কলকাতা, 10 জুলাই : সিঙ্গুর আন্দোলনের পর কেটে গেছে প্রায় 13 বছর । আদালতের নির্দেশে জমি ফেরত দিয়েছে রাজ্য । আজ সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তোলপাড় হয়ে উঠল বিধানসভার অলিন্দ । বিরোধীদের একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী । তবে তার মোক্ষম জবাবও দেন তিনি । বলেন, "সিঙ্গুর নিয়ে সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে । সিঙ্গুরের জমিতে শিল্পও হচ্ছে, চাষও হচ্ছে।"
আজ বিধানসভায় শুরু থেকে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকার । উঠে আসে সিঙ্গুর ইশু । কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "2017-18 সালে সিঙ্গুরে ধান, গম, তিল সহ বেশ কিছু ফসল চাষ হয়েছে ।" এপ্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তোলেন, "এই ফসলে কত টাকা আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন কৃষকরা ? রাজ্যের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী সিঙ্গুরের এই নির্দিষ্ট জমিতে 59 কোটি টাকার বেশি আয় হওয়া উচিত ছিল ।"
এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সিঙ্গুরের জমিতে শিল্পও হচ্ছে, চাষও হচ্ছে । সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা প্রত্যেকে জানেন । ওখানে 997 একর জমি ছিল । 2017 সালে আদালতের নির্দেশের পর 955 একর জমি ফেরত দিয়েছিলাম । 41.21 একর জমির কোনও মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
এই সংক্রান্ত খবর : সরকারি দপ্তরের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, ঘোষণা মমতার
সিঙ্গুরের কৃষকদের প্রতি মাসে দু'টাকা কেজি দরে চাল এবং দু'হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়া হয় ।" এরপরই আক্রমণের সুরে বলেন, "
আমার জমি আমি চাষ করব না করব না, আমার মাছের আমি মাথা খাব না লেজা খাব তার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে । জমি ফেরত দেওয়ার পর ওই এলাকার জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল । চাষের জন্য বীজ দেওয়া হয়েছিল । কেউ চাষ করেছে কেউ করেনি, সেটা তাদের অধিকার । সরকার সকলকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে । জমি ফেরত দেওয়ার সময় কৃষকদের এককালীন 10 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে ।"
এই সংক্রান্ত খবর : মালিকরা স্বেচ্ছায় জমি দিলে সিঙ্গুরে টাটারাও স্বাগত, বলছেন তৃণমূল বিধায়ক
এরপর সুজন চক্রবর্তী বিধানসভায় জানতে চান, "কৃষকদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার আগে কি সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ? উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "জমি বণ্টন সঠিকভাবে করে দেওয়া হয়েছে । তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সেই সীমানা অনেক ক্ষেত্রে ধুয়ে মুছে গেছে । যদি কোথাও সমস্যা থাকে তাহলে BLRO এই সমস্যার সমাধান করে দেবেন ।"
এই সংক্রান্ত খবর :"কংক্রিটের মাটিতে চাষ করাবেন, মুখ্যমন্ত্রী কি নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন ?"
সুজন চক্রবর্তী ফের বলেন, "কে চাষ করবে, কে করবে না, সে ব্যাপারে কৃষকের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে । সরকারি কর্মচারীরা গিয়ে চাষ করে আসবে না । বর্তমানে কত জমিতে চাষ হচ্ছে ? আগের তুলনায় কি সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে ?" উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "2018-19 সালে প্রায় 792 জন কৃষক চাষ করেছেন । বর্তমানে সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে । অনেকেই জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন । যারা জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন, তাঁদের আমরা কী বলব ? সিঙ্গুর নিয়ে আমাদের যা প্রতিশ্রুতি ছিল তা আমরা পূরণ করেছি ।"
উত্তর দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তন্ময় ভট্টচার্য পালটা বলেন, "তাহলে আগের সরকার যা বলেছিল যে 42 একর জমির কোনও মালিক পাওয়া যাচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রীও সেই কথা স্বীকার করলেন ? তাহলে আমাদের সরকার(তৎকালীন বাম সরকার) সঠিক তথ্য দিয়েছিল ।"
এই বক্তব্যের পর বিধানসভায় তুমুল হট্টগোল করেন বিরোধীরা । বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কি জমির মালিক নন এমন কোনও ব্যক্তির হাতে টাকা চলে গেছে ? বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, "আমরাও দেখেছি যারা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই কোনও হদিশ নেই ।" এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সরকারি নিয়ম মেনে সার্ভে করে টাকা দেওয়া হয়েছিল । সরকারি টাকা কেউ নিয়ে নেবে এমন তো হয় না । অনিচ্ছুক কৃষকের সংখ্যা ছিল 13 হাজার 330 । ইচ্ছুক কৃষকের সংখ্যা ছিল 9 হাজার 373 জন ।"
সিঙ্গুরের জমিতে শিল্পও হচ্ছে, চাষও হচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন তোলেন বাম বিধায়ক আলি ইমরান রামজ । বলেন, "আপনি বললেন, সিঙ্গুরে শিল্পের পাশাপাশি কৃষিকাজ হচ্ছে । কোন শিল্প হচ্ছে বলুন ?" এই প্রশ্নের পরই হই-হট্টগোল শুরু হয়। শাসকদলের বিধায়করা চিৎকার করে থামানোর চেষ্টা করেন আলি ইমরান রামজকে। যদিও এর উত্তর মুখ্যমন্ত্রী দেননি । বিধানসভার অধ্যক্ষ বলেন, "এটা শিল্প নিয়ে প্রশ্ন, এক্ষেত্রে (এই ইশুতে) তা করা যাবে না ।"