কলকাতা, 24 নভেম্বর: শুরু হল তিনদিন ব্যাপী নবম 'বাংলা সাহিত্য উৎসব'। শুক্রবার এই সাহিত্য উৎসবের সূচনা করলেন বাংলার প্রখ্যাত লেখক ও চিন্তাবিদরা । ঐতিহ্যশালী অক্সফোর্ড বুক স্টোরে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অভিরূপ মুখোপাধ্যায় এবং উৎসবের পরিচালক তথা অক্সফোর্ড বুক স্টোরের সিইও স্বাগত সেনগুপ্ত । 24, 25 ও 26 নভেম্বর তিনদিন ধরে চলবে এই সাহিত্য উৎসব । এই ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য উৎসব নিয়ে জয় গোস্বামী বলেন, "দু'ধরনের লেখক-কবি আছেন সারা পৃথিবীজুড়ে । এক ধরনের, যাঁরা মঞ্চারোহণপ্রিয়, উৎসবপ্রবণ । আরেক ধরন, যাঁরা তাঁদের লেখার টেবিলটাকেই মঞ্চ ভাবেন । প্রথম ধরনের সংখ্যা বেশি । দ্বিতীয় ধরনের লেখক-কবি অল্প হলেও আছেন । এই নিয়েই পৃথিবী চলছে ।"
উদ্বোধনী পর্বের পর তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এই অধিবেশনগুলিতে অংশ নেন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৃজনশীল উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বরা । এই তিনটি অধিবেশনের প্রথমটির আলোচনার বিষয় ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের 200তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন । এই বিষয়ে অভিষেক ঘোষালের সঙ্গে কথোপোকথনে ছিলেন অভীক মজুমদার, দেবোতোষ দাস ও শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় । দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুবাদ বিষয়ক আলোচনায় ছিলেন অভীক মজুমদার, চিন্ময় গুহ, চৈতালি চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় । এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবের প্রথম দিনের শেষ অধিবেশনে আলোচনা হয় কীভাবে বাইরের জগতে পৌঁছে যায় সাহিত্যের বার্তা । এই আলোচনার প্যানেলে ছিলেন দেবাশিস সেন, সত্যম রায়চৌধুরী, অরিন্দম শীল এবং শুভদীপ চক্রবর্তী ।
উৎসবের ডিরেক্টর এবং অক্সফোর্ড বুক স্টোরের সিইও স্বাগত সেনগুপ্ত বলেন, "বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ বিধানে এবিএসইউ ধারাবাহিকভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে । এজন্য এবিএসইউ এমন একটা মঞ্চ তৈরি করেছে যেখানে বাংলা সাহিত্যের অনুরাগীরা বিশিষ্ট লেখক, পণ্ডিত এবং শিল্পীদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন । গত কয়েকবছর ধরে শ্রোতাদের কাছে থেকে আমরা যে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত । এই বছরের উৎসব সকলকেই আরও সমৃদ্ধ করার, সবার মধ্যে আরও বেশি ভাবনা উদ্রেক করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে । আমরা আশা করি যে, সাহিত্যের অনুরাগীরা অক্সফোর্ড বুকস্টোরের এই সাহিত্য উৎসবে এসে সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসের স্রোতে আবারও নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবেন ।"
নবম এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবের আরও যে সব অধিবেশন রয়েছে তাতে থাকছে নানা ধরনের বিষয় । দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ 25 নভেম্বর শনিবার আলোচিত হবে ব্যতিক্রমী রাজনীতি, বাংলা সাহিত্যে বাংলার গ্রামীণ জীবনের প্রতিফলন, কবিতা, পত্রপত্রিকা ও সাময়িক পত্রে গল্প ও উপন্যাসের গুরুত্ব কমে আসা, বাংলা সাহিত্যে প্রেমের গল্প ও হিংসার গল্পের মধ্যে সংঘাত এবং বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের ক্ষেত্রে মিম ও রসিকতার ভূমিকা । ওই দিনই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের স্মৃতিতে সঙ্গীত শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে ।
তৃতীয় দিনে অর্থাৎ 26 নভেম্বর রবিবার শেষ দিনে শব্দ নিয়ে খেলা ও কবিতা পাঠের অধিবেশনে পার্টনার হিসেবে থাকবেন যথাক্রমে শব্দবাজি ও সুরজিৎ-ও-বন্ধুরা কবিতা ক্লাব । থাকছে মহিলাদের লেখালিখির বিষয়ে অধিবেশন । থাকবে সাহিত্য রাষ্ট্রের নীতি বনাম রাজনীতির মতো বিষয় । এছাড়াও বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞান রচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা হবে । এই দিন বিকেলে রয়েছে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধিবেশন-'আবোল তাবোল-এর শতবার্ষিকী' এবং 'বাংলাদেশের সাহিত্য' ।
এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবের নবম বর্ষের এই তিনদিন ব্যাপী সাহিত্য উৎসবে হাজির থাকবেন জয় গোস্বামী, প্রচেত গুপ্ত, অরিন্দম শীল, বিনোদ ঘোষাল, সাদাত হোসাইন, হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, মীর, শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত মুখোপাধ্যায়, অশোক বিশ্বনাথন, চিন্ময় গুহ, অভীক মজুমদার, দেবাশিস সেন, সত্যম রায়চৌধুরী, হামিরুদ্দিন মিদ্যা, নলিনী বেরা, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সান্যাল, সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়, নূর ইসলাম, তিলোত্তমা মজুমদার, উল্লাস মল্লিক, রাজা ভট্টাচার্য, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর মিত্র, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, প্রসাদরঞ্জন রায়, অনীতা অগ্নিহোত্রী, দীপান্বিতা রায়, পায়েল সেনগুপ্ত, সৌম্যাদিত্য মুখোপাধ্যায় প্রমুখ । এবারের সাহিত্য উৎসবের মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে থাকছেন সাহিত্যিক সৈকত মুখোপাধ্যায় ও শুভঙ্কর দে ।
আরও পড়ুন :
1 প্রতিবাদী কবিতা লিখে আক্রান্ত সাহিত্যিক, অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে
2 চলছে কবিতা পাঠ, শপথ নিচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক; ফিরে দেখা ফ্রস্ট-কেনেডির অজানা ইতিহাস