কলকাতা, 6 মার্চ : আর মাত্র কয়েকদিন । স্কুল জীবনের শেষ বড় পরীক্ষা উচ্চমাধ্যমিক দেবে পড়ুয়ারা । তারপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবন । স্বাভাবিকভাবেই এখন পরীক্ষার্থীরা জোরদার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তাদের সাহায্যে শেষ মুহূর্তের পরামর্শ প্রকাশিত হচ্ছে ETV ভারতে। গণিত বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন হিন্দু স্কুলের গণিত শিক্ষক অশোক জানা । গণিতের ক্ষেত্রে কী কী দিকে নজর রাখতে হবে, কোন কোন সাধারণ ভুল এড়িয়ে যেতে হবে তা রইল এই প্রতিবেদনে...
আমরা সবাই জানি উচ্চমাধ্যমিক হল উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপ । এই ধাপ যদি সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া যায় তবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় । এখানে সাফল্য মানে ভালো নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার কথাই বলছি । আর ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে গণিতের ভূমিকা যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেকথা আমরা সবাই জানি । একটু সচেতন হলেই গণিতে পুরো নম্বর বা ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব ।
এক নজরে টিপস :
- যে কোনও পরীক্ষায় বা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল শরীর ও মন সুস্থ রাখা । তাই প্রথমেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষার দিনগুলিতে নিজেদের সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার দিকে নজর দিতে হবে ।
পরীক্ষার হলে গিয়ে কী করবে, কী করবে না
- পরীক্ষার হলে যখন পরীক্ষার্থীরা যাচ্ছে তখন সেটা তাদের কাছে নতুন একটা পরিবেশ । সেখানে গিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময়ও লাগে । খুব দ্রুততার সঙ্গে তাদের মানিয়ে নিতে হবেই ।
- 3 ঘণ্টা 15 মিনিট সময়ে প্রশ্ন পড়তে এবং উত্তর লিখতে হবে । প্রশ্নের ক্ষেত্রে, গণিতে পার্ট-এ ও পার্ট-বি থাকে । পার্ট-বি-তে থাকে MCQ । সেখানে সবগুলির উত্তর দিতে হবে, পছন্দ বা বেছে নেওয়ার কোনও জায়গা নেই । পার্ট-এ-তে কিন্তু পছন্দ করতে পারবে । তাই পার্ট-বি-কে সরিয়ে রেখে পার্ট-এ-কে প্রথমে সমাধান করতে হবে । প্রশ্নগুলি ভালো করে পড়া দরকার । কোন প্রশ্নটায় তুমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছ বা সহজ মনে করছ সেভাবেই উত্তর লেখা শুরু করো ।
- উত্তর লিখতে গিয়ে তোমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসাবধানতার কারণে কিছু ভুল করে থাকো। সেই ভুলগুলি কীভাবে শুধরে নেওয়া যায় বা সংশোধন করা যায় সেগুলির দিকে একটু খেয়াল রাখবে ।
সাধারণত যে ধরনের ভুল সচরাচর পরীক্ষার্থীরা করে থাকে সেগুলি হল :
1. ম্যাট্রিক্স ও ডিটারমিনেন্টে যে প্রশ্নগুলি থাকে সেখানে লেখার ক্ষেত্রে তোমরা একটু গুলিয়ে ফেলো । ম্যাট্রিক্স লেখার জন্য সাধারণত আমরা প্রথম বন্ধনী এবং তৃতীয় বন্ধনী ব্যবহার করে থাকি । আর ডিটারমিনেন্ট লেখার জন্য আমরা ব্যবহার করি দু'টি সমান্তরাল সরলরেখা । দু'টি স্ট্যান্ডিং লাইনের মাঝখানে এই ব্যবস্থা থাকে । এক্ষেত্রে আমি প্রায়ই দেখি, ওরা ম্যাট্রিক্স ও ডিটারমিনেন্ট গুলিয়ে ফেলে । এটা লেখার ক্ষেত্রে তোমরা একটু সচেতন থাকবে ।
2. আবার ডিটারমিনেন্ট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যখন তোমরা বিভিন্ন রো-অপারেশন বা আমরা সারি স্তম্ভে যে প্রক্রিয়া প্রয়োগ করি, কোন প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হয় সেটা তোমরা কিন্তু অনেকেই উল্লেখ করো না । এটা অবশ্যই উল্লেখ করবে । কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রো-অপারেশন বা কলম অপারেশনটি সম্পন্ন করলে তা পাশে বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষায় লিখে দেওয়া যায় । তোমরা জানো সেগুলি । সেভাবেই লিখে দেবে ।
3. যখন তোমরা ক্র্যামার্স রুলের সাহায্যে রৈখিক সহ সমীকরণ সমাধান করতে যাও সেখানে খেয়াল করবে যে সহগ ম্যাট্রিক্স থাকে তার ডিটারমিনেন্ট যে 'অশূন্য' সেই কথাটা তোমরা অনেকেই উল্লেখ করো না । আমি বলব এটা অবশ্যই উল্লেখ করবে । যদি অশূন্য না হয় তাহলে তোমরা জানো সমাধান করা যাবে না । সুতরাং এটা উল্লেখ অবশ্যই করবে এবং তারপরে পদ্ধতি অনুযায়ী এগোবে ।
4. ভেক্টর সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তোমরা অনেকেই ভুল করো । ভেক্টর a ডট ভেক্টর a-কে অনেকেই a স্কয়্যার লিখে দাও । এটা লেখার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হবে ।
5. সম্বন্ধ সংক্রান্ত যে প্রশ্নগুলো আসবে, সেখানে তোমরা দেখবে কোনও সম্বন্ধ সমতুল্যতা সম্বন্ধ কি না সেটা দেখানোর জন্য তোমরা স্বসম দেখাও, প্রতিসম দেখাও বা সংক্রমণশীল দেখাও । স্বসম দেখাতে গেলে কিন্তু প্রতিটা উপাদানের ক্ষেত্রে দেখাতে হবে a কমা a ওই সম্বন্ধের মধ্যে রয়েছে । যদি একটাও বাদ চলে যায় তাহলে ওই সম্বন্ধটা আর স্বসম থাকবে না । একই কথা, যদি a কমা b ওই সম্বন্ধের মধ্যে থাকে, প্রতিসম দেখানোর জন্য b দেখাতে হবে তোমরা জানো । যদি কোনও একটা ক্রম যুগলের জন্য এই ব্যাপারটি বাদ পড়ে যায় তাহলে কিন্তু তোমরা প্রতিসম দেখাতে পারবে না । একই কথা সংক্রমণশীলের ক্ষেত্রেও ।
উচ্চমাধ্যমিক: শেষ মুহূর্তে কী পড়বে ইংরেজির জন্য?
6. তোমরা যখন অনির্দিষ্ট সমাকরণ বা ইনডেফিনিট ইন্ট্রিগাল নির্ণয় করে মান বার করতে যাও সেক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট একটা ধ্রুবক তোমাকে যোগ করতে হয় । যেটা অনেকেই তোমরা করো না । তাই সচেতনভাবে একটা স্বেচ্ছাধীন ধ্রুবক তোমরা যোগ করে দেবে । পাশে লিখে দিতে পারো এই ধ্রুবকটি স্বেচ্ছাধীন ধ্রুবক । একইভাবে তোমরা যখন নির্দিষ্ট সমাকরণ করতে যাবে তখন এই ধরনের কোনও ধ্রুবক যদি তোমরা যোগ করে দাও তাহলে অঙ্কটাই ভুল হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রেও সতর্ক থাকবে । আবার অবকল সমাকরণ যখন বার করতে যাও তখন তোমরা প্রথমে সাধারণ সমাকরণই বার করবে । তারপরে যদি কোনও বিশেষ সমাধান যাওয়া হয় সেই অনুযায়ী তোমরা ধ্রুবকের মান নির্ণয় করবে বিভিন্ন শর্ত থেকে ।
7. LPP-তে যখন লেখচিত্রের মাধ্যমে সমাধান করতে যাও তাতে যে বিভিন্ন ধরনের অসমীকরণগুলো দেওয়া থাকে তার লেখচিত্র এঁকে সমাধান অঞ্চলটা ঠিকভাবে নির্দেশ করতে হবে । এইদিক নির্দেশটা অনেকে সঠিকভাবে করে না বা করতে গিয়ে ভুলে যায় । সেদিকে তোমরা একটু সচেতন থাকবে ।
8. আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তোমরা যখন নির্দিষ্ট সমাকরণের মাধ্যমে কোনও বক্র দ্বারা সীমাবদ্ধ অঞ্চলের ক্ষেত্রফল বিন্যাস করতে যাও সেক্ষেত্রে ওই বক্রের কোন অঞ্চলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে যাচ্ছ সেটিকে একটি খসড়া চিত্রের মাধ্যমে দেখাতে হবে । তারপর সেখান থেকে সমাকরণ গঠন করে তোমায় সমাধান করতে হবে ।
- সাধারণ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ যাতে ভুল না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে ।
- প্রেজেন্টেশনের দিকটা মাথায় রাখবে । যে কোনও জিনিস পরিষ্কারভাবে সুন্দরভাবে যদি প্রেজেন্ট করতে পারো তাহলে পরীক্ষকের মনে ভালো প্রভাব পড়ে ।
- তোমরা ভালো পরীক্ষা দেবে । তোমরা যা প্রস্তুতি নিয়েছ তার উপর ভরসা রাখো । সুস্থভাবে পরীক্ষা দাও ।
- যেভাবে তুমি প্রস্তুতি নিয়েছ, পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলে হয়ত সেভাবে প্রশ্ন এল না । সেইজন্য যেগুলো আগে পারবে সেগুলো করে নেবে । যেগুলো তোমার মনে হচ্ছে একটু ভাবতে হবে বা সময় লাগবে সেগুলো উত্তর করার জন্য তোমরা পরের দিকে রাখবে । ভয় পেয়ো না । নিজের মনে বিশ্বাস রাখো ।