কলকাতা, 19 সেপ্টেম্বর: তদন্তে গাফিলতি এবং অভিযুক্তদের আড়াল করার অভিযোগে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর বিরুদ্ধে মূল দোষীদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারি ও প্রাথমিকের বাজেয়াপ্ত ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের প্রেক্ষিতে এ দিন এই মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এই মামলায় সিবিআই-এর প্রধান আধিকারিক অশ্বিন সেনভিকে আগামী সপ্তাহে আদালতে তলব করেছেন তিনি ৷
2022 সালের 7 জুলাই সিবিআই প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল ৷ যা ডিজিটাইজ ওএমআর শিট বলে আদালতে জানায় সিবিআই ৷ আর এই ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা এস বসু রায় ও কোম্পানির কর্মী হিসেবে পার্থ সেন নাম উঠে আসে ৷ আদালত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল ৷ মূলত, এরা ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থায় এই পার্থ সেন মানিক ভট্টাচার্যের সুপারিশের নিযুক্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে ৷
কিন্তু, আজ মামলার পুনরায় শুনানিতে সিবিআই যে রিপোর্ট জমা দেয়, তাতে বিস্তর গলদ পান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘‘সিবিআই এতদিন পর্যন্ত যে তদন্ত করেছে তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ ৷ প্রয়োজনীয় প্রশ্ন তাঁরা কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি ৷’’ এ দিন সিবিআই আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এস বসু রায় ও কোম্পানির কর্মচারী পার্থ সেনকে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ৷ কিন্তু, কী তথ্য পাওয়া গিয়েছিল ? তা জানতে পারেনি সিবিআই ৷ কারণ সেই সময় তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সোমনাথ ভট্টাচার্য ৷ পরে তাঁকে বদলি করা হয় ৷’’
আরও পড়ুন: 36 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
সিবিআই আইনজীবীর এই জবাবে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এর পরেই সিবিআই-এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি ৷ তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই মূল দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা করছে ৷ তারা তদন্তের নামে কিছুই করছে না ৷ আমি এই রিপোর্ট পাঠাব প্রধানমন্ত্রীকে ৷ আমি এটা বিশ্বাস করতে পারি না যে, একগাদা বোকা সিবিআই-তে বসে আছে ৷ এটা আসলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে ৷ সিবিআই-তে অত্যন্ত বুদ্ধিমান আধিকারিকরাও রয়েছেন ৷’’
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘সিবিআই আধিকারিকরা এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসাই করেননি এস বসু রায় ও কোম্পানিকে ৷’’ তিনি সিবিআই তদন্তে ক্ষোভপ্রকাশ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি কী তাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নপত্রও তৈরি করে দেব !’’ তিনি আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তকে খোঁজ নিতে বলেন যে, সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রকের অন্তর্গত কিনা ৷ জবাবে আইনজীবী জানান, সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে ৷
তবে, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রকে সিবিআই নিয়ে রিপোর্ট না পাঠানোর আর্জি জানান মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ তিনি বিচারপতিকে বলেন, ‘‘সেক্ষেত্রে রাজনীতির আঙিনায় চলে যাবে বিষয়টা ৷ সেখানে আপোস করা আরও বেশি সহজ ৷ আমলাতন্ত্র এই নিয়ে খেলতে শুরু করবে ৷ তাহলে আরও ঢিলে হবে ৷ তদন্ত চাপা পড়ে যাবে ৷’’