কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি: বইমেলা (Kolkata International Book Fair 2023) যেন অলীক কোনও উঠান ! যে উঠানে কোনও ধর্ম নেই ৷ কিন্তু, সীমা না-মেনে মুক্ত চিন্তার আদানপ্রদান করে এগোনোর 'লাইসেন্স' আছে ৷ বাঙালি দুর্গাপুজোকে ঘিরে উদ্বেল হয় ৷ আর মাতে বইমেলার উঠানে ৷ এই উঠানে পা জড়িয়ে যায়, থেমে যায় ৷ কখনও বা লুটোপুটি খায় ৷ কেউ খোঁজে তিস্তা বা পাহাড়ের হাহাকার ৷ পদ্মা মেশে গঙ্গায় ৷ কেউ ভাঙে ঢেউ, দেখে অতি দূরে আলোর জাহাজ ৷
আসে প্রত্যেকে, অবেলার চিন্তা একপাশে রেখে হেসে ওঠে সকলে ৷ বিরহের কোনও ঠাঁই নেই ৷ চোখ খোঁজে বই-বই-বই ৷ সকলেই এখানে অতিথি ৷ দিন ফুরোলে, হে বাঙালি এত বই পাঠ করলে, তবু পাঠক হয়ে তো ওঠোনি ! আহা, তা কেন ? এই তো, কত বই ! বইয়ের পাতায় সই লেখক, কবির ৷ তাঁদের মধ্যে থেকে ঘ্রাণ নেয় বাতাস মৌসুমীর ৷ সেই ঘ্রাণ, অভিজ্ঞান নিয়ে চলে যায় পাঠক, অপেক্ষায় থাকে আগামীর ৷ বৃষ্টি নামে অঝোরে, সবুজ গন্ধে উগ্র হয় মনের বাগান ৷ পাশে করে আহ্বান- হে বাঙালি, বইমেলা নিয়ে কি লেখা এতই সহজ ? অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানার গরজ, শুধুই মিলেমিশে যায় বইমেলায় ৷
আরও পড়ুন: সুলেখার স্টলে স্মৃতিমেদুর বইপাগল বাঙালি !
পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন ময়দান, বাইপাসের ধারের মিলন মেলা পেরিয়ে মেলার স্থায়ী ঠিকানা এখন সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক ৷ নগর সভ্যতার নাভিকেন্দ্রে জড়ো হয় সকলে ৷ কথায় বলে, শব্দ ব্রহ্ম ! এস, জাগ্রত করি কুলকুণ্ডলিনী ৷ চোখের আড়ালে চাঁদ, তবু আলো চারপাশ ৷ শক্তি, সুনীল বা দেরিদার প্রেমিকারা যত, এই প্রেম ফিরে আসা নৌকার মতো, দোলাচলে থাকে ! বইমেলা আসলে অলীক কোনও উঠান !
এই উঠোনে কলমকে সম্বল করে বিখ্যাত আরও বিখ্যাত হয় ৷ অখ্যাত আলো পায় সাফল্যের ৷ নবাগত স্বপ্ন দেখে কলম ধরার ৷ আজ রবিবার, বইমেলার দশমী (Last Day of Kolkata International Book Fair) ! একসঙ্গে এত বইয়ের বাস কোথাও হয় না ৷ 25 বছর আগে পুড়ে যাওয়া মেলা চত্বরে জমে থাকা ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো বইমেলা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৷ হাঁটতে হাঁটতে আরও পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত ৷ ডিজিটাল দুনিয়ায় পাঠক কি কালো অক্ষরে ঠাসা প্যাপিরাসে চোখ বোলাবে ? ই-বুক, অডিয়ো বুকের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে মুদ্রিত গ্রন্থরাশি ?
কবি অংশুমান চক্রবর্তী বলছেন, "পারবে ৷" চলতি বইমেলায় 'তবু অপেক্ষায় থেকো'- এই বইটির হাত ধরে তাঁর আত্মপ্রকাশ ৷ সামাজিক মাধ্যমে তাঁর নিয়মিত পোস্ট করা ছড়া পাঠকের আগ্রহ বাড়িয়েছিল ৷ নতুন বই সেই সামাজিক মাধ্যমে রাখা ছড়া সংকলন নয় ৷ বরং পাঠককে চমকে দিতে বর্তমান সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন ৷ বর্তমান ব্যবস্থায় যখন কোনও গভীর অভিঘাতের সূত্রপাত হয়, সংবেদি মননে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় ৷ তবু অপেক্ষায় থেক অক্ষর ভাষ্যে তৈরি হওয়া প্রতিফলন ৷
সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে মহিবুল আলম বইমেলার উঠানে ৷ বাংলাদেশের লেখক হলেও তিনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী ৷ দুই যুগের বেশি সময় গঙ্গা, পদ্মার আঘ্রাণ থেকে দূরে থাকলেও মহিবুল উপস্থিত তাঁর লেখা 'মরদ' উপন্যাসটি নিয়ে ৷ এপার বাংলা থেকে প্রকাশিত মহিবুলের প্রথম বই ৷ বাংলাদেশে লেখক মহলে 'ঈশ্বর', 'মায়াগন্ধা' উপন্যাসের হাত ধরে মহিবুল পরিচিত নাম তাঁর লেখনীর সৌজন্যে ৷
ঋতিঙ্কর বসু উপস্থিত লিটল ম্যাগাজিনের জগতে ৷ 'তৃতীয় পক্ষ' পত্রিকায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ৷ নবাগতর কলমে আগামীর আহ্বান ৷ সুমিত ঘোষ তাঁর লেখা 'ইডেন গার্ডেন্স: ইতিহাস ও ঐতিহ্য' বইটি নিয়ে উপস্থিত ৷ ক্রিকেটের নন্দনকাননের পিছনে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস চমকে দেবে ৷ তাঁর গবেষণালব্ধ বইটির কথা জানতে পেরে চমকে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং ৷ দিল্লি ক্যাপিট্যালসের প্র্যাকটিসের শেষে সুমিত ঘোষের সঙ্গে দেখা করে বইটির বিষয় ভাবনায় আকৃষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন সৌরভ ৷ তাই নানা বদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েও বইপক্ষের বইমেলার একটাই স্লোগান 'সময় বদলায়, স্বাদ বদল হয় না' !