কলকাতা, 9 অগস্ট: প্রবল অসুস্থতা নিয়ে সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ পিছু পিছু হাসপাতালে ছোটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাধের সাদা অ্যাম্বাসাডর ৷ হাসপাতালে কঠিন লড়াইয়ের দিনগুলিতেও বাইরে ঠায় অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল সেই বাহন ৷ যেন মালিককে সঙ্গে নিয়েই সে বাড়ি ফিরবে ৷ ফিরলও তাই ৷ 12 দিন পর হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি ফিরলেন ৷ আর তাঁকে সঙ্গে নিয়েই 59এ পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরল বর্ষীয়ান বাম নেতার ডব্লিউবি 06/0002 নম্বরের অ্যাম্বাসাডরটি ৷
হাসপাতালেই অপেক্ষায় ছিল অ্যাম্বাসাডর: আলিমুদ্দিন থেকে মহাকরণ - বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সবসময়ের সঙ্গী ছিল এই সাদা অ্যাম্বাসাডর ৷ নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে এতে চড়েই গিয়েছিলেন ব্রিগেডের সমাবেশে ৷ ছুটে বেড়িয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ৷ গত 30 জুলাই যখন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি হাসপাতালে গেলেন, তখনও তাঁর পিছু ছাড়েনি এই সবসময়ের সাথী ৷ অনুগত পোষ্যের মতোই সে এতদিন ধরে অপেক্ষা করেছে হাসপাতালের বাইরে ৷
নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ফিরলেন বাড়িতে: টানা 12 দিন চলেছে কঠিন লড়াই ৷ গত 30 জুলাই অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন চিকিৎসকদেরও মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল ৷ ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে রেখেও আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা ৷ দিন-রাত এক করে চলেছে মনিটরিং ৷ সিওপিডি-র রোগী বুদ্ধদেবের ফুসফুসের অবস্থাই ভাবাচ্ছিল চিকিৎসকদের ৷ তবে সঙ্গ দিয়েছিল তাঁর হৃদয় ৷ আর তিনি নিজেও ৷ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় ৷ এরপর বুধবার তিনি কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ফিরলেন বাড়িতে ৷
তাঁর বাড়ির সামনে আগের থেকে বেড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা । ফ্ল্যাটের সামনে, পিছনে ও পাশের পুলিশ বুথে অন্য সময়ে আটজন করে পুলিশকর্মী থাকতেন । কিন্তু, বুধবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ফেরার আগে সেখানে 30-35 জন পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয় । বাড়িতে ঢোকার পর তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চলে গেলেও, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংখ্যাটা 20 জনের কাছাকাছি রয়েছে ।
আরও পড়ুন: ভালো আছেন, দীর্ঘ 12 দিন পর বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তাঁর সন্তান ও স্ত্রী ছাড়াও চিকিৎসকদের আনাগোনা থাকবে । তবে, নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত । একই ভাবে দলের লোকজনের আনাগোনায় রাশ টানা হয়েছে । ফলে, যে কেউ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখতে বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন এমনটা নয় ।
পাম অ্যাভিনিউয়ে উৎসুক জনতার ভিড়: আজ তাঁর বাড়ি ফেরার খবরে সকাল থেকে পাম অ্যাভিনিউয়ের উৎসুক জনতার ভিড় ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ি ফেরার খবর জানতেন না, এমন পথচলতি মানুষও কড়া পুলিশি পাহারা দেখে একটু থেমে যান । খোঁজ নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ফেরার খবর শুনেই অনেকে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেন ৷ কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নামা ও বাড়িতে ঢোকার মুহূর্ত মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করেন ।
প্রবেশে বিধিনিষেধ: পাম অ্যাভিনিউয়ের যে বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকেন, সেই বাড়িতে আজ যে কারওকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । প্রবেশ পথেই পুলিশের তরফে জানতে চাওয়া হচ্ছে, "কোন বাড়িতে যাবেন ? কী দরকার ?" আচমকা কেউ যাতে বুদ্ধবাবুর বাড়িতে ঢুকতে না পারেন, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ রয়েছে । এমনকী, অনেকেক্ষেত্রে বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যর অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে ।
বুদ্ধবাবুর স্ত্রী সংবাদমাধ্যম-সহ অসংখ্য অনুরাগীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন । তিনি স্বামীর আরোগ্য কামনা করেছেন । তিনি বলেন, "সংবাদমাধ্যম-সহ যাঁরা এতদিন উদ্বিগ্ন ছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই । উনি সুস্থ হয়ে ফিরেছেন । আরও যা কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলিও দ্রুত সেরে উঠুক ।"
চিকিৎসক যা বললেন: বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু বলেন, "এ কয়েকদিন আমরা অন্য মানুষকে দেখলাম । যিনি চিকিৎসায় আমাদের সাহায্য করেছেন । গত কয়েকদিন খোশমেজাজে ছিলেন তিনি । গান শুনলেন । আপাতত একমাস বাড়িতেই দেখভাল করবে আমাদের হোমকেয়ার টিম । প্রয়োজনে আমি ও আমার সহকর্মী ডাক্তারবাবুরা আসবেন । নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ যাতে বাড়িতে না ঢুকতে পারে সেদিকটা দেখতে বলা হয়েছে।"
সবমিলিয়ে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ, কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেই আজ অদ্ভুত স্বস্তির আবহ পাম অ্যাভিনিউয়ে ৷ আর আগের ঠিকানাতেই আবারও মালিকের সওয়ারির অপেক্ষায় তাঁর দীর্ঘদিনের সাথী সাদা অ্যাম্বাসাডরটি ৷