কলকাতা, 13 মে : গ্রুপ-সি নিয়োগ দুর্নীতির অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা পড়ল কলকাতা হাইকোর্টে ৷ আজ অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের কমিটি এসএসসি-র গ্রুপ-সি পদে নিয়োগ সংক্রান্ত অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা দিলেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে । রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে 381 জনকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে (Inquiry Committee submits in HC report over Group C Recruitment Scam) । 18 মে বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবে ৷
মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ অনুসন্ধান করে যে রিপোর্ট দিয়েছে গ্রুপ সি নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে গ্রুপ ডি নিয়োগের মতো এখানেও বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে । এর যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।"
স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, "বাক কমিটির যে রিপোর্ট দিয়েছে সেই রিপোর্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হোক। স্কুল সার্ভিস কমিশন এর যথাযথ তদন্ত করতে প্রস্তুত।"
রাজ্যের এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, " আদালতের তত্ত্বাবধানে কোনও তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হোক । এই কথা আগেও রাজ্যের তরফে তিনি বলেছেন ৷ এখনও বলছেন। আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ফৌজদারি এই দুটো আলাদা আলাদা শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই সিবিআই তদন্ত শেষ কথা নয়।"
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর আত্মসহায়ক প্রবীর কুমার মুখোপাধ্যায়-এর তরফে আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র বলেন,"প্রবীর কুমার বন্দোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কমিটির সদস্য নন। এই মামলায় তিনি কোন পক্ষ নন তার সত্বেও তার নাম জড়ানো হচ্ছে এটা একজন মানুষের স্বাভাবিক বিচার পাওয়ার বিরোধী।" পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির আইনি পরামর্শদাতা টি পাজার তরফে জানানো হয়, তিনি শুধুমাত্র আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন । তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও মিটিংয়ে অংশ নেননি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে আগামী 18 মে এই মামলার রায় দান করা হবে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে -
- 381 জনকে প্যানেলের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ।
- অসফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ভূতুড়ে নিয়োগপত্র তৈরি করে । সেখানে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে ।
- স্কুল সার্ভিস কমিশনের আধিকারিক অশোক কুমার সাহা, শান্তি প্রসাদ সিনহা সৌমিত্র সরকারের নির্দেশে প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য ও পর্ণা বোস ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরি করেন ।
- প্যানেলের র্যাঙ্ক পরিবর্তনের জন্য মূল দায়ী অশোক কুমার সাহা, শান্তি প্রসাদ সিনহা এবং সৌমিত্র সরকার ।
- পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান সুবিরেশ ভট্রাচার্য, শর্মিলা মিত্র, চৈতালী ভট্টাচার্য, মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্রোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । কারণ তাঁরাও এই ভুয়ো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ।
আরও পড়ুন : HC on SSC Group C Case : সিবিআই বাতিল, গ্রুপ-সি মামলার দায়িত্বে আরকে বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটি
- 30 অগস্ট, 2019 সৌমিত্র সরকার ও শান্তি প্রসাদ সিনহা প্যানেলের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর জেলা ডিওয়াইদের থেকে ভ্যাকেন্সি সংগ্রহ করেছেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে । প্যানেলের সময়সীমা ছিল 18 মে, 2018 ৷
- শান্তি প্রসাদ সিনহার নির্দেশে সমরজিৎ আচার্য 381 জনের সুপারিশপত্র তৈরি করেছেন ।
- বহু চাকরি প্রার্থীর ওএমআর শিট পরিবর্তন করে নম্বর বাড়ানো হয়েছে । শান্তি প্রসাদ সিনহা, সৌমিত্র সরকার এবং অশোক কুমার সাহা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে প্যানেল পেরিয়ে যাওয়ার পর 381 জনের নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন ।
এদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়োগপত্রের সুপারিশ পেয়ে রাজেক লায়েক নামে এক আধিকারিককে দিয়ে নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন । তাই কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও আইন অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার যোগ্য । কেন্দ্রীয় কমিশন সম্পূর্ণ প্যানেলের র্যাঙ্ক পরিবর্তন করে 2019-এর জুন মাসে ।