কলকাতা, 17 ডিসেম্বর : কলকাতা পৌরসভার ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশন চাইলে বাহিনী দিতে প্রস্তুত কেন্দ্র ৷ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে একথা জানলেন কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল । শুক্রবার মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta high court reserves verdict on KMC election 2021 case) ৷
কলকাতা পৌরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি । কিন্তু গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ভারতীয় জনতা পার্টির সেই আর্জি খারিজ করে দেয় । সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল গতকাল । এদিন দিনভর সওয়াল-জবাব চললেও শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় কোনও নির্দেশ দেয়নি ৷ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আজ রাতে অথবা আগামিকাল এই মামলার রায়ের কপি কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া যেতে পারে ।
মামলার শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বলেন, "বিধানসভা নির্বাচনের পর যা হয়েছে তাতে এখনও সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন । আমরা শুধু দু’-একজন প্রার্থীর নিরাপত্তার দাবি জানাইনি । মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে প্রতিদিন বিজেপি সমর্থকদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে । ভয়ের পরিস্থিতি এখনও বজায় রয়েছে । আমাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেওয়া হলেও অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই । এখনও প্রতিদিন ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনার খবর পাচ্ছি আমরা । আমাদের বক্তব্য, বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে একটা সামগ্রিক ভয়ের মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছে । তাঁদের নিরাপত্তার প্রয়োজন । এখনও বিধানসভা নির্বাচনের পর বহু সমর্থক ঘরে ফিরতে পারেননি ৷ প্রতিদিন মার খাচ্ছেন । মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছে- এটা তো সত্য । এটা ঘটেছে এই রাজ্যে । যদি কেউ ভোট দিতে না যান তাহলে কোনও সমস্যাই হবে না তাঁদের । কিন্তু ভোট দিতে গেলেই সমস্যা হবে । ভোটদান একজন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার । সেই অধিকার বিজেপি সমর্থকরা যাতে নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানানো হচ্ছে ।"
নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী রত্নাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা চারজনের অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি । তাঁদের প্রত্যেককে একজন করে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী প্রদান করা হয়েছে । কলকাতা পুরসভার ভোটের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে । কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন । একাধিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে । লাগাতার নাকা চেকিং চলছে । পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে কেউ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে কিছু বললে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।" তিনি আরও জানান, 27 হাজারের বেশি কলকাতা পুলিশ রয়েছে ৷ এর সঙ্গে দরকার মতো রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে ।
তারপরই প্রধান বিচারপতি বলেন, "যদি কোনও রকম অনিয়ম হয় তার জন্য দায়ী কে হবে ?’’ নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জানান, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং মুখ্যসচিব এই ব্যাপারে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্ত পরিকল্পনা ঠিক করেছে । প্রধান বিচারপতির ফের জানতে চান, ভোটাররা ভয় পাচ্ছেন ৷ তাঁদের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে আপনারা কি ব্যবস্থা করছেন ? নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, প্রত্যেক ওয়ার্ডে এর জন্য রুটমার্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
পাশাপাশি রাজ্যের এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, "এটি কোনওভাবেই জনস্বার্থ মামলা হতে পারে না । একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল মামলাটি করেছে । তাদের তরফ বারবার ভোট-পরবর্তী হিংসার কথা বলা হচ্ছে । কিন্তু কলকাতা পৌরসভার ভোট ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা হিংসার ঘটনা ঘটেছে তারা দেখাক । আসলে পুরোটাই রাজনৈতিক গল্প তৈরির চেষ্টা চলছে । যদি রাজ্যের সব পৌরসভায় একসঙ্গে ভোট করা হতো সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সমস্যা হত । কিন্তু এখানে শুধুমাত্র কলকাতা পৌরসভার ভোট হচ্ছে । তার জন্য কলকাতা পুলিশের হাতে 27 হাজার পুলিশ ফোর্স রয়েছে ৷ পাশাপাশি রাজ্যের 69 হাজার ফোর্স রয়েছে । এর মধ্য থেকে কলকাতা পুলিশের 18 হাজার এবং রাজ্য পুলিশের 5 হাজার কর্মী ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভা ভোটের কাজে মোতায়েন করা হয়েছে ৷ প্রয়োজনে আরও নেওয়া হবে ।"
কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ওয়াইজেড দস্তুর বলেন, "রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তাদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন আছে, তারা যোগাযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে রবিবার সকালের মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসবে । তবে কেন্দ্র এই নির্বাচনে নাক গলাতে চায় না । সাধারণ ভোটার যারা ভয় পাচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাসের জন্য নির্বাচন কমিশন যদি চায় তাহলে বেশ কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনী কলকাতা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষের সাহস বাড়ানোর কাজ করতে পারে ।"
যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, তাদের এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও রকম সহযোগিতার প্রয়োজন নেই ৷ প্রয়োজন হলে তারা জানাবে । তারপরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানান, আপাতত রায়দান স্থগিত রাখা হচ্ছে ৷ আজ রাতে অথবা আগামিকাল কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে মামলার রায়ের কপি পাওয়া যাবে ।
আরও পড়ুন : KMC election 2021: শেষবেলায় নজর কাড়ল তৃণমূলের রঙিন প্রচার