কলকাতা, 6 জানুয়ারি: কলকাতায় বর্তমানে সম্পত্তির কর (KMC Property Tax) নেওয়া হয় ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতিতে । এ বার সেই কর পদ্ধতিতে নিয়ম মেনেই বেস ভ্যালু বাড়ানো হচ্ছে (KMC News)। সেই প্রস্তাব সম্প্রতি মেয়র পারিষদ বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে । ফলে সার্বিক ভাবে কলকাতায় বাড়তে পারে সম্পত্তি কর । যদিও মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) দাবি করছেন, সম্পত্তিকর বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই । তার কারণ ইউনিট এরিয়া আগের থেকেই ক্যাপিং হয়ে রয়েছে । তবে কর মূল্যায়নের কাজে যুক্ত একাংশের দাবি, বেস ভ্যালু বাড়ালে সার্বিক ভাবেই বাড়বে কর (Property tax of Kolkata)।
কর আদায়ে নয়া পদ্ধতি ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বা ইউএএ বেশ কয়েক বছর হয়েছে চালু হয়েছে । তবে বহু অংশের করদাতাকে এই নিয়মের আওতায় আনা যাচ্ছিল না । কয়েক ধাপে নিয়ম সরলীকরণ করে, কাঠামোয় অল্প বিস্তর পরিবর্তন করে, এখন করদাতাদের নয়া নিয়মের আওতায় আনা হয়েছে ও এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তবে করোনা থাকায় কর আদায় আশানুরূপ হয়নি । পরে আধিকারিকদের চাপ দিয়ে বেশ খানিকটা কর আদায় হয়েছে । ইতিমধ্যে গত আর্থিক বর্ষে যে পরিমাণ কর আদায় হয়েছিল, তার থেকে বেশি কর আদায় হয়েছে চলতি অর্থবর্ষে । তবে ভাঁড়ারের হাল ফেরাতে এ বার বেস ভ্যালুই বাড়ানোর পথে কলকাতা পৌরনিগম । ফলে কর বৃদ্ধি সময়ের অপেক্ষা ।
শুক্রবার এ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, "20 শতাংশের নিচেও নামতে পারবে না, 20 শতাংশের বেশিও বাড়তে পারবে না । এলাকা ভিত্তিক কর পদ্ধতিতে এমনটা করা হয়েছে যে, যেখানে উচ্চবিত্তরা আছেন তাঁরা কর বেশি দেবেন, যেখানে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরা আছেন সেখানে করের পরিমাণ কমে যাবে । সেইভাবে এলাকা ভাগ করা হয়েছে । সে দিন যেটা করা হয়েছে সেটা হল, যদি এ ক্যাটাগরি থাকে এবং তার মধ্যে যদি কোনও কম রোজকারের বসতি থাকে, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে তাদের কর জি ক্যাটাগরিতে চলে যাবে । ধরুন, আলিপুর রোড এ ক্যাট্যাগরি কিন্তু সেখানে যে এলাকায় বস্তি রয়েছে সেই এলাকাটুকু জি ক্যাটাগরিতে যাবে । আবার ধরুন, কিছু জায়গা আছে যেখানে ই ক্যাটাগরি কিন্তু সেখানে একটা বিরাট কমপ্লেক্স রয়েছে যেখানে উচ্চবিত্তরা থাকেন, তখন সেই জায়গাটা আবার এ ক্যাটাগরি হয়ে যাবে । নির্দিষ্ট নিয়মে বেশ কিছু সূচক মাথায় রেখে এই নয়া পদ্ধতিতে কর সংগ্রহের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয় । এইভাবে ডেফিনেশন বদলানো হয়েছে । মেয়র পারিষদ বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ।"
আরও পড়ুন: অনুদান আছে, জমি নেই, নৈশাবাস তৈরি ঘিরে বিস্তর জটিলতা তিলোত্তমায়
তিনি আরও বলেন, "বিলাসবহুল আবাসন যেখানে রয়েছে, সেখানে এ ক্যাটাগরি ধরা হয়েছে । যেগুলো স্ট্যান্ড অ্যালোন বিল্ডিং সেই এলাকায় যা কর ধরা হয়েছে সেই করই ওই বিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে । এগুলোতে আর কোনও পরিবর্তন আনা যাবে না । আর ধরুন, এ ক্যাটাগরি অঞ্চলে এই যেমন পার্ক স্ট্রিট সেখানেও যদি নিম্ন মধ্যবিত্ত বা কম রোজগারের বসবাস থেকে থাকেন, তাহলে সেই এলাকাগুলো জি ক্যাটাগরিতেই ধরব ।"
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই নিয়মেই বাণিজ্যিক কর কাঠামোর বেশকিছু বদল আনার প্রস্তাব করা হয়েছে । যার মূল লক্ষ্য আবাসিক করের সঙ্গে যে ব্যাপক ফারাক বাণিজ্যিক করের রয়েছে তা খানিকটা কমানো । তার ফলে বাণিজ্যিক কর প্রদান বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদী পৌর কর্তৃপক্ষ । সেই প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হলেও এখনও সবুজ সংকেত মেলেনি । তবে বিরোধীরা এই বিষয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যেই । তাদের অনেকেই বলছেন, কর্পোরেটদের ছাড় দিয়ে আম নাগরিক করদাতাদের উপর বোঝা চাপাতে চাইছে বর্তমান বোর্ড ।
ক্যাটাগরি 'এ' 74 টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে 82 টাকা। ক্যাটাগরি 'বি' 56 টাকা থেকে হয়েছে 62 টাকা। 'সি' ক্যাটাগরিতে 42 টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে 47 টাকা। ক্যাটাগরি 'ডি' 32 টাকার পরিবর্তে এবার থেকে দিতে হবে 36 টাকা। 'ই' ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে এবার থেকে 24 টাকার বদলে গুনতে হবে 27 টাকা। ক্যাটাগরি 'এফ' আগে দিতে হত 18 টাকা ৷ এবার থেকে যা হবে 20 টাকা। ক্যাটাগরি 'জি' ছিল 13 টাকা ৷ নতুন নিয়মে দিতে হবে 15 টাকা। প্রতি বর্গ ফুটে এক বছরের জন্য নির্ধারিত হয়েছে এই বেস ভ্যালু ৷