কলকাতা, 18 জুন : বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি শিবির থেকে তৃণমূল শিবিরে ঘর ওয়াপসি হয়েছে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের । আর তা নিয়েই এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল । বিরোধী দল বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিচ্ছেন যেভাবেই হোক এই দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করবেন । সেই মতো বৃহস্পতিবার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি ।
এদিকে মুকুল রায় আবার দাবি করেছেন এই বিষয়ে যা হওয়ার তা আইন মেনেই হবে । তৃণমূল সূত্রের খবর, আপাতত তাঁকে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বারণ করা হয়েছে । এখন প্রশ্ন, যদি মুকুল রায় এই পদ থেকে পদত্যাগ না করেন তাহলে বাস্তবে কী বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করা সম্ভব ?
একটু ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যাক, আসলে দলত্যাগ বিরোধী আইন কী? 1985 সাল । কেন্দ্রে তখন রাজীব গান্ধির সরকার । সে সময় তৈরি হয়েছিল এই দলত্যাগ বিরোধী আইন । সংবিধানের 52 তম সংশোধনীতে এই আইন কার্যকর হয় । মূলত সংবিধানের চারটি ধারা -- 101, 102, 190, 191-এই চারটি ধারার অবলুপ্তি ঘটিয়ে দশম তপসিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত হয় । এই আইন অনুযায়ী কেউ দল ছাড়লে, তাঁকে সেই দলের বিধায়ক এবং সাংসদ পদ ছাড়তে হবে । না হলে ওই বিধায়ক বা সাংসদের বিধায়ক বা সংসদ পদ খারিজ করে দিতে পারেন স্পিকার । এই আইনে আরও বলা হয়েছে একসঙ্গে কোন দলের দুই তৃতীয়াংশ বিধায়ক বা সাংসদ অন্য দলে গেলে বিধায়ক বা সাংসদ পদ খারিজ করা যায় না ।
আরও পড়ুন : পিছিয়ে গেল নন্দীগ্রামে ভোট পুনর্গণনা সংক্রান্ত শুনানি
এই অবস্থায় দলত্যাগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা । কিন্তু আইন বলছে, এক্ষেত্রে আইনসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা চূড়ান্ত । তবে আদালতের রাস্তা খোলা আছে । কিন্তু আদালতও সরাসরি অধ্যক্ষকে কোনও বিধায়ক বা সাংসদকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলতে পারে না । এমনটাই মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ।
এই পরিস্থিতিতে আদৌ কি সরাসরি দলত্যাগ বিরোধী আইনের মাধ্যমে মুকুল রায়কে তার বিধায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ।
এই বিষয়ে প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, আসলে দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে অধ্যক্ষদের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন । তা না হলে যে যতই চেষ্টা করুক, দলত্যাগ আটকানো সম্ভব নয় । তিনি এও বলেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মধ্যে কোন ফারাক নেই । বরং সত্যিই যদি গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য উদ্যোগী হয় এই রাজনৈতিক দলগুলি, তাহলে অধ্যক্ষদের সক্রিয় হয়ে যেখানেই বিধায়ক বা সংসদ ত্যাগ করুন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তা বাস্তবে হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম । এদিকে রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলছেন, আইনের ফাঁক গলেই দলত্যাগীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন । কারণ কি লোকসভা বা বিধানসভা সর্বত্রই অধ্যক্ষ একজন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি । নিরপেক্ষ ওই বসেও তারা শাসকদলের নির্দেশ মানছেন । আর অধ্যক্ষ সক্রিয় না হলে আদালতে গিয়ে দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা সম্ভব নয় ।
কংগ্রেসের অপর নেতা, অসিত মিত্র বলছেন, এটা নৈতিকতার প্রশ্ন । একজন বিধায়ক যিনি জয়ী হবার 5 বছরের মধ্যেই এক দল থেকে আরেক দল, সেই দল থেকে আর এক দলে যাচ্ছেন । এক্ষেত্রে যাঁরা তাঁকে নির্বাচিত করলেন, তাঁদের রায়কে অপমান করা হচ্ছে । দীর্ঘদিনের পরিষদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা থাকায় তাঁকে এও প্রশ্ন করা হয়, অধ্যক্ষকে এড়িয়ে বাস্তবে কি মুকুল রায়, শিশির অধিকারীদের মত বিধায়ক সাংসদদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব ? কালক্ষেপ না করেই তিনি জানিয়েছেন, কোনভাবেই সম্ভব নয় ।