্থা সাহায্য করতে চাইলে যৌনকর্মীরা তা গ্রহণ করবেন ।
বিশাখা লস্কর বলেন, "আমরা চাই শুধু টাকা নয়, চাল, ডাল যা কিছু দিয়ে হোক আমাদের সাহায্য করুক সবাই । কারণ আমরা অষ্টমীর রাতে ভোগ রান্না করি । 400 কেজি চাল, 400 কেজি ডাল, সঙ্গে সবজি দিয়ে খিচুড়ি তৈরি হয় । 200 লিটারের দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি হয় । খিদিরপুর, কালীঘাট-সহ কলকাতার 12টি যৌনপল্লিতে সেই ভোগ বিতরণ করা হয় । প্রত্যেক যৌনকর্মীর ঘরে ঘরে তা বণ্টন করা হয় । সমাজের সমস্ত মানুষ এই ভোগ খান ।"