কলকাতা, 23 অগস্ট: মিড-ডে মিলের খাবার চুরির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষিকাকে অবিলম্বে চাকরিতে ফেরানোর নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের ৷ রাজ্য সরকারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁর চার বছরের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিতে হবে ৷ 2019 সালের 19 অগস্ট চুঁচুড়া বালিকা বাণী মন্দির স্কুলে মিড-ডে মিলে নুন-ভাত দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ৷ আদালতে সেই মামলার শুনানিতে ডিআই জানান, সাংসদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তিনি শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা ঘোষকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ৷ শিক্ষিকার দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতেই আজ শুনানি ছিল ৷
মামলার শুনানিতে মামলাকারী বরখাস্ত হওয়া শিক্ষিকার আইনজীবী সওয়াল করেন, ‘‘2019 সালের 19 অগস্টের ওই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষিকাকে সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, ঘটনার সময় দু’দিন ছুটিতে ছিলেন তিনি ৷’’ শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা ঘোষের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ডিআই কীভাবে বুঝলেন, শিক্ষিকাই দোষী ? এমনকি তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিড-ডে মিলের দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন বলে জানান শিক্ষিকার আইনজীবী ৷ আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা তাঁকে দায়িত্ব ছাড়তে দেননি ৷ আর সেই সময়েই স্কুলের মিড-ডে মিলে নুন-ভাত দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, তিনি ঘটনার দিন স্কুলে না থাকা সত্ত্বেও, তাঁকেই দোষী করা হয় ৷’’
2019 সালের 19 অগস্ট হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় চুঁচুড়া বালিকা বাণী মন্দির স্কুলে হঠাৎই পরিদর্শনে যান ৷ সেদিন ওই স্কুলে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে নুন-ভাত দেওয়ার অভিযোগ করেন সাংসদ ৷ কিন্তু, মিড-ডে মিলের সাপ্তাহিক তালিকায় ওইদিন ভাত, ডাল ও সয়াবিন খাওয়ানোর কথা ছিল ৷ তার পরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ডিআই-এর কাছে অভিযোগ জানান হুগলির সাংসদ ৷ পরবর্তী সময়ে অভিভাবক এবং গ্রামবাসীরা শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে মিড-ডে মিলের চাল ও ডিম চুরির অভিযোগ তোলেন ৷
আরও পড়ুন: জীবনকৃষ্ণ সাহার জামিনের আবেদন বাতিল করল হাইকোর্টের
এ দিন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চের শুনানিতে ডিআই নিজে উপস্থিত ছিলেন ৷ ডিআই আদালতে বলেন, ‘‘তড়িঘড়ি ওই শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল ৷ সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করায় পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিলাম ৷ আর সেই কারণে যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি ৷’’ ডিআই-এর বক্তব্য শুনে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘তাহলে কি লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেই এতকিছু ? এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত ?’’
পাশাপাশি, স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও একাধিক গাফিলতি উঠেছিল ৷ সে নিয়ে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে নানান অভিযোগ রয়েছে স্কুলের বিরুদ্ধে ৷ সেগুলি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি কিছু করেছে ?’’ স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের যে কোনওরকম তদন্তে সমস্যা নেই ৷ এর পরেই বিচারপতি শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা ঘোষকে চাকরিতে ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আর 2 সপ্তাহের মধ্যে তাঁর চার বছরের বকেয়া বেতন মেটাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷