কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বক্তৃতা রাখতে উঠেছিলেন ৷ সেখানে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, নিজের গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে কেউ যেন অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে । পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সমাজ একটি সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
বক্তব্যের শুরুতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, "আজকের দিন প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন ৷ শপথ নেওয়ার দিন । যার 200 বছরের জন্মদিন আমরা পালন করছি তিনি যেসব কথাতে বিশ্বাস করতেন সেই সব কথাকে কাজে পরিণত করার দিন । সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আজকের অনুষ্ঠান সাফল্য লাভ করবে ৷ এবং তার সঙ্গে আমরা একটা সুস্থ পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষ গড়ে তুলতে পারব ।"
উপাচার্য আরও বলেন, "আজ আমার শিক্ষক অমলেশ ত্রিপাঠীর একটা কথা বলতে চাই ৷ তিনি একটা সুন্দর বই লিখেছেন বিদ্যাসাগরের উপর ৷ বিদ্যাসাগরের সবথেকে ইউনিক ফিচার ছিল ট্র্যাডিশনাল মডার্নাইজ়েশন । উনি একদিকে মডার্নিটিকে গ্রহণ করেছেন অন্যদিকে উনি ট্রাডিশনকে (পরম্পরা) সরিয়ে রাখেননি । দুটোর মেলবন্ধন করার চেষ্টা করেছেন । উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পাশ্চাত্য আর এখনকার মেলবন্ধন ঘটাতে গিয়ে যাতে আমাদের পায়ের তলার সংস্কৃতির মাটিটা না ক্ষয়ে যায় । উনি বলেছিলেন, আমরা ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখব যাতে হাওয়া আসে, আমাদের নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দেয় । কিন্তু, এরকম হতে দেব না যাতে ওই হাওয়া এসে আমাদের ভিতটা নড়বড়ে করে দেয় । আজ সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়েছি আমরা ।"
কয়েকদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ABVP-র নবীন বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ নাম না নিয়ে সেই ঘটনাকে উসকে দেন উপাচার্য । বলেন, "বিদ্যাসাগরের দিকে আমাদের বারে বারে ফিরে যেতে হবে । আমরা প্রশ্ন করব ৷ আমরা ডিবেট করব ৷ কিন্তু, ভারতবর্ষে কতগুলো মানবিক ধ্যান ধারণা আছে ৷ সিনিয়রদের শ্রদ্ধা করা ৷ আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে মান্যতা দেওয়া । গণতন্ত্রের মানে এই নয় যে আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করার জন্য অন্যর গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করব । বিদ্যাসাগর সেটাই আমাদের শিখিয়ে গেছেন ।"
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, রাজ্যের সব উপাচার্য এমন কী যাদবপুরের উপাচার্যও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ হয়েছেন । এই বিষয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "জানে কী? গানের সুর দেয়, সেই সুরে গান গায় । শিক্ষা নিয়ে এত ভাবছে কেন? এটা কি তাঁর ভাবার কথা? 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে'। আমি এই বিষয়ে কোনও বিতর্ক করতে চাই না । যে যা বলছে বলুক । সরকার তো উপাচার্যদের নিয়োগ করে না । তার জন্য সার্চ কমিটি আছে । আসল কথা এরা একটা ভয়ের রাজনীতি করছে । সব জায়গায় ভয় দেখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে । রাজনৈতিক নেতাদের কেন্দ্রীয় সংস্থার ভয় দেখাচ্ছে । উপাচার্যরা যাতে ভয় পান তার শুরু করেছেন যিনি এসেছেন । আর তাঁর সুরেই সানাইয়ের পোঁর মতো কথা বলছে এইসব লোকেরা । সরকার কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর অভিজ্ঞতা না দেখে কোথাও উপাচার্য করেনি করবেও না ।"
শিলিগুড়িতে রাজ্যপাল বলেছিলেন, আচার্য ও উপাচার্যের মাঝখানে অন্য কারও থাকার দরকার নেই । সেই বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "উনি অনেক কথাই বলছেন । উনি এটাকে হয়ত ভাবছেন বিচারসভা । আমরা শিক্ষা নিয়ে আছি ৷ বিচারসভায় নেই । কী থাকবে আর কী থাকবে না নির্বাচিত সরকার ঠিক করে ৷ আইন তৈরি হয় বিধানসভায় । সুতরাং, তিনি নিজে সেটা যেন ভালো করে মনে রাখেন । আমাদের কাছে নির্বাচিত এই সরকার সব ৷ যার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"