কলকাতা 27 ফেব্রুয়ারি: লাভপুরে হত্যা মামলায় 2 মার্চ বেলা 12টা থেকে দুটোর মধ্যে সিউড়ি থানায় তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ BJP নেতা মুকুল রায়কে । নির্দেশ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চের । এর আগে 29 ফেব্রুয়ারি মুকুল রায়কে দেখা করার জন্য ডেকেছিল পুলিশ ৷ সেই ব্যাপারে আজ এই মামলার শুনানিতে আইনজীবী শেখর বসু বলেন, "কয়েকদিন পরই রাজ্যে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ সেকারণে ব্যস্ত থাকবেন ৷ ফলে 29 তারিখ মুকুল রায়ের পক্ষে দেখা করা সম্ভব নয়।" এরপরই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি নির্দেশ দেন, দোসরা মার্চ বেলা 12 টা থেকে দুটোর মধ্যে মুকুল রায়কে সিউড়ি থানায় গিয়ে তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে হবে ৷ মামলার শুনানি আরও দু সপ্তাহ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি । তিনি জানিয়েছেন, ততদিন মুকুল রায়কে গ্রেপ্তার করা যাবে না ।
লাভপুরে তিন CPI(M) কর্মী খুনের মামলায় চার ডিসেম্বর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে বোলপুর আদালত । সেখানে নাম রয়েছে বীরভূম জেলার এক সময়ের দাপুটে নেতা মনিরুল ইসলামের । হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এই মামলায় মুকুল রায়ের নামও জড়ানো হয় । মুকুল রায়ের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ সেজন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি ।
2010 সালের 4 জুন লাভপুরের নবগ্রামে সালিশি সভার নাম করে তিন ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৷ সেই সময় মনিরুল ইসলাম ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক দলের নেতা। এরপর তিনি যোগ দেন তৃণমূলে । কুটুন শেখ, ধানু শেখ ও তুরুক শেখকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে লাভপুর মামলায় পুলিশ মোট 52 জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । কিন্তু সেখানে নাম ছিল না মনিরুলের । এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় এই মামলার তদন্ত শুরু হয় । কারণ মৃত তিন সন্তানের মা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । এই মামলায় চার ডিসেম্বর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা পড়ে । তাতে নাম জড়ায় মনিরুল ইসলামের । হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে BJP নেতা মুকুল রায়ের নামও যুক্ত হয় । এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে ছিলেন মুকুলবাবু । তার দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরিতার্থ করতেই তার নাম জড়ানো হয়েছে ।
গত 17 ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে মুকুল রায়ের আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গুলি হাইকোর্টে বলেন, ‘‘2010 সালের ঘটনা । 2014 সালে যখন প্রথম চার্জশিট পেশ হয়েছিল কোথাও মুকুলবাবুর নাম ছিল না । কিন্তু আবার নতুন করে চলতি বছরের চার ডিসেম্বর যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয়েছে তাতে তার নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ।’’ এই নিয়ে সরকারি আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখার্জি বলেন, ‘‘লাভপুর ও বোলপুর এরিয়াতে একাধিক সাক্ষী রয়েছে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এই চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। ফলে এই মামলার আরও তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করছি ।’’
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে । তবে মুকুল রায়কে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনওভাবে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না, এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।