কলকাতা, 4 জানুয়ারি : গত বছরের গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে ঘেরাও-আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ক্যাম্পাস । কথায় কথায় শিক্ষক, আধিকারিকদের ঘেরাও করছিল পড়ুয়ারা । যে কারণে সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কোনও বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে না বলে আগেই জানিয়েছিল যাদবপুরের অধ্যাপক সংগঠন জেইউটিএ (JUTA) । এবার শিক্ষক হেনস্থা বা কোনও কমিটির সদস্যকে ঘেরাও করে রাখার ক্ষেত্রে "নো টলারেন্স" নীতি নেওয়ার দাবি তোলা হল তাদের তরফে ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন জেইউটিএ (JUTA), বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ABUTA) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (WBCUTA) তরফে যৌথভাবে একটি দাবিপত্র পাঠানো হয় উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে । সেখানে বর্তমান শিক্ষাবর্ষে ভুলভ্রান্তি থাকা রেজাল্ট প্রকাশ, ভরতি প্রক্রিয়ায় দেরির মতো সমস্যায় যে ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে তা নিয়ে মোট সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে অধ্যাপকদের তরফে । বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও শিক্ষার মানরক্ষা করতে এই দাবিগুলি নিয়ে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা ।
প্রথমত, পরীক্ষা বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার জেরে পরীক্ষা নিতে দেরি ও ভুল ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে । ওই বিভাগের আধিকারিক স্তরে দ্রুত নিয়োগ করার দাবি তোলা হয়েছে । দ্বিতীয়ত, ভুলভ্রান্তিহীন ফলাফল প্রকাশের জন্য পরীক্ষা নিয়ামক ও জেইউএমএস (JUMS) কমিটির মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিধিবদ্ধ কমিটি শিক্ষা সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত নেবে, কোনওরকম দেরি না করে সেগুলি কার্যকর করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে । পড়ুয়াদের মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশে খামতি থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত মান এবং সুনামে আঘাত করবে বলে মনে করছেন অধ্যাপকরা । তাই পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিটি স্তরে গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে । এছাড়া সময়ে পরীক্ষা নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করে কার্যকর করা, শূন্যপদ পূরণের মতো একাধিক বিষয় নিয়ে দাবি জানানো হয়েছে ।
তবে যে দাবিটি সবথেকে জোরালোভাবে অধ্যাপকদের তরফে তোলা হয়েছে তা হল, শিক্ষকদের হেনস্থার ক্ষেত্রে "নো টলারেন্স" নীতি বলবৎ করা । গত বছর ডিসেম্বরে বহুবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে । কর্তৃপক্ষ, আধিকারিকদের পাশাপাশি ঘেরাওয়ের মুখে পড়েছিলেন অধ্যাপকরাও । বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক চালিয়ে নিয়ে যেতেও বাধ্য করা হয়েছে কর্তৃপক্ষকে । এর প্রেক্ষিতে আজ অধ্যাপকরা বলেছেন, "আমরা সবসময় গণতান্ত্রিক চিন্তাধারাকে সমর্থন করি । কিন্তু, একইসঙ্গে আমরা কঠোরভাবে মনে করি, একটা অংশের গণতান্ত্রিক অধিকার আরও এক অংশের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করতে পারে না । বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যের সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব । আমরা শিক্ষাগত স্বাধীকার ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী । তাই কোনও সদস্যকে ঘেরাও বা শিক্ষকদের হেনস্থা করলে তার সঙ্গে "নো টলারেন্স" নীতির প্রেক্ষিতে মোকাবিলা করতে হবে ।"
এবিউটিএ-র তরফে গৌতম মাইতি বলেন, "সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয় যেসব আইন বিরুদ্ধ ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলি বাতিল করতে হবে ৷ অবৈধ কাজের যথাযথ তদন্ত করতে হবে ৷ ক্যাম্পাসকে নৈরাজ্য মুক্ত করে সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য অবিলম্বে উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে । অন্যথায় শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে ।"