কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি: আয় বাড়াতেই হবে কলকাতা পৌরনিগমের (Kolkata Municipal Corporation)। সেজন্য দরকার কর আদায় ৷ তাই এবার কর আদায় করতে দরকারে বাড়ি বাড়ি যাবেন পৌরনিগমের আধিরারিকেরা ৷ এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ৷ জানা গিয়েছে, একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে কলকাতা পৌরনিগমের তরফে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Mayor Firhad Hakim) অনুমোদন মত সেই নির্দেশিকা জারি করেছেন পৌর কমিশনার বিনোদ কুমার । যাতে বলা হয়েছে, দরকারে দাতাদের দুয়ারে যেতে হবে সম্পত্তির কর মূল্যায়ন বিভাগের কর্মী আধিকারিকদের এবং কর আদায় করতে হবে ৷
দরজায় দরজায় গিয়ে পরিদর্শন: পৌরনিগম সূত্রে খবর, সম্প্রতি কলকাতার পৌর কমিশনার বিনোদ কুমার যে নির্দেশিকা জারি করেছেন তাতে বলা হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে সম্পত্তির কর মূল্যায়ন বিভাগকে অমূল্যায়িত সম্পত্তির ও নথিভুক্ত নেই এমন জলাশয় চিহ্নিতকরণ করতে হবে। এমনকী প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি ঠিকানা ধরে এই কাজ করতে হবে। যে সমস্ত সম্পত্তির মূল্যায়ন এখনও হয়নি, তা মূল্যায়নের আওতায় আনতে হবে ৷ পাশাপাশি অনথিভুক্ত জলাশয়কেও নথিভুক্ত করতে হবে । প্রতিটি দরজায় গিয়ে পরিদর্শন করতে হবে সেই সম্পত্তির পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় ৷ অর্থাৎ মূল্যায়নের আওতাধীন যারা, তারা কী কর প্রদান করছেন, নাকি পুরো পরিষেবা উপভোগ করলেও কর প্রদান করছেন না। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করতে হবে ৷
কোষাগারে অর্থ আনাই প্রধান লক্ষ্য: এইসব বিষয়গুলি নিয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে ৷ যত দ্রুত সম্ভব অমূল্যায়িত সম্পত্তি মূল্যায়ন করে কর ধার্য করতে হবে ৷ এর মধ্যে দিয়ে কলকাতা পৌরনিগমের কোষাগারে অর্থ আনাই প্রধান লক্ষ্য । নির্দেশিকায় অ্যাসেসিং ইন্সপেক্টরদের বলা হয়েছে, একদম সাধারণ কর দাতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করতে । কারও মিউটেশন বাকি অথবা কর বাকি আছে কি না ৷ বাকি থাকলে কেনই বা সেটা বাকি থেকে যাচ্ছে ৷ সেটা কীভাবে মেটানো যায় ৷ এই সমস্ত আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমস্যা মিটিয়ে বকেয়া কর আদায় করতে হবে । প্রতি সপ্তাহের বুধ এবং শনিবার এই দু'দিন অ্যাসেসিং ইন্সপেক্টরা এই কাজ করবেন । তাঁরাই আউটডোর, ফিল্ড অপারেশন-সহ সরে জমিনে গোটা কাজটি তদারকি করবেন ।
অ্যাসাইন ইন্সপেক্টরদের একটি ডাইরি করতে হবে: যেখানে প্রতিদিনের এই সমস্ত বিষয়গুলি নথিভুক্ত থাকবে । যেমন- কতটা কর আদায় হল, নতুন মিউটেশন কত হল এবং করদাতাদের সংখ্যা কত বৃদ্ধি পেল প্রভৃতি নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে । কাজের খুঁটিনাটি নথিভুক্ত করা সেই রিপোর্ট নিয়মিতভাবে ডেপুটি অ্যাসেসার কালেক্টর ও অ্যাসেসার কালেক্টরকে দেখিয়ে সই করাতে হবে অ্যাসাইন ইন্সপেক্টরদের । অর্থাৎ গড় মূল্যায়ন বিভাগের কর্মী আধিকারিকদের কর আদায়ের ক্ষেত্রে একদম ময়দানে নামিয়ে আয় বৃদ্ধি পথেই হাঁটতে চলেছে কলকাতা পৌরনিগম (KMC officials to visit door to door to collect tax) ।
উল্লেখ্য, গত আর্থিক বছর 2021-2022 তুলনায়, চলতি অর্থ বছর 2022-23-এ কয়েকশো কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করেছে পৌরনিগমের সম্পত্তি কর মূল্যায়ন এবং রাজস্ব আদায় বিভাগ । এছাড়াও বিল্ডিং, লাইসেন্স, মার্কেট, বিনোদন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে ইতিমধ্যে 1500 কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে । গত অর্থবর্ষের তুলনায় যা অনেকটাই বেশি । এখনও পর্যন্ত 2021 সালের মার্চ পর্যন্ত পাওনাদারদের বকেয়া অধিকাংশই মেটানো গিয়েছে । কিন্তু 2021 সালের এপ্রিল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখনও প্রায় হাজার কোটি টাকার দেনা কলকাতা পৌরনিগমের মাথার উপর ঝুলছে । এর বাইরেও রয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের এবং অন্যান্য ভাতার টাকা । তাই কোষাগারে অর্থ এলেও হাল ফিরছে না সহজে । তাই এবার একদম দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছানোর লক্ষ্য পৌরনিগমের ।
আরও পড়ুন: বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কর কমানোর পরিকল্পনা পৌরনিগমের, অপেক্ষা নবান্নের সবুজ সংকেতের