কলকাতা, 15 এপ্রিল : গতবছরের গোটা সময়টাই কেটে গিয়েছে করোনা আর লকডাউনে ৷ করোনার থাবায় বদলে গিয়েছিল সামাজিক জীবন ৷ সেই আঁচ গিয়ে পড়েছিল শরতের আকাশেও ৷ পেজা তুলোর মতো মেঘ ছিল, কাশফুলও ছিল ৷ কিন্তু ভাটা পড়েছিল পুজোর আড়ম্বরে ৷ বহু অর্ডার বাতিল হয়েছিল শেষ মুহূর্তে ৷
লকডাউনের ফলে আর্থিক মন্দা তৈরি হয়েছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে । গতবছর বহু দুর্গাপুজো কমিটি প্রতিমা অর্ডার দিয়েও তা বাতিল করে দেয় শেষ মুহূর্তে । দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রান্তে কুমোরটুলি থেকেই প্রতিমা রওনা দেয় । কিন্তু একাধিক দেশে চলতে থাকা দীর্ঘ লকডাউনের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপূজা । আর এই আর্থিক ধাক্কা এসে পড়ে কুমোরটুলি শিল্পীদের উপরেও ৷
গত বছর বিদেশে প্রতিমা যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন শিল্পীরা । এখন করোনার প্রাথমিক ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে কুমোরটুলি ৷ ফের নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন শিল্পীরা ৷ প্রতিমা তৈরিও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ একে একে বিদেশেও পাড়ি দিতে শুরু করে দিয়েছেন উমা ৷
পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ফের সচল হচ্ছে কুমোরটুলি । ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে । প্রতিমাশিল্পী কৌশিক ঘোষ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে বিদেশে পাঠান । তাঁর তৈরি করা প্রতিমার চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ট । প্রতি বছর প্রায় 35 টি প্রতিমা তৈরি করে বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান । তবে গত বছর করোনার সংক্রমণের জেরে প্রায় সমস্ত অর্ডার বাতিল হয়ে যায় । এ বছর যদিও ইতিমধ্যেই 17 টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন তিনি । আমেরিকা ছাড়াও, কৌশিক ঘোষের ফাইবার গ্লাসের তৈরি প্রতিমা পাড়ি দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, আয়ারল্যান্ডেও ৷
আরও পড়ুন : মণ্ডপ ও প্রতিমা সংরক্ষণেও সংক্রমণের খাঁড়া
সিডনিতে পাঠানো হচ্ছে 13 ফুটের প্রতিমা ৷ সপরিবারে ওজন প্রায় 180 কেজি ৷ 23 দিন সময় লেগেছে প্রতিমাগুলি তৈরি করতে ৷ সিডনিতে পৌঁছাতে সময় লাগবে 35 থেকে 40 দিন । জার্মানিতে যাচ্ছে সাত ফুট দেবী প্রতিমা ৷ ওজন প্রায় 60 কিলো ৷ প্রতিমার শাড়ি থেকে শুরু করে অলঙ্কার, সর্বত্র রয়েছে জরির নজরকাড়া নকশা ।
আশা, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকের দিকে এগোয়, তাহলে চাহিদা আরও বাড়বে ৷ কিন্তু আশঙ্কার মেঘ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না ৷
শিল্পীদের আশঙ্কা, আবারও যদি আর্থিক ধাক্কা লাগে কুমোরটুলির গায়ে, তবে তা সামলে ওঠা মোটেই সহজ হবে না ৷ তবে ভরসা রয়েছে অশুভবিনাশিনী দুর্গায় ৷ ভরসা, উমা ঠিক তাঁদের রক্ষা করবেন ৷ আর সেই আশাতেই ফের একবার তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলি ৷