কলকাতা, 10 জানুয়ারি : নৈহাটিতে বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় ছিল পদ্ধতিগত ত্রুটি । রাজ্যের একাধিক সিনিয়র পুলিশকর্তার মত তেমনই । তাঁদের কথায়, এই কাজে যথেষ্ট পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার অভাব ছিল । এক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের বাজি নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরেছেন সিনিয়র কর্তারা ।
প্রতিবছর দীপাবলির আগে প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশ । তারপর বাজেয়াপ্ত করা বাজি নিষ্ক্রিয় করার জন্য আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ । আদালতের অনুমতি পাওয়া গেলে যোগাযোগ করা হয় পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের সঙ্গে । তাদের মাধ্যমে সেগুলি তুলে দেওয়া হয় সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের হাতে । কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হওয়া বাজি সুরক্ষিত পদ্ধতিতে চলে যায় হলদিয়া । সেখানেই পেশাদারিত্বের সঙ্গেই নিষ্ক্রিয় করা হয় বাজি ।
কী সেই পদ্ধতি?
হলদিয়া নিয়ে যাওয়ার পর বাজিগুলিকে প্রথমে জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয় । তারপর একটি নির্দিষ্ট কেমিকেল মেশানো হয় । এই কেমিকেল বারুদের সঙ্গে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া করে । এর ফলে কোনওভাবেই সেই বারুদ বিস্ফোরণযোগ্য থাকে না । এবার বাজিগুলিকে একটি নির্দিষ্ট মেশিনে দিয়ে কেটে দেওয়া হয় । মেশিনটির নাম ইনসিনেরেটর । এই পদ্ধতিতে বাজি নিষ্ক্রিয় করার ফলে বারুদ প্রায় মাটির মতো হয়ে যায় ।
যে বাজিগুলিতে বেশি বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে সেগুলির ক্ষেত্রে এছাড়াও অন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় । এই পদ্ধতির নাম আর্থ ট্রিটমেন্ট । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক সিনিয়র অফিসার বলছেন, "আর্থ ট্রিটমেন্ট এতটাই কার্যকরী যে এর মাধ্যমে ক্রুড বোমা পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় । বারুদ মিশে যায় মাটির সঙ্গে ।"
সিনিয়র পুলিশ কর্তাদের সন্দেহ, গতকাল নৈহাটিতে যেভাবে বাজি নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল তাতে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল । এই পদ্ধতিতে বাজি নিষ্ক্রিয় করতে হলে মাটি অনেকখানি গর্ত করে তারপর একসঙ্গে বাজিগুলিকে না রেখে একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে নিষ্ক্রিয় করতে হয় । তাহলে হয়ত এত বড় বিস্ফোরণ হত না । বিস্ফোরণের ফলে যে হিটওয়েভ তৈরি হয় তার জেরেই চুঁচুড়া পর্যন্ত বিস্ফোরণের প্রভাব দেখা গেছে । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওই কর্তা বলেন, "ভাগ্যিস ওই সময় কোনও যাত্রীবোঝাই নৌকা যাচ্ছিল না । তাহলে তা ডুবে যেতে পারত ।"