কলকাতা, 7 এপ্রিল: বিহারের শোনপুর মেলা থেকে ওরা আসে কলকাতায়। পাতাঝরা শীত কিংবা গরমের ক্লান্ত বিকেলে দাঁড়িয়ে থাকে ভিক্টোরিয়ার সামনে। এমনিতেই দানা জোটে না সব দিন। তার উপরে লকডাউন। মখবুল, আসলাম, জিন্নার, নাসিরদের ঘোড়াগুলি এখন অভুক্ত। ওদের কথাও ভোলেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ঘোড়াপ্রেমী মাউন্টেড পুলিশের সদস্যরা তাই পৌঁছে দিলেন খাবার। বলা ভালো, জীবনের জিয়ন কাঠি।
ধুলোর আস্তরণ পড়া পুরানো কলকাতার স্মৃতি বলছে, ঊনিশ শতকে প্রথম কলকাতায় আসে ঘোড়ার গাড়ি। “জীবনস্মৃতি"তে কবিগুরু লিখেছিলেন, “ আমি জন্ম নিয়েছিলাম সেকেলে কলকাতায়। শহরের স্যাকরা গাড়ি ছুটছে তখন ছড়ছড় করে ধুলো উড়িয়ে, দড়ির চাবুক পড়ছে হাড় বের করা ঘোড়ার পিঠে। না ছিল বাস, না ছিল ট্রাম, না ছিল মোটরগাড়ি। তখন কাজের এত বেশি হাঁসফাঁসানি ছিল না, রয়ে বসে দিন চলত।" সেদিন বদলেছে আরও অনেকটা। জেট গতিতে ছুটে চলা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে কলকাতা। গতির এযুগে সহিস, কোচোয়ানদের ঠাঁই কোথায়? এক্কাগাড়ি তাই এখন শহর কলকাতায় শুধুই নস্টালজিয়া। তার গতি সীমাবদ্ধ শুধুই ভিক্টোরিয়া চত্বরে। শহর বেড়াতে জয় রাইড দেয় মখবুলদের ঘোড়াগুলি।
শীতের শহরে আজও এই ঘোড়ার গাড়ির কদর রয়েছে। বছরের বাকি সময়টা ঘোড়ার খাবার জোটাতেই হিমশিম অবস্থা হয়। গরমের ক্লান্ত বিকেলে যদিও বা দু-একজন খদ্দের মেলে, লকডাউনে তাও বন্ধ। আসলামদের নিজেদের খাবার জোটানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে। তাই দানার বদলে ঘোড়াগুলি এখন খাচ্ছে ঘাস। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ময়দান চত্বরে। সেটা খেয়াল করেন মাউন্টেড পুলিশের সদস্যরা।
ঘোড়াপ্রেমী কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনী এর পরেই ব্যবস্থা করে ঘোড়ার খাবারের। পৌঁছে দেওয়া হয় দানা। আর যাই হোক ওরা এখন অভুক্ত থাকবে না। আতঙ্ক শেষে আবার ওরা দাঁড়াবে ভিক্টোরিয়ার সামনে। রেড রোডের কালো পিচ রাস্তা ধরে আবার টগবগিয়ে চলবে কলকাতার নস্টালজিয়া ঘোড়ার গাড়ি।