কলকাতা, 10 নভেম্বর: আর্থিক দুর্নীতির (Financial fraud) ঘটনায় তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে টেক্কা দিতে চলেছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police Special Training)। এই তদন্তে নেমে কীভাবে কালো টাকা উদ্ধার করতে হয়, কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির ব্যাংকিং নথিপত্র ঘেঁটে কীভাবে সেখানে আর্থিক তছরুপের প্রমাণ সামনে আনা যায় এবং বিশেষ করে কালো টাকার উৎসে পৌঁছনো সম্ভব, সেই কৌশল শিখছে তারা ৷ যা শুধু কলকাতায় নয়, বরং দেশের পুলিশি ব্যবস্থায় এই প্রথম ।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীদের বেশিরভাগ আধিকারিকই ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের দুঁদে গোয়েন্দা (Ex IRS officer)। ফলে এই আইআরএস আধিকারিকদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশকে তদন্তের গতি বাড়িয়ে টেক্কা দিতে হলে তাদের ভরসা একমাত্র এই গোয়েন্দারাই ৷ যাঁরা আর্থিক তছরুপ থেকে শুরু করে কালো টাকার উৎস সন্ধানে সিদ্ধহস্ত । ফলে এ বার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অ্যান্টি ব্যাংক ফ্রড সেকশনের আধিকারিকদের এই আর্থিক তছরুপের তদন্তের এবং কালো টাকার উৎস খোঁজার বিশেষ কৌশল শেখাবেন প্রাক্তন আইআরএস বা ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের গোয়েন্দারা । লালবাজার সুত্রে এমনটাই খবর ।
তবে এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কোনও বড়কর্তাই সরাসরি মুখ না খুললেও, নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, খুব শিগগিরই এই প্রাক্তন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের গোয়েন্দাদের নিযুক্ত করা হবে । তাঁদের থেকে এই প্রশিক্ষণ পেলে তদন্তকারীরা আরও শক্তিশালী এবং কৌশলগত দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
বিগত কয়েক বছর বিশেষ করে কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্যে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনলাইন গেমিং প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস হয়েছে । বিশেষত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড, কয়লা পাচার, গরু পাচার-সহ নানা প্রতারণার ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের হেভিওয়েট বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে গ্রেফতারের পর বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন । তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর সহযোগীরা ৷ বর্তমানে তাঁরা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন । পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের হরিদেবপুরের ফ্ল্যাট এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রায় 50 কোটি টাকার বেশি নগদ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন ইডি-র গোয়েন্দারা ৷ পাশাপাশি মোট পাঁচ কোটি টাকার সোনার গয়নাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের টাকা থেকেই এই কোটি কোটি টাকা উপার্জন হয়েছিল, যা বর্তমান রাজ্য সরকারকে অনেকটাই কালিমালিপ্ত করেছে ।
আরও পড়ুন: পান্ডে ব্রাদার্সের অতিরিক্ত 130 কোটি টাকা লেনদেনের হদিশ পেল লালবাজার
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বীজ জন্ম নিয়েছিল এই রাজ্যেই ৷ কিন্তু সেই দুর্নীতির তদন্ত তো দূরের কথা, দুর্নীতির কোনও আঁচও করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ বা কলকাতা পুলিশ । ঠিক সেই ভাবেই গরু পাচার কাণ্ডে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ তাঁর একাধিক সহযোগী বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবর সামনে আসতে থাকে । একাধিক কোম্পানির হদিশ পান তদন্তকারী আধিকারিকরা এবং সেই কোম্পানির মাধ্যমেই কালো টাকা সাদা টাকায় রূপান্তর করা হত বলে খবর ।
এছাড়াও শহরে অনলাইন গেমিং প্রতারণা অ্যাপের ঘটনার তদন্তে নেমেও কোন কূল কিনারা না পেয়ে তদন্তের গতি শ্লথ করেছিল কলকাতা পুলিশের পার্ক স্ট্রিট থানা । সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা মেটিয়াবুরুজ থানার ঠিক উলটোদিকে শাহী আস্তাবাল এলাকা থেকে অনলাইন গেমিং প্রতারণার হদিশ পেয়ে একটি বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেন । এখানেই প্রশ্ন ওঠে যে, কীভাবে এই কোটি কোটি টাকা প্রতারণা হল আর কলকাতা পুলিশ তদন্তভার শুরু করেও তার কূল কিনারা করতে পারল না ?
যখন এই সব প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ, সেই সময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দাদের টেক্কা দিতে কালো টাকা কীভাবে উদ্ধার করা যায় এবং আর্থিক তছরুপের ঘটনার তদন্ত কোন পথে এগনো যায়, তার কৌশল শিখতেই এ বার এই পদক্ষেপ করল কলকাতা পুলিশ ৷ দেশের পুলিশি ব্যবস্থায় এমন নজির এই প্রথম ।