কলকাতা, 21 সেপ্টেম্বর : রবীন্দ্র সরোবর লেকে ভেসে উঠেছে মরা মাছ ৷ গত দু'দিন ধরে একটি বা দু'টি নয়, শ'য়ে শ'য়ে মরা মাছ ভেসে উঠেছে লেকে ৷ এ বিষয়ে পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্র মোহন ঘোষ কেএমডিএ-এর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন রবীন্দ্র সরোবর লেক অত্যন্ত বেশি পরিমাণে দূষিত হওয়াতে ক্ষতি হচ্ছে লেকের জলজ প্রাণীদের । জাতীয় পরিবেশ আদালত ও হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করে রবীন্দ্র সরোবরে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে ।
লেকের দূষণ প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্র মোহন বলেন, "এটা আগে কখনও হয়নি ৷ রবীন্দ্র সরোবরে লেকের জলে অক্সিজেনের মাত্রা (Dissolve Oxygen) কমে যাওয়াতে বা জীবজ অক্সিজেনের চাহিদা (Biological Oxygen demand) বেড়ে যাওয়ায় মাছের মৃত্যু হয়েছে ।" আশপাশের কোনও ক্লাব বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিকাশির দূষিত জল রবীন্দ্র সরোবরের জলে মিশেছে, সেটাও সরোবরে মাছের মৃত্যুর কারণ ।
পাশাপাশি লেকের 75 মিটার দূরত্বের মধ্যে নানা ধরনের নির্মাণের কাজ চলছে ৷ সেখান থেকে নির্মাণের সামগ্রী, ধুলো ময়লা, প্লাস্টিক কোনও ভাবে সরোবরে গিয়ে পড়েছে ৷ সরোবরের তীরবর্তী অঞ্চল সিমেন্টিং করা রয়েছে, একে বাফার জোন বলা হয় ৷ লেকে প্রতিদিন 8-9 হাজার মানুষ প্রাতঃভ্রমণ করেন ৷ তাঁদের পায়ের ধুলো, খাবারের প্যাকেট জমা হয়েছে ওই সিমেন্টিং বাফার জোনে ৷ বাফার জোনে জমে থাকা এই বর্জ্য লেকের জলে মিশলে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে ও জল কালো হয়ে যাবে ৷ যার পরিণতি এই মাছের মৃত্যু ও ভেসে ওঠা ৷ তিনি জানিয়েছেন গতকাল লেকের জল খুব কালো ছিল ৷ তিনি বলেন, "এত সংখ্য়ায় মাছ মরেছে, যা আমাদের কল্পনার অতীত ৷" তবে তাঁর সঙ্গে কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারের কথা হয়েছে ৷ এই বিপুল সংখ্যক মাছের মৃত্যুতে জলবিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট প্রকাশ করা দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্র মোহন ৷
আরও পড়ুন : KMC : শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবিদ নিয়োগের পরিকল্পনা কলকাতা পৌরনিগমের
রবীন্দ্র সরোবর লেক মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার অন্তরা আচার্য তিনি জানিয়েছেন, রবীন্দ্র সরোবর লেক পরিদর্শনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়া হবে । কী কারণে মাছ মারা গিয়েছে, তা পরীক্ষা করা হবে । রবীন্দ্র সরোবরের জলের নমুনা সংগ্রহ করে জলে অক্সিজেনের মাত্রা দেখা হবে । পাশাপাশি দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করা হবে ৷ এর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের লেকে বসানো হবে একটি দূষণ সূচক যন্ত্র ।
আরেক পরিবেশবিদ সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলছে রবীন্দ্র সরোবরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান । নিয়মিতভাবে রবীন্দ্র সরোবরের লাগোয়া ক্লাব রেস্তোরাঁগুলি থেকে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে । হোটেলের চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া দূষিত করছে সরোবরকে । জাতীয় পরিবেশ আদালত রায় দেয় রবীন্দ্র সরোবরেকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে ক্লাব ও অন্য কোনও জায়গার বর্জ্য রবীন্দ্র সরোবরের জলে না মেশে । কিন্তু তিনি অভিযোগ করেন কেএমডিএ এখনও পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবরকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে সুরক্ষিত করতে পারেনি ৷
পরিবেশবিদদের দাবি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রকৃত কারণ তুলে ধরা হোক । সঙ্গে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় দ্রুত কার্যকর করুক কেএমডিএ ।