কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর: হস্তক্ষেপ করবে না বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ । এ বছরের জুন মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআইকে বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দেন ৷ তাঁর সিবিআই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে (TET Recruitment Scam case) বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার ও অন্যরা । দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস পরে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখল (HC Division Bench uphelds Justice Abhijit Gangopadhyay Primary Recruitment Scam CBI Investigation) ৷
বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চের রায়
- ফরেনসিক তদন্ত যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে ৷
- প্রাথমিক দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল ৷
- আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত হবে (Court Monitored Probe) ৷
- সিবিআই সময়ে সময়ে আদালতে তদন্তের রিপোর্ট দেবে ৷
- 269 জনের চাকরি বাতিল হল ৷
- তাঁদের চাকরি দেওয়ার বিষয়ে গলদ থাকলে, তার তদন্ত হওয়া দরকার ৷
মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিটি নির্দেশ বহাল রাখল বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ ৷" সিবিআইয়ের তদন্তে আদালতের নজরদারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "অনেক সময় তদন্ত পথ হারিয়ে ফেলে ৷ এই তদন্ত যাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়, তাই 'কোর্ট মনিটর্ড তদন্ত' ৷" যে 269 জনের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁরা প্রয়োজনে সিঙ্গল বেঞ্চে এসে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন, জানালেন আইনজীবী ৷
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য
15 জুন, 2002: প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইকে বিশেষ টিম গঠন করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের (Justice Abhijit Ganguly orders CBI to form SIT to probe TET Recruitment Scam) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ।
- সিবিআই তদন্ত করছে 'রঞ্জন' ওরফে 'চন্দন মণ্ডল ও সৌমেন নন্দীর মামলা' ৷ এবার থেকে সেই মামলা আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হবে ।
- সিবিআই উপযুক্ত অফিসারের একটা দল গঠন করবে । 17 জুন তাঁদের নাম আদালতকে জানাতে হবে । 'সৌমেন নন্দী ও চন্দন মণ্ডল মামলা'য় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর কলকাতা ব্রাঞ্চের টিমের প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থাকবেন । তাঁর নাম জানাতে হবে আদালতে । তদন্ত চলাকালীন তাঁকে কলকাতা থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা যাবে না ।
- পর্ষদের পেশ করা রিপোর্টে 269 জনকে নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে । কিন্তু সেই নিয়োগ আইনি দিক দিয়ে কতটা যথাযথ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এটিকে 'একটা সাজানো গল্প' বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি । এদিন সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন: প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইকে সিট গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের
16 জুন, 2022: ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের আপিল
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার ও অন্যরা । প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ 2014 সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে সম্প্রতি 269 জনকে নতুন করে নিয়োগ করেছিল । তা বেআইনি বলে উল্লেখ করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি এও জানান, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এই নিয়োগের কোনও মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি ।
2014 সালে প্রায় 23 লক্ষ পরীক্ষার্থী টেট পরীক্ষা দিয়েছিল । তাতে 2016 সালে প্রায় 40 হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয় । পরে দেখা যায়, টেট পরীক্ষার একাধিক প্রশ্নের উত্তরে ভুল ছিল । একাধিক মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে । আদালত নির্দেশ দেয়, মামলাকারী প্রার্থীদের নম্বর দিয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে চাকরিতে নিয়োগ করতে হবে । সেইমতো 2018 সালে 269 জনকে নতুন করে চাকরি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ।
তবে মামলাকারী সৌমেন নন্দী ও রমেশ মালিক অভিযোগ করেন, 269 জনের যে নিয়োগ প্যানেল হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়ার পুরো বিষয়টা অস্বচ্ছ ৷ তাঁদের করা মামলার ভিত্তিতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন ৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি ৷ তা সত্ত্বেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কারণ তারা বুঝতে পারছে না ৷
আরও পড়ুন: কীসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত নম্বর, হাইকোর্টে প্রশ্ন বিকাশরঞ্জনের
20 জুন, 2022: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের পদ খারিজ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Calcutta High court removed Manik Bhattacharya from president post) ৷ বিচারপতির নির্দেশে নতুন সভাপতি দায়িত্ব না-নেওয়া পর্যন্ত আপাতত সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচিই সভাপতির দায়িত্ব সামলাবেন ।
16 জুলাই: 1 নম্বর বেশি পাওয়া
আরটিআই-এর মাধ্যমে আবেদন না-করা সত্ত্বেও 269 জন চাকরিপ্রার্থীর সবাইকে কেন অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হয়েছিল ? এই বিষয়ে বিশদে তদন্ত হওয়া দরকার ৷ 16 জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে চলা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় (Primary Teacher Recruitment Scam) এই দাবি তোলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharya) ৷ ইতিমধ্যে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে 269 জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করেছে আদালত ৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (West Bengal Board Of Primary Education) দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরে অসন্তুষ্ট ছিলেন ৷ তাই তাঁরা আরটিআই করেছিলেন ৷ সেই আবেদনের ভিত্তিতেই যোগ্যতমদের 1 নম্বর করে অতিরিক্ত দেওয়া হয়ছিল ৷ সেই নম্বরের ভিত্তিতেই তাঁরা চাকরি পান ৷
বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, চাপের মুখে পিঠ বাঁচাতেই এমন তত্ত্ব খাড়া করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ যাঁদের 1 নম্বর করে বাড়ানো হয়েছিল, তাঁরা আরটিআই করেননি ৷ উলটে তাঁরা রাস্তায় প্রতিবাদে নামেন ৷ সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হয়েছিল ৷ বিকাশরঞ্জনের দাবি, এই তথ্য সিঙ্গল বেঞ্চে পর্ষদ নিজেই পেশ করেছিল ৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল, কীসের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছিল ? গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷
আরও পড়ুন: TET Recruitment Scam: টেট দুর্নীতি মামলায় চন্দন মণ্ডলের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি
এছাড়া, তিনি জানান, মামলাকারীরা এমন বেশ কিছু ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছেন, যাঁরা 2014 সালে টেট না দিয়েই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন ! কেউ আবার পরীক্ষায় ফাঁকা উত্তরপত্র জমা দিয়ে চাকরি আদায় করেছেন ! সৌমেন নন্দী নামে এক মামলাকারীর কাছে এমন অন্তত 18 জনের বেআইনি নিয়োগের তথ্য রয়েছে ৷ এমনকী, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ৷ আন্দোলনকারীদের চাকরি পাইয়ে দিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে ৷ যা দুর্নীতিরই নামান্তর বলে যুক্তি পেশ করেছেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা ৷
25 অগস্ট, 2022: মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ
টেট দুর্নীতি (Tet scam) মামলায় অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে সিবিআই । গত কয়েক দিন ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের খোঁজ পাচ্ছে না । এরপর গোটা বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের জানিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা । সিবিআই-ও এরপর এই নিয়ে উদ্যোগী হয় । 'নিখোঁজ' প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতির সন্ধানে লুকআউট নোটিশ জারি করা যায় কি না, তা নিয়ে আদালতের পরামর্শ চায় । এরপর বৃহস্পতিবার রাতে সিবিআই মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করে (CBI issues Lookout notice against TMC MLA Manik Bhattacharya) ।
22 জুলাই মানিকের বাড়িতে 17 ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি । তার পাঁচ দিনের মধ্যেই তাঁকে ডেকেও পাঠায় ইডি । দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে জেরার পরে আরও দু’বার মানিককে ডেকে পাঠানো হয় ইডির তরফে ৷ কিন্তু দু’বারই ইডির হাজিরায় অনুপস্থিত থেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) এই বিধায়ক ৷
আরও পড়ুন: বিধানসভায় হাজির তৃণমূল বিধায়ক মানিক, প্রশ্ন তুললেন সিবিআইয়ের লুক আউট নোটিশ নিয়েও