কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গঠিত সিবিআই সিটের প্রধান অশ্বিনী শেনভি বুধবার হাজিরা দেন কলকাতা হাইকোর্টে ৷ এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল ৷ তাঁর কাছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চান, "আপনাদের অফিসার বা আধিকারিকরা কোনওরকম হেনস্তার শিকার হচ্ছেন ?" জবাবে অশ্বিন শেনভি বলেন, "হ্যাঁ ৷ কুন্তল ঘোষের মামলায় সিবিআই-ইডির আধিকারিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে ।" তাঁর এই বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেন, সিবিআই বা ইডির কোনও আধিকারিককে কোনওরকম হেনস্তা করা যাবে না। কলকাতা পুলিশকে তিনি এই তদন্তের কাজে নিযুক্ত করেননি বলেও এদিন উল্লেখ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় বদলির বিষয়ে এদিন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককেও আদালতে তলব করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন ইডি, সিবিআই তদন্তকারীরা তাঁকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলতে চাপ দিচ্ছেন ৷ সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিবিআই আদালতের বিচারক ৷ এই নির্দেশ দেওয়ার জন্য এদিন সিবিআই আদালতের বিচারকের তীব্র নিন্দা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি জানান, নিম্ন আদালতের বিচারকের কোনও অধিকার নেই এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার। পুলিশেরও অধিকার নেই সিবিআইয়ের কোনও আধিকারিক ও সিটের প্রধানকে কোনওরকম প্রশ্ন করার।
আরও পড়ুন: রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ, স্যাটের নির্দেশ খারিজ হাইকোর্টের
জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের আদালতের ঐ বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের ট্রান্সফারের নির্দেশ হয়ে গিয়েছে । কিন্তু এখনও তাঁকে ট্রান্সফার করা হয়নি । অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের 4 অক্টোবরের মধ্যে বদলির নির্দেশ এদিন দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় । ততদিন পর্যন্ত নতুন কোনও মামলা গ্রহণ করতে পারবেন না তিনি ৷ আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় বদলি হয়ে নতুন জায়গায় এখনও নিয়োগ পাননি, কারণ তার ফাইল আটকে রয়েছে আইনমন্ত্রীর অফিসে। এদিন জুডিসিয়াল সেক্রেটারি আদালতে এসে এই তথ্য দেন ৷ তিনি জানান গত 25 অগস্ট থেকে তাঁর ফাইল আটকে রয়েছে । তার জন্য রাজ্যের আইনমন্ত্রীকে বুধবার বিকেল 5টার সময় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিন হাইকোর্টে, সিটের প্রধান অশ্বিন শেনভি জানিয়েছেন, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে চারজনকে তারা এই মামলায় সাক্ষী হিসাবে বিবেচিত করেছিলেন । সিবিআই বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় তাদের জেলে পাঠিয়ে দেন । যে পরিস্থিতিতে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না সেই পরিস্থিতি বিচারকের এই নির্দেশের নিন্দা করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এদিন পালটা নির্দেশ দেন, এখন থেকে কেউ যদি সিবিআই-ইডির তদন্তে সাক্ষী হতে চায়, তাহলে তাদের সিবিআই, ইডি ছাড়া কেউ গ্রেফতার করতে পারবে না ।
সিটের প্রধান এদিন জানান, 2020 সালের প্রাথমিক নিয়োগে একাধিক অনিয়ম হয়েছে । দেখা গিয়েছে বহু প্রার্থী নির্দিষ্ট নম্বরের বেশি মার্কস পেয়েছেন । কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট এই মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য এর তদন্ত করা যাচ্ছে না ৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এরপর বলেন, "আমি প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখব এই ব্যাপারে। আমি যে কোনও প্রকারে এই দুর্নীতির শেষ দেখতে চাই ।" সিটের প্রধান আরও জানান, শিক্ষা দফতর যে কম্পিউটার ব্যাবহার করত তাতে কোবল সফটওয়্যার ব্যাবহার করা হয়েছে। যা একটু পুরনো হওয়ায় তার থেকে তথ্য উদ্ধার করতে সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: কলকাতার রাস্তায় হকারের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বড় নির্দেশ হাইকোর্টের
এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য (রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে),"আমি বাধ্য হচ্ছি বলতে, 2023 এর 2 মার্চ রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে আমার দেওয়া নির্দেশের উপর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি 29 মার্চ 2023 তারিখে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন । এখনও মামলাটি সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে । কতদিন এইভাবে স্থগিতাদেশ থাকবে ? এর জন্য বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হবে। আপনি এই বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন । পাশাপাশি এই নির্দেশের কপি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো হচ্ছে যাতে মামলাটি দ্রুত শুনানি করা হয়, আপনি সেই ব্যাপারে দৃষ্টি দিন ।" রাজ্যের মুখ্য সচিবকে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, কোনও ব্যাক্তি কোনওরকম অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন না শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্তকারী সিবিআই, ইডির অফিসারদের বিরুদ্ধে, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া । এই নির্দেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনতেও মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন তিনি । তবে সিবিআই'য়ের প্রধান প্রবীণ কুমার সুদকে আদালতে হাজির হওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই নির্দেশ আপাতত বাতিল করেছেন তিনি।