কলকাতা, 30 এপ্রিল : শহরে বাড়ছে Covid-19 আক্রান্তের সংখ্যা । কোরোনা আক্রান্ত এই সন্দেহে ভরতি অনেক মানুষ । চিকিৎসা পরিষেবার জন্য রাজ্যের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে । কিন্তু তা রোগীর সংখ্যার তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে কম । তাই কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছে Covid-19 সন্দেহের রোগীকে । আবার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল তাদের বেড সংখ্যার তুলনায় বেশি রোগীকে ভরতি নিয়েছে ।
কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে ইতিমধ্যেই Covid হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর । Covid হাসপাতালের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে । আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকেও COVID হাসপাতাল বানানো হয়েছে । তবে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফেরানো হচ্ছে না Covid-19 সন্দেহের রোগীদের ।
COVID হাসপাতাল নয়, এমন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে Covid-19 সন্দেহের রোগী এবং Covid-19 আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । নির্ধারিত বেড সেখানে রয়েছে । ওই বেডগুলি ভরতি হয়ে যাওয়ার পরে Covid-19 -এর অন্য রোগীকে সেখানে ভরতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । এক্ষেত্রে Covid-19 সন্দেহের রোগীদের ওই হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে । সেখানেও যদি একই পরিস্থিতি থাকে, তা হলে আবার অন্য কোনও হাসপাতালে খোঁজ করতে হচ্ছে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে Covid-19 পজ়িটিভ রোগীকেও ফিরে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ।
কেন ভরতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ? আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, Covid-19-র চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে ১৬টি বেডের ব্যবস্থা রয়েছে । এই বেডগুলিতে রোগী ভরতি থাকলে Covid-19 সন্দেহের কোনও রোগীকে ওই হাসপাতালে ভরতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । কারণ, প্রয়োজন আইসোলেশন ওয়ার্ড । সংক্রমণ রুখতে নেগেটিভ প্রেসারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে । এ দিকে, Covid-19 সন্দেহের কোনও রোগীকে হাসপাতালের অন্য কোনও ওয়ার্ডের বেডে ভরতি নেওয়া সম্ভব নয় ।
তবে বিভিন্ন হাসপাতালে নির্ধারিত সংখ্যক বেডের বেশি রোগীকেও ভরতি নেওয়া হয়েছে । যেমন, উলটোডাঙ্গার কাছে EM বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতাল । Covid-19-র জন্য এই হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৩টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে । তবে গতকাল পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে ১৬ জন রোগী ভরতি রয়েছেন । এই হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৩টি বেডে রোগী ভরতি হওয়ার পরে অন্য রোগীদের যাতে ফিরিয়ে দিতে না হয় তার জন্য তিনটি ট্রলিতে তিনজন রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়েছে ।
হাসপাতালের একজন আধিকারিক বলেন, " Covid-19-এর জন্য যে হাসপাতালে যত সংখ্যক বেড রয়েছে, সেই অনুযায়ী ভরতি নেওয়া হবে।" Covid-19-এর জন্য বেড সংখ্যা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে আধিকারিক বলেন, “এভাবে বেড বাড়ানো যায় না । COVID-19-এর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেগেটিভ প্রেসারের ব্যবস্থা করতে হয় । লকডাউনের এই সময় এর জন্য লোক কোথায় পাব ।” কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, যত দিন যাচ্ছে Covid-19 সন্দেহের রোগীদের সংখ্যা তত বাড়ছে । Covid-19 সন্দেহের কোনও রোগীকে অন্য কোনও ওয়ার্ডে ভরতি নেওয়া সম্ভব নয় । এর ফলে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে Covid-19 সন্দেহের অনেক রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে ।
পঞ্চসায়রে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিফ এক্সিকিউটিভ সুদীপ্ত মিত্র গতসন্ধ্যার পরে বলেন, “হাসপাতাল চালু রয়েছে চিকিৎসার জন্য। রোগীদের ফেরানো আমাদের উদ্দেশ্য নয় । তবে অন্য রোগী এবং Covid-19 রোগী এক নন । COVID-19-এর জন্য আমাদের এখানে যে সীমিত সংখ্যক বেডের ব্যবস্থা রয়েছে, সেটা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেও দেওয়া আছে । আমাদের এখানে সাতটি বেড রয়েছে । এ ক্ষেত্রে COVID-19-এর অন্য রোগীকে ভরতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।” বেড সংখ্যা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা রয়েছে ? তিনি বলেন, "বেড সংখ্যা এমনিই বাড়ানো যায় না । তার জন্য প্রস্তুতি দরকার । নেগেটিভ প্রেসারের ব্যবস্থা দরকার । এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কিছু কাজের প্রয়োজন । লকডাউনের এই সময় এই কাজ করা যাচ্ছে না । তাও আমরা বেড সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করব । আমরা যদি বেড সংখ্যা বাড়াতে পারি তা হলে নিশ্চয়ই আরও রোগীকে ভরতি নেওয়া সম্ভব হবে ।
অন্য রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে না । অন্য কোনও রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে না । হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর, প্ল্যানড অপারেশন সব এখন চালু রয়েছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে যেভাবে সাতটি বেডে দ্বিগুণ সংখ্যক রোগী ভরতি রয়েছেন, সেই খবর স্বাস্থ্যদপ্তরও জানে । রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে এইভাবে দ্বিগুণ সংখ্যক রোগীকে ভরতি রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।