কলকাতা, 10 ডিসেম্বর: বায়ুদূষণের নিরিখে ভারতে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকে দিল্লি । তবে প্রায়শই বায়ুদূষণের মাত্রায় দিল্লির সঙ্গে টক্কর দেয় কলকাতাও । শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বে দূষিত শহরগুলির তালিকায় প্রথম দশের মধ্যেই থাকে মহানগর । বায়ুদূষণ যখন লাগামহীন তখনও দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও নির্দিষ্টভাবে পর্যাপ্ত নজরদারি নেই । পর্যাপ্ত দূষণ মাপক যন্ত্রই নেই কলকাতা ও আশপাশের এলাকায়, দাবি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ৷ দিল্লিতে বায়ুদূষণ মাপার যন্ত্র সিএএকিউএমএস (কন্টিনিউয়াস আম্বিন্ড এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন) রয়েছে 38টি। মুম্বইয়ে আছে 25টি । আর সেখানে কলকাতায় মাত্র সাতটি । ফলে দূষণে জর্জরিত শহর কলকাতায় প্রকৃত ছবি আরও ভয়ঙ্কর বলছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা । এই বিষয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজুও হয়েছে ।
দূষণ পর্ষদ সূত্রে খবর, কলকাতায় এই মহুর্তে রবীন্দ্র ভারতী, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফোর্ট উইলিয়াম, বিধাননগর, বালিগঞ্জ ও যাদবপুরে এই যন্ত্র আছে । রাজ্যের দূষণ পর্ষদ এই নিয়ে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল ৷ তাতে বলা হয়েছিল, কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় পাঁচটা ও কলকাতা মেট্রোলিটন এরিয়াতে আরও 33টি সক্রিয় দূষণ মাপক যন্ত্র প্রয়োজন । মোট 38টি দরকার । এখনও সেই যন্ত্র লাগিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ।
বাতাসে দূষণ কমাতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ৷ তাতে বলা হয়েছে, শহরের জনবহুল এলাকায় যেখানে বেশি দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা সেই সমস্ত জায়গায় এই আধুনিক দূষণ মাপক সক্রিয় যন্ত্র লাগাতে হবে । শুধু তাই নয়, বাতাসে পি এম 10, পি এম 2.5 ও নানা ধরনের গ্যাসের মাত্রা, যা বাতাসকে দূষিত করে সেগুলো ডিসপ্লে বোর্ডে দেখাতে হবে । ওই এলাকার লোকজন বা সেখান থেকে আসা যাওয়া করেন এমন লোকজন যাতে তা দেখতে পান । কোনও এলাকার বাতাসে দূষিত মাত্রা থাকলে সেই এলাকা এড়িয়ে যাওয়া বা দূষণ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন সাধারণ মানুষ ৷ এমনকী প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে পারবেন । কিন্তু বর্তমান সময় দেখা গিয়েছে, যেখানে দূষণ বাস্তবে কমে যাওয়ায় সেই সমস্ত এলাকা অর্থাৎ গাছ গাছালি ঘেরা এলাকায় এই যন্ত্রগুলি লাগানো ।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশ বিজ্ঞানী সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বলেন, "যেখানে নির্মাণ বেশি বা শিল্পাঞ্চল আছে বা উনুনের সংখ্যা বেশি এমন এসব জায়গায় দূষণ মাপক যন্ত্র বসতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট । বেশ কয়েক বছর আগে নির্দেশ দিলেও পদক্ষেপ দেখা যায়নি । ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড খুব প্রয়োজনীয় মানুষকে দূষণে মাত্রা বোঝাতে । তাতে খুঁটিনাটি তথ্য ফুটে উঠবে । সময় তারিখ কোন কোন উপাদান কত ।"
তাঁর কথায়," শুধু স্থানীয় এলাকার বা পোর্টাল মারফত রাজ্য দেশের নয়, গোটা বিশ্বের লোকজন জানবে এটা । এখানে সাতটা মেশিন তিনটি ডিসপ্লে খারাপ । ওয়েব সাইটে মাঝে মধ্যে সঠিক তথ্য ফুটে উঠছে না । এখন বহুতলের উপর থেকে দেখলে একটা দূষণ বলয় দেখা যাবে কলকাতায় । ফলে রাজ্য পর্ষদকে বর্তমান যন্ত্রগুলো ঠিক করার সঙ্গে ডিসপ্লে বোর্ড ঠিক করা ও নতুন যত গুলো প্রয়োজন টট যন্ত্র লাগলে সকলের কাছে দূষণ চিত্র স্পষ্ট হবে আরও । সেই মত মানুষ সচেতন হতে পারবেন । প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন ।"
আরও পড়ুন: