কলকাতা, 23 অক্টোবর: ধরনা মঞ্চে (TET Agitation) বসে থাকলে চাকরি পাওয়া যাবে না (Rathin Warns Jobseekers)। সরকার ইতিমধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা ঘোষণা করেছে । সব ছেলেমেয়ে চাকরি পাবেন না । চাকরি পাওয়ার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে । চাকরি পেতে হলে সেই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে । রবিবার এ কথাই জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ (Rathin Ghosh)।
প্রসঙ্গত এই চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল । বিশেষ করে বিরোধী দলগুলিকে বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে এই আন্দোলনকারীদের মঞ্চে গিয়ে তাঁদের সমর্থন জানাতে । আর চাকরিপ্রার্থীদের তরফ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, সবাইকেই চাকরি দিতে হবে । এ দিন তাই খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে একটা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে । বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি খাদ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন ।
একবার দেখে নেওয়া যাক খাদ্যমন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন ?
জেলার একটি বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, "টেট নিয়ে আমি দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর আন্দোলন হচ্ছে । রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে 11,665টি পদের জন্য যাঁরা 2014 সালে এবং 2017 সালে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা ইন্টারভিউর জন্য বসতে পারবেন । আমাদের দলের থেকেও বোঝাতে হবে, এই উত্তীর্ণ হওয়া ছেলেমেয়েরা তো সবাই চাকরি পাবেন না । ধরনা মঞ্চে বসে থাকলেই যে চাকরি দেওয়া যাবে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই । তার একটা প্রক্রিয়া আছে ৷ সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই আপনি সুযোগটা পাবেন ।"
এ দিন খাদ্যমন্ত্রীর (Food minister) এই বক্তব্যের পালটা জবাব দিয়েছেন সিপিএম নেতা তথা সংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, "উনি ঠিকই বলেছেন চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তৃণমূল জামানায় চাকরি পাওয়ার পদ্ধতিটা কি তা তিনি বলেননি। তৃণমূলের শাসনে নির্দিষ্ট পদ্ধতি হল নেতা ও মন্ত্রীদের টাকা দেওয়া। এই নেতারা একবারও উল্লেখ করেননি নিশ্চিদ্র প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মেধাভিত্তিক নিয়োগ হবে। বরং তৃণমূল নেতারা প্রক্রিয়া বলতে বোঝেন টাকা উপার্জনের পথ। ওরা যদি সৎভাবে নিয়োগের প্রক্রিয়াটা চালু রাখতে পারতেন বা আগামীদিনে চালু রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তাহলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু ওরা তা পারবে না। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের অনশন ও ধরনায় বসতেই হবে। চাকরি প্রার্থীরা তো চাইছেন সঠিক একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মেধা নির্বাচিত হোক ।"
আরও পড়ুন: অসুস্থ বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী, 144 ধারা জারির পর পাঁচ জন করে ভাগ হয়ে গিয়েছেন আন্দোলনকারীরা
অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "প্রক্রিয়া নিশ্চয়ই ছিল এবং আছে । সেই প্রক্রিয়াকে বাংলার শাসক দল চুরি প্রক্রিয়া করে তুলেছে । তৃণমূল সেই প্রক্রিয়াকে টাকা দিয়ে বিক্রি করেছে । অতএব এখন প্রক্রিয়া বিক্রিয়ার কথা বলে লাভ নেই । কাজটা করুন ।"
একইভাবে রথীন ঘোষের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও । তিনি বলেন, "চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতি কী, তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি । আগে তৃণমূল নেতাদের উৎকোচ দাও, তারপরে চাকরি হবে । দিদির জামানায় চাকরি পেতে হলে সাদা খাতা জমা দিতে হয় । তথ্য তো তাই প্রকাশ পাচ্ছে । বাংলার সরকারের মন্ত্রী হিসেবে যিনিই এ কথা বলে থাকুন না কেন, তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্র-যুবক কর্মপ্রার্থীদের প্রতি একটা নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পাচ্ছে । এই বক্তব্য প্রমাণ করে, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বঞ্চনাকে উপেক্ষা করে যাঁরা দুর্নীতি করেছেন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সরকার । এই সরকার চোরের পক্ষে । বঞ্চিত এবং প্রতারিত যে ছেলেমেয়েরা আজ চাকরি পাচ্ছে না তাদের জন্য এই সরকারের কোনও মাথা ব্যথা নেই ।"
এ দিকে, খাদ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা । ধর্মতলায় অনশন মঞ্চ থেকে চাকরি প্রার্থীদের জবাব, 2014 সালে টেট দেওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গেলেও তাঁরা চাকরি পাননি । বরং পদ্ধতির উপর ভরসা করে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন । তাঁরা এমনও দাবি করেছেন, আলোর উৎসবে তাঁদের জীবন আলোকহীন । তাঁদের জীবন থেকে সমস্ত আলো কেড়ে নিয়েছে সরকার । যেহেতু তাঁদের জীবন আজ আলোকহীন হয়েছে দুর্নীতির কারণে, তাই এই ধরনের বক্তব্য মূল্যহীন ।