কলকাতা, 26 জুলাই : দলের অভ্যন্তরে সংঘাত । BJP-র সঙ্গে দূরত্ব । কয়েকদিন ধরে চলা নানা জল্পনায় এবার কার্যত জল ঢাললেন মুকুল রায় । আজ সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, "BJP-তে BJP-তে ছিলাম, আছি, থাকব ।" দলবদলের পর থেকেই চর্চায় ছিলেন । উনিশের লোকসভায় গেরুয়া শিবিরের ভিত মজবুত হওয়ার পর সেই চর্চা অন্য মাত্রা পায় । বঙ্গে BJP-র সাফল্যের নেপথ্যে মুকুল রায়ের যে বড় ভূমিকা রয়েছে, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায় । সেই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানিয়েছিলেন, মুকুলের BJP যোগে বড়সড় প্রভাব পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসে । এবার লক্ষ্য একুশের নির্বাচন । রণকৌশল ঠিক করতে ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি চলছে দিল্লিতে । সম্প্রতি দিল্লির সেই কেন্দ্রীয়-রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠকের মাঝে হঠাৎ কলকাতায় ফিরে আসা নিয়েই আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন মুকুল রায় । রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, BJP-র সঙ্গে না কি দূরত্ব বাড়ছে মুকুলের । আজ সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে সেই সমস্ত গুঞ্জনের অবসান ঘটালেন মুকুল ।
বিধানসভার কথা মাথায় রেখে দিল্লিতে BJP-র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠক চলছে । কিন্তু তার মাঝে শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরে আসেন মুকুল রায় । এরপর থেকে জল্পনা তুঙ্গে । মুকুল রায় জানিয়েছিলেন চোখের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসা । কিন্তু ইতিমধ্যেই নতুন দল গঠন, BJP- সঙ্গে দূরত্ব, দিলীর ঘোষের সঙ্গে সংঘাত সহ নানা গুঞ্জন তৈরি হয় । তবে এই সমস্ত গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিলেন মুকুল । আজ সল্টলেকে নিজের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, "আমার খারাপ লাগছে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটা খবর দেওয়া হচ্ছে । আমি অনেককেই বলেছি । আজ আবারও বলছি, আমি BJP-তে ছিলাম, আছি আর থাকব । তাই কোনও জল্পনার অবকাশই নেই । কেউ কেউ বলছেন মুকুল রায় দল ছেড়ে দিয়েছেন । এসব বিভ্রান্তিকর প্রচার আমাকে আঘাত করেছে । আমি ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি ।" তাঁর সংযোজন, "আমি চাই এই বিষয়ের উপর একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক । আজ রাজ্যে কোরোনায় 42 জনের মৃত্যু হয়েছে । তবুও এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আমাকে এই কথাগুলি বলতে হচ্ছে । তার কারণ এই বিভ্রান্তিকর প্রচার । " আবার কি দিল্লি ফিরে যাবেন ? মুকুলের উত্তর, "না আপাতত ফিরে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই । এখন চোখের অপারেশন করি । পরে আবার যোগাযোগ করব । এখন ফিরে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই । তবে একটা কথা বলছি, কারও সঙ্গে আমার কোনও সংঘাত নেই । " তাঁর বক্তব্য, "দলের লোকজন দিল্লিতে রয়েছেন । রাজ্য সভাপতি রয়েছেন, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় রয়েছেন । তাই আমার থাকার কোনও প্রশ্ন নেই । আমাকে 22 জুলাই আসার কথা বলা হয়েছিল । আমি ছিলাম ।"
দিন কয়েক আগে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন যোগ্যতার নিরিখে নেতৃত্ব ঠিক হয় । এবিষয়ে মুকল রায়কে প্রশ্ন করা হলে মুকুল রায় বলেন, "সাংগঠনিক দলে যোগ্যতা দলের ভিতরে ঠিক হয় না । তা ঠিক করে দেবে মানুষ । আর দলে আমার গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তা অমিত শাহ নিজে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন । আমি দলের কোনও পদাধিকারী নই । তবে ভারতের সর্ববৃহৎ দল BJP-র 100 জন সদস্য নিয়ে ন্যাশনাল এগজ়িকিউটিভ কমিটি রয়েছে । মনে রাখবেন আমি সেই 100 জনের মধ্যে একজন ।" আজকের সাংবাদিক বৈঠকে দলের অন্দরের সংঘাতের গুজবের কথা উড়িয়ে দিয়ে মুকুল রায় জানান মন্ত্রিত্ব বা পদ নয়, সংগঠনই তাঁর কাছে বড় কথা ।
ইতিমধ্যেই একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে । বলা হচ্ছে মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নাকি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে । এপ্রসঙ্গে মকুল রায় বলেন, "এর মধ্যে তৃণমূলের কোনও নেতার সঙ্গে কথা হয়নি আমার । আমি চাই যারা এধরনের কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক ।"
BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে না কি একটি সংঘাত রয়েছে মুকুল রায়ের । সেজন্য দলে মুকুল শিবিরও কোণঠাসা । এই কয়েকদিনে এই বিষয়টি নিয়েও অনেক জলঘোলা হয়েছে । এনিয়ে মুকুল রায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "এধরনের কথা কোনও সংবাদ মাধ্যমে বা পার্টির ক্লাবে শোন যায় । দলে এসবের কোনও জায়গা নেই । সবাই নিজে নিজের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেন ।"
তবে এইসবের পিছনে বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতিকে দায়ি করছেন মুকুল রায় । তাঁর কথায়, "বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাচ্ছে না । এই পরিস্থিতিতে আমি আমার রাজনৈতিক পরিধিটা বাড়াতে চাইনি । আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ, কৈলায় বিজয়বর্গীর নির্দেশই পালন করছি । রাজনীতির আঙিনা থেকে সরে দাঁড়াইনি । তাই এই বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার আমাকে আঘাত করেছে । "