ETV Bharat / state

ক্ষুদিরাম বসুকে বাঁচাতে লড়েছিলেন নরেন্দ্রকুমার - স্বাধীনতা দিবস

হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, ক্ষুদিরাম বসু নিজে স্বীকার করেছেন তিনি ও প্রফুল্ল চাকি দু'জন মিলে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন । সম্পূর্ণ ঘটনাটাই অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে । কীভাবে নিজেদের গা বাঁচিয়ে পালানো যায় তার সুষ্ঠু পরিকল্পনাও করেছিলেন তাঁরা । সেই কারণে নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করা হয় ।

একনজরে ক্ষুদিরামের ফাঁসির মামলার শুনানি
author img

By

Published : Aug 15, 2019, 8:30 AM IST

Updated : Aug 17, 2019, 2:26 PM IST

কলকাতা, 15 অগাস্ট : তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে ৷ গ্রেপ্তারের আগেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন এই ঘটনায় ক্ষুদিরামের সহযোগী প্রফুল্ল চাকি ৷ গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম ৷ মুজাফ্ফরপুর আদালত তাঁর ফাঁসির নির্দেশ দেয় ৷ নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ক্ষুদিরামের আইনজীবীরা ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ হাইকোর্টের বিচারপতি ক্ষুদিরামের ফাঁসির নির্দেশ বহাল রাখেন ৷

সালটা ছিল 1908 ৷ ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়ে একই রকম ঘোড়ায় টানা অন্য একটি গাড়িতে বোমা ছোড়েন । ফলস্বরূপ দু'জন ব্রিটিশ মহিলা প্রাণ হারান । শোনা যায়, প্রফুল্ল চাকিকে গ্রেপ্তার করার আগেই তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন । কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়েন । ক্ষুদিরামের বয়স তখন মাত্র 18 বছর 7 মাস 11 দিন । বিচারে মুজাফ্ফরপুর আদালত তাঁর ফাঁসির নির্দেশ দেয় ।

21 মে 1908 সালে বিচারপতি কর্ন ডফ, নাথুনি প্রসাদ ও জনক প্রসাদের এজলাসে ক্ষুদিরাম বসুর বিচার শুরু হয় । সেই মামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের হয়ে ময়দানে নেমেছিলেন মান্নুম ও বিনোদবিহারী মজুমদার নামে দুই আইনজীবী । অন্যদিকে আইনজীবী কালীদাস বসু ,উপেন্দ্রনাথ সেন এবং কেশরীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লড়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে । পরে তাঁদের সঙ্গ দেন কুলোকমল সেন, নগেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী নামে তিন আইনজীবী । ক্ষুদিরামের জবানবন্দী নেওয়া হয় । 13 জুন ছিল রায়দানের দিন । সেই দিন বিচারপতি ও ব্রিটিশ সরকারের হয়ে সওয়ালকারি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি আসে । চিঠিতে বলা হয়, ওই ইংরেজ সাহেবকে হত্যা করার জন্য আরও একটি বোমা পাঠানো হচ্ছিল ৷ তবে বাঙালি নয় কাজটি করবেন একজন বিহারী । এই চিঠি ক্ষুদিরাম বসুর তরফের আইনজীবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল । তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই চিঠির মাধ্যমেই বোঝা যায় গাড়িতে বোমা মারার ঘটনায় অন্য কোনও বড় মাথা জড়িত ৷ তারা কিশোর ক্ষুদিরামকে কাজে লাগিয়েছিল । সুতরাং তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি আইনজীবীদের এই বক্তব্য । বিচারপতি ক্ষুদিরামকে মৃত্যুদণ্ড দেন ৷ এরপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি সাত দিনের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

1908 সালের 8 জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি বেল ও রাভেজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয় । হাইকোর্টে ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী নরেন্দ্রকুমার বসু । ক্ষুদিরামের জন্য তিনি আপ্রাণ লড়াই চালিয়েছিলেন । হাইকোর্টে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের নির্দেশ আইন সংগত নয় ৷ ক্ষুদিরামকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে বিচারপতি ভালো করে সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেননি । আইন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অভিযুক্তের জবানবন্দী গ্রহণ করার কথা । কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুদিরামকে তাঁর পরিচয় জানাননি । যে সমস্ত প্রশ্ন ক্ষুদিরামকে করা হয়েছিল তার উত্তর আলাদা আলাদা করে নথিভুক্ত করা হয়নি কেন‌? সম্পূর্ণ জবানবন্দী নেওয়া হয়েছিল বাংলায়, কিন্তু তা লেখা হয়েছিল ইংরাজিতে ৷ ক্ষুদিরাম বসুর বক্তব্য একটি কাগজে নথিভুক্ত করা হয়েছিল ৷ তবে বয়ান নেওয়ার পরের দিন সেই কাগজে তাঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয় ৷ এই বিষয়ও প্রশ্ন করেন ক্ষুদিরামের আইনজীবী ৷ এই সমস্ত কারণে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করা উচিত ৷ রায়ের পুনর্বিবেচনারও দাবি জানানো হয় ৷ তবে হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, নিম্ন আদালত সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই এই রায় দিয়েছে ৷ ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুদিরামকে নিজের পরিচয় জানাতে ভুলে গেছিলেন ৷ ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্ন করার পর ক্ষুদিরাম বসু যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আলাদা আলাদা করে না লিখে একেবারে ইংরেজিতে লিখেছিলেন । তারপর তিনি তা বাংলা করে ক্ষুদিরামকে শুনিয়েছিলেন ৷ পরে সেই কাগজটি ক্ষুদিরামকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয় ।

আদালতে নরেন্দ্রকুমার বলেন , প্রফুল্ল চাকি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বোমা বাঁধার ব্যাপারে পাকা ছিলেন । তাই বলা যেতে পারে বোমা ছুড়েছিলেন প্রফুল্ল ওরফে দীনেশ । এই ঘটনার পরই আত্মঘাতী হন তিনি । অনুমান করা যায় দীনেশই বোমা ছুড়েছিলেন । নরেন্দ্রবাবু বলেন, ক্ষুদিরামকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল । কারণ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল । কিন্তু বিচারপতির বক্তব্য ছিল, ক্ষুদিরাম নিজে তা কখনও বলেননি । গ্রেপ্তারের সময় ক্ষুদিরামের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ,কার্তুজ এবং দুটো কোট পাওয়া গেছিল । পিস্তল দুটির মধ্যে একটি ছিল লোডিং, অন্যটি ফাঁকা । কার্তুজ খুব জোরালো ছিল না । এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি দীনেশ ব্যবহার করেছিলেন কি না তার কোনও প্রমাণ নেই । ক্ষুদিরাম যে সিল্কের কোট পড়েছিলেন সেটি দীনেশের ছিল । কিন্তু বিচারপতি বলেন, যদি ধরে নেওয়া হয় যে ক্ষুদিরাম বোমা ছোড়েননি, ব্যবহারের পর আগ্নেয়াস্ত্রগুলি তাঁর কাছে দেওয়া হয়েছিল তাহলেও তিনি সমান দোষী বলে বিবেচিত হবেন । এরপর নরেন্দ্র বলেন, ক্ষুদিরামের বয়স এখনও 19 হয়নি । ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাঁর জবানবন্দী থেকে অনুমান করা যায় যে তাঁর বিবেচনাবোধ একেবারেই অপরিপক্ক । বলা যায় তিনি অন্যের হাতের পুতুল হয়েছেন । কিন্তু বিচারপতি বলেন, ক্ষুদিরাম একেবারেই কাঁচা ছেলে ছিলেন না । একটা সুযোগের অপেক্ষায় তিনি ও তাঁর সহযোগী ঘটনার 20 দিন আগে থেকে মুজাফফরপুরে ছিলেন ৷ তাই তাঁকে বাচ্চা ছেলে বলা যায় না ৷

এবার নরেন্দ্রবাবু বলেন, ক্ষুদিরামের জবানবন্দী থেকে বোঝা যায় তিনি এই অপরাধ করে বোকামি করেছেন । অন্যের কথা শুনে তিনি অত্যন্ত সাহসী হয়ে পড়েছিলেন । অন্যের চালাকি ধরতে পারেননি । তিনি শুধুমাত্র সহযোগী ছিলেন । কিন্তু বিচারপতি বলেন, এটা বিবেচ্য নয় । এর জন্য তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না । তিনি নিজে স্বীকার করেছেন তিনি ও প্রফুল্ল চাকি দু'জন মিলে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন । সম্পূর্ণ ঘটনাটাই অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে । কীভাবে নিজেদের গা বাঁচিয়ে পালানো যায় তার সুষ্ঠু পরিকল্পনাও করেছিলেন তাঁরা । সেই কারণে আমরা এই আবেদন খারিজ করছি ।

মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার বিচারপতিরা জিজ্ঞাসা করেন, ক্ষুদিরাম তুমি কিছু বলতে চাও ? ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হত, তাহলে আপনাকে বোমা বাঁধা শিখিয়ে দিতাম ।

কলকাতা, 15 অগাস্ট : তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে ৷ গ্রেপ্তারের আগেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন এই ঘটনায় ক্ষুদিরামের সহযোগী প্রফুল্ল চাকি ৷ গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম ৷ মুজাফ্ফরপুর আদালত তাঁর ফাঁসির নির্দেশ দেয় ৷ নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ক্ষুদিরামের আইনজীবীরা ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ হাইকোর্টের বিচারপতি ক্ষুদিরামের ফাঁসির নির্দেশ বহাল রাখেন ৷

সালটা ছিল 1908 ৷ ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়ে একই রকম ঘোড়ায় টানা অন্য একটি গাড়িতে বোমা ছোড়েন । ফলস্বরূপ দু'জন ব্রিটিশ মহিলা প্রাণ হারান । শোনা যায়, প্রফুল্ল চাকিকে গ্রেপ্তার করার আগেই তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন । কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়েন । ক্ষুদিরামের বয়স তখন মাত্র 18 বছর 7 মাস 11 দিন । বিচারে মুজাফ্ফরপুর আদালত তাঁর ফাঁসির নির্দেশ দেয় ।

21 মে 1908 সালে বিচারপতি কর্ন ডফ, নাথুনি প্রসাদ ও জনক প্রসাদের এজলাসে ক্ষুদিরাম বসুর বিচার শুরু হয় । সেই মামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের হয়ে ময়দানে নেমেছিলেন মান্নুম ও বিনোদবিহারী মজুমদার নামে দুই আইনজীবী । অন্যদিকে আইনজীবী কালীদাস বসু ,উপেন্দ্রনাথ সেন এবং কেশরীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লড়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে । পরে তাঁদের সঙ্গ দেন কুলোকমল সেন, নগেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী নামে তিন আইনজীবী । ক্ষুদিরামের জবানবন্দী নেওয়া হয় । 13 জুন ছিল রায়দানের দিন । সেই দিন বিচারপতি ও ব্রিটিশ সরকারের হয়ে সওয়ালকারি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি আসে । চিঠিতে বলা হয়, ওই ইংরেজ সাহেবকে হত্যা করার জন্য আরও একটি বোমা পাঠানো হচ্ছিল ৷ তবে বাঙালি নয় কাজটি করবেন একজন বিহারী । এই চিঠি ক্ষুদিরাম বসুর তরফের আইনজীবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল । তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই চিঠির মাধ্যমেই বোঝা যায় গাড়িতে বোমা মারার ঘটনায় অন্য কোনও বড় মাথা জড়িত ৷ তারা কিশোর ক্ষুদিরামকে কাজে লাগিয়েছিল । সুতরাং তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি আইনজীবীদের এই বক্তব্য । বিচারপতি ক্ষুদিরামকে মৃত্যুদণ্ড দেন ৷ এরপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি সাত দিনের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

1908 সালের 8 জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি বেল ও রাভেজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয় । হাইকোর্টে ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী নরেন্দ্রকুমার বসু । ক্ষুদিরামের জন্য তিনি আপ্রাণ লড়াই চালিয়েছিলেন । হাইকোর্টে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের নির্দেশ আইন সংগত নয় ৷ ক্ষুদিরামকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে বিচারপতি ভালো করে সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেননি । আইন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অভিযুক্তের জবানবন্দী গ্রহণ করার কথা । কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুদিরামকে তাঁর পরিচয় জানাননি । যে সমস্ত প্রশ্ন ক্ষুদিরামকে করা হয়েছিল তার উত্তর আলাদা আলাদা করে নথিভুক্ত করা হয়নি কেন‌? সম্পূর্ণ জবানবন্দী নেওয়া হয়েছিল বাংলায়, কিন্তু তা লেখা হয়েছিল ইংরাজিতে ৷ ক্ষুদিরাম বসুর বক্তব্য একটি কাগজে নথিভুক্ত করা হয়েছিল ৷ তবে বয়ান নেওয়ার পরের দিন সেই কাগজে তাঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয় ৷ এই বিষয়ও প্রশ্ন করেন ক্ষুদিরামের আইনজীবী ৷ এই সমস্ত কারণে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করা উচিত ৷ রায়ের পুনর্বিবেচনারও দাবি জানানো হয় ৷ তবে হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, নিম্ন আদালত সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই এই রায় দিয়েছে ৷ ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুদিরামকে নিজের পরিচয় জানাতে ভুলে গেছিলেন ৷ ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্ন করার পর ক্ষুদিরাম বসু যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আলাদা আলাদা করে না লিখে একেবারে ইংরেজিতে লিখেছিলেন । তারপর তিনি তা বাংলা করে ক্ষুদিরামকে শুনিয়েছিলেন ৷ পরে সেই কাগজটি ক্ষুদিরামকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয় ।

আদালতে নরেন্দ্রকুমার বলেন , প্রফুল্ল চাকি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বোমা বাঁধার ব্যাপারে পাকা ছিলেন । তাই বলা যেতে পারে বোমা ছুড়েছিলেন প্রফুল্ল ওরফে দীনেশ । এই ঘটনার পরই আত্মঘাতী হন তিনি । অনুমান করা যায় দীনেশই বোমা ছুড়েছিলেন । নরেন্দ্রবাবু বলেন, ক্ষুদিরামকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল । কারণ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল । কিন্তু বিচারপতির বক্তব্য ছিল, ক্ষুদিরাম নিজে তা কখনও বলেননি । গ্রেপ্তারের সময় ক্ষুদিরামের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ,কার্তুজ এবং দুটো কোট পাওয়া গেছিল । পিস্তল দুটির মধ্যে একটি ছিল লোডিং, অন্যটি ফাঁকা । কার্তুজ খুব জোরালো ছিল না । এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি দীনেশ ব্যবহার করেছিলেন কি না তার কোনও প্রমাণ নেই । ক্ষুদিরাম যে সিল্কের কোট পড়েছিলেন সেটি দীনেশের ছিল । কিন্তু বিচারপতি বলেন, যদি ধরে নেওয়া হয় যে ক্ষুদিরাম বোমা ছোড়েননি, ব্যবহারের পর আগ্নেয়াস্ত্রগুলি তাঁর কাছে দেওয়া হয়েছিল তাহলেও তিনি সমান দোষী বলে বিবেচিত হবেন । এরপর নরেন্দ্র বলেন, ক্ষুদিরামের বয়স এখনও 19 হয়নি । ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাঁর জবানবন্দী থেকে অনুমান করা যায় যে তাঁর বিবেচনাবোধ একেবারেই অপরিপক্ক । বলা যায় তিনি অন্যের হাতের পুতুল হয়েছেন । কিন্তু বিচারপতি বলেন, ক্ষুদিরাম একেবারেই কাঁচা ছেলে ছিলেন না । একটা সুযোগের অপেক্ষায় তিনি ও তাঁর সহযোগী ঘটনার 20 দিন আগে থেকে মুজাফফরপুরে ছিলেন ৷ তাই তাঁকে বাচ্চা ছেলে বলা যায় না ৷

এবার নরেন্দ্রবাবু বলেন, ক্ষুদিরামের জবানবন্দী থেকে বোঝা যায় তিনি এই অপরাধ করে বোকামি করেছেন । অন্যের কথা শুনে তিনি অত্যন্ত সাহসী হয়ে পড়েছিলেন । অন্যের চালাকি ধরতে পারেননি । তিনি শুধুমাত্র সহযোগী ছিলেন । কিন্তু বিচারপতি বলেন, এটা বিবেচ্য নয় । এর জন্য তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না । তিনি নিজে স্বীকার করেছেন তিনি ও প্রফুল্ল চাকি দু'জন মিলে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন । সম্পূর্ণ ঘটনাটাই অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে । কীভাবে নিজেদের গা বাঁচিয়ে পালানো যায় তার সুষ্ঠু পরিকল্পনাও করেছিলেন তাঁরা । সেই কারণে আমরা এই আবেদন খারিজ করছি ।

মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার বিচারপতিরা জিজ্ঞাসা করেন, ক্ষুদিরাম তুমি কিছু বলতে চাও ? ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হত, তাহলে আপনাকে বোমা বাঁধা শিখিয়ে দিতাম ।

Intro:সালটা ছিল 1908. ক্ষুদিরাম বসু প্রফুল্ল চাকী তৎকালীন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়ে একই রকম ঘোড়ায় টানা অন্য একটি গাড়িতে বোমা মারেন। ফল স্বরূপ দুজন ব্রিটিশ মহিলা প্রাণ হারান। প্রফুল্ল চাকী কে গ্রেপ্তার করার আগেই শোনা যায় তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন। কিন্তু সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন। ক্ষুদিরাম বসুর বয়স তখন মাত্র 18 বছর 7 মাস 11 দিন। বিচারে মুজাফফরপুর আদালত তার ফাঁসির নির্দেশ দেয়।


Body:21 মে 1908 বিচারপতি কর্ন ডফ এর সঙ্গে নাথু নি প্রসাদ ও জনক প্রসাদ নামে দুজন জুড়ীর এজলাসে বিচার শুরু হয় ক্ষুদিরাম বসুর। সেই মামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের হয়ে ময়দানে নেমে ছিলেন মান্নু ম ও বিনোদ বিহারী মজুমদার নামে দুই কৌশলী। অন্যদিকে আইনজীবী কালিদাস বসু ,উপেন্দ্রনাথ সেন এবং কেশরী নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে। পরে এদের সাথেই যোগ দেন কুলো কমল সেন নগেন্দ্র নাথ লাহিড়ী এবং সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী নামে তিনজন। ক্ষুদিরামের জবানবন্দি নেওয়া হয়। এরপর 13 জুন ছিল রায় গানের পালা। কিন্তু ঐদিন হঠাৎ করে একটি চিঠি আসে বিচারপতি ও ব্রিটিশ সরকারের হয়ে সওয়াল কারি কৌশলী দের উদ্দেশ্যে। চিঠিতে বলা হয় আরেকটি বোমা যাচ্ছিল যেটা ওই ইংরেজ সাহেব কে মারার জন্য। এবং এবার বাঙালি নয় কাজটি করবেন একজন বিহারী। এই চিঠি ক্ষুদিরাম বসুর তরফের আইনজীবিদের হাতে একটা অস্ত্র তুলে দিয়েছিল বলা যায়। তারা বলেন এই চিঠির থেকেই বোঝা যায় সেদিনের ওই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো বড় মাথা কাজ করেছিল। কিশোর ক্ষুদিরাম কে কাজে লাগিয়েছিল তারা। সুতরাং তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি আইনজীবীদের এই বক্তব্য। ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারপতি। এরপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও সাত দিনের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ক্ষুদিরাম বসু।

1908 সালের 8 জুলাই হাইকোর্টের শুরু হয় এই মামলার শুনানি বিচারপতি বেল ও রা ভেজ এর ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টে ক্ষুদিরাম বসুর হয়ে সওয়াল করে ছিলেন আইনজীবী নরেন্দ্র কুমার বসু। শোনা যায় সদ্য যুবক ক্ষুদিরামের জন্য তিনি আপ্রাণ লড়াই চালিয়েছিলেন। প্রথমেই তিনি জানান নিম্ন আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা আইন সংগত নয় বিচারপতি অত্যন্ত দ্বিধান্বিত ছিলেন এই রায় দান করতে গিয়ে । এবং ক্ষুদিরাম কে দোষী সাব্যস্ত করার আগে তিনি ভালো করে সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেন নি। আইন অনুযায়ী একজন অভিযুক্তের জবানবন্দি গ্রহণ করার কথা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষুদিরাম বসুকে জানাননি তার পরিচয়। যে সমস্ত প্রশ্ন ক্ষুদিরাম কে করা হয়েছিল তার উত্তর আলাদা আলাদা করে নথিভূক্ত করা হয়নি কেন‌? পুরো জবানবন্দি লেখা হয়েছে ইংরেজিতে কিন্তু এটা নেওয়া হয়েছিল বাংলাতে এবং বাংলাতেই নথিভুক্ত করার কথা। পাশাপাশি ক্ষুদিরাম বসুর বক্তব্য যে কাগজে নথিভূক্ত করা হয়েছিল সেটি তাকে দিয়ে সই করানো হলো তারপর দিন কেন, এই প্রশ্ন করেন আইনজীবী। এই সমস্ত কারণে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করা উচিত এবং পুনর্বিচারের নির্দেশ দেওয়া হোক দাবি জানান তিনি। কিন্তু বিচারপতি এটা কি টেকনিক্যাল ব্যাপার বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি নিম্ন আদালত সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই এই রায় দিয়েছে বলে মদ দেয়। বিচারপতি বলেন ম্যাজিস্ট্রেট ভুলে গেছিলেন তার পরিচয় জানাতে এবং তিনি ধরে নিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু জানেন যে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্ন করার পর ক্ষুদিরাম বসু যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আলাদা আলাদা করে না লিখে একেবারে ইংরেজিতে লিখে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি তা বাংলা করে শুনিয়ে শুনিয়ে ছিলেন ক্ষুদিরাম কে। সেই সময় যারা বাংলা জানতেন এরকম লোকজন উপস্থিত ছিল। পরে সেই কাগজটি ক্ষুদিরাম কে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর নরেন্দ্র কুমার বসু আবার বলেন ,প্রফুল্ল চাকী যাকে দীনেশ নামে সম্বোধন করা হয়েছে পুরো মামলাতেই। তিনি ছিলেন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বোম বাধার ব্যাপারে পাকা। এখান থেকে বলা যেতেই পারে বোম ছুড়েছিলেন প্রফুল্ল চাকী ওরফে দীনেশ। পাশাপাশি প্রফুল্ল চাকী ওরফে দীনেশ এই ঘটনার পরপরই আত্মহত্যা করেন। এখান থেকে অনুমান করা যেতে পারে বোম প্রফুল্ল চাকী নিক্ষেপ করেছিল। নরেন্দ্র বাবু জানান ক্ষুদিরাম কে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। কারণ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু বিচারপতি বলেন ক্ষুদিরাম নিজে তা কখনো বলেনি।
এরপর নরেন্দ্র বাবু আবার বলেন ক্ষুদিরাম কে যখন ধরা হয় তার কাছ থেকে দুটি পিস্তল ,কার্তুজ এবং দুটো কোর্ট। পাওয়া গেছিল। পিস্তল দুটির মধ্যে একটি ছিল লোডিং অন্যটি ফাঁকা। কার্তুজ খুব জোরালো ছিল না। এবং ধর্মশালা থেকে তারা কোথায় গেছিল তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ক্ষুদিরামের কাছে যে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছিল সেগুলি দীনেশ ব্যবহার করেছিল কিনা তার কোন প্রমাণ নেই। এবং যে সিল্কের কোট পড়েছিল ক্ষুদিরাম সেটা প্রফুল্ল চাকী ওরফে দীনেশের। কিন্তু বিচারপতি বলেন যদি ধরে নেওয়া হয় যে ক্ষুদিরাম বোস বোম ছাড়েননি এবং ব্যবহারের পর আগ্নেয়াস্ত্র গুলো তার কাছে দেওয়া হয়েছিল তাহলেও সে সমান দোষী বলে বিবেচিত হবে।
এরপর নরেন্দ্র বাবু বলেন ক্ষুদিরাম একেবারেই সবে যুবক। তার বয়স এখনো 19 হয়নি। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে যে জবানবন্দি সে দিয়েছে তাপ থেকে অনুমান করা যায় তার বিবেচনাবোধ একেবারেই অপরিপক্ক। নিতান্ত বালক সে। সে কাঁচা ছেলে। এবং বলা যায় অন্যের হাতের পুতুল হয়েছে সে।
কিন্তু বিচারপতি বলেন ক্ষুদিরাম মোটেও কাঁচা ছেলে ছিল না। এই ঘটনা ঘটানোর জন্য সে ও তার সহযোগী মিলে কুড়ি দিন আগে থেকে মুজাফফরপুর এ গিয়ে বসে ছিল। একটা সুযোগের অপেক্ষায়। এর থেকে মোটেও বলা যায় বলা যায় না তিনি বাচ্চা ছেলে। বোমা ছুড়লে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে তিনি বোঝেন না।
এরপর নরেন্দ্র বাবু আবার বলেন ক্ষুদিরাম যে জবানবন্দি দিয়েছে সেখান থেকেই বোঝা যায় অত্যন্ত কাঁচা মনের বোকামির বসে সেই অপরাধ করেছে। অন্যের কথা শুনে সে অত্যন্ত সাহসী হয়ে পড়েছিল। অন্যের চালাকি ধরতে পারেনি। সে শুধুমাত্র সহযোগী ছিল। কিন্তু বিচারপতি বলেন এটা বিবেচ্য নয়। এর জন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে না। সে নিজে স্বীকার করেছে সে এবং প্রফুল্ল চাকী ওরফে দীনেশ দুজন মিলেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুরো মার্ডার টাই অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। এবং তার জন্য আগে থেকে সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল ।কিভাবে নিজেদের গা বাঁচিয়ে পালানো যায় তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও করেছিল তারা। সেই কারণেই আমরা আপনার আবেদন খারিজ করছি।


Conclusion:
Last Updated : Aug 17, 2019, 2:26 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.