কলকাতা, 15 জানুয়ারি: আইনি জটিলতার কারণে ধ্বংসের মুখে শহরের বহু ঐতিহ্যবাহী ভবন (Legal Issues in Heritage Buildings Renovations) ৷ নিয়মিত সংস্কারের কাজ না হওয়ায় মুছে যাচ্ছে কলকাতার ইতিহাসের চিহ্ন বয়ে চলা বহু হেরিটেজ ৷ তাই আইনি জটিলতা কাটাতে ও নিয়মে শিথিলতা আনতে বৈঠকে বসছে কলকাতা পৌরনিগম এবং রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ৷ সংস্কারের অভাবে ধুঁকতে থাকা হেরিটেজ ভবনগুলিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে, আলোচনা হতে পারে সেই বৈঠকে ৷
কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ভারতীয় ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একাধিক বাড়ি ও স্থাপত্য রয়েছে ৷ যার কোনও কোনওটা আবার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ৷ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মালিকানা ও ঐতিহ্য বজায় থাকলেও, আর্থিক সামর্থ হারিয়েছেন বর্তমান মালিকরা ৷ আর সেখানেই বিপত্তি ৷ সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে হেরিটেজ তকমা পাওয়া সেইসব বাড়িগুলি ৷ হেরিটেজ তকমার কারণে বাড়িগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা ৷ সেক্ষেত্রে রয়েছে আইনি জটিলতা ৷ ফলে হেরিটেজ ভবন বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অর্থের অভাব প্রকোট হচ্ছে ৷
তবে, এই সমস্যা শুধুমাত্র 'এ' গ্রেড প্রাপ্ত নয় এমন হেরিটেজের ক্ষেত্রেই ৷ সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবার আলোচনার টেবিলে আসছে কলকাতা পৌরনিগম এবং হেরিটেজ কমিশন ৷ সেখানে আইন ও নিয়মকে শিথিল করা নিয়ে আলোচনা হবে ৷ মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা হেরিটেজ ভবনগুলির সংস্কারের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ৷ তার জন্য প্রতিটি হেরিটেজকে খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷ আর এর জন্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন ৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘টক টু মেয়র’-এ ফোন করেছিলেন ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের বাসিন্দা বৃদ্ধা কল্পনা সেন ৷ তিনি নিজেকে কেশবচন্দ্র সেনের আত্মীয় বলে দাবি করেন ৷ তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িটিতে হেরিটেজ তকমা থাকায় তিনি সংস্কার করে ওই জমি বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না ৷ তবে, ওই বাড়ির উপরের অংশে সংস্কার হয়েছে বলে তিনি জানান ৷ কিন্তু, তিনি যে অংশে থাকেন সেখানে কোনও সংস্কারের কাজ করতে পারছেন না আইনি জটিলতার জেরে ৷
আরও পড়ুন: শতবর্ষের পুরনো বাড়ি ভেঙে হবে ফ্ল্যাট, দেওয়া হল 'বাড়ির ফেয়ারওয়েল'
বৃদ্ধার অভিযোগ শুনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম কলকাতা পৌরনিগমের হেরিটেজ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বলেন বিষয়টি দেখার জন্য ৷ পৌরনিগমের কর্তারা জানান, ওই বাড়িটি হেরিটেজ নয় ৷ কিন্তু, বাড়ির প্রবেশদ্বার গ্রেড ওয়ান হেরিটেজের তালিকাভুক্ত ৷ এরপর মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, গ্রেড ওয়ান তালিকাভুক্ত কোনও হেরিটেজ পুরোপুরি ভেঙে নতুন করে করা সম্ভব নয় ৷ তাতে আইনি শীলমোহর নেই ৷ কিন্তু, সংস্কার করা যেতেই পারে ৷ তবে হেরিটেজের মূল কাঠামো থেকে শুরু করে গঠন একশো শতাংশ বজায় রাখতে হবে ৷
এনিয়ে ওই বৃদ্ধাকে কলকাতা পৌরনিগমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেন ৷ যেখানে হেরিটেজ ভবন সংস্কারের কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা উল্লেখ করতে বলেন তিনি ৷ মেয়র জানিয়েছেন, এই সমস্যা শহরের একটি বা দু’টি বাড়ির নয় ৷ এমন সমস্যা বহু হেরিটেজ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে রয়েছে ৷ এই আইনি জটিলতা থেকে মালিকদের মুক্তি দিতে এবার হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসছে কলকাতা পৌরনিগম ৷