কলকাতা, 10 মে: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় দুর্ঘটনায় পুলিশ আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করছে কি না, তা জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সেইসঙ্গে, বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থগিত রাখা হবে কি না, সেই বিষয়টিও আদালত খতিয়ে দেখবে বলে জানান বিচারপতি ৷
চণ্ডীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় যুবকের ৷ সেই ঘটনায় গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হলেও পরে আদালত তাকে জামিন দেয় ৷ এরপরই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেই মামলাতে বুধবার বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার বেঞ্চ জানায়, পুলিশ হাইকোর্টের দেওয়া নির্দশ পালন করছে কিনা তা জানতে চায় আদালত ৷ সেই সঙ্গে, এদিন বিচারপতি পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, আপাতত দু'টি বিষয় তিনি দেখবেন। যার মধ্যে প্রথমটি হল, বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের দেওয়া নির্দেশ কার্যকর হল কি না এবং দ্বিতীয়ত, এফআইআর স্থগিত করা হবে কিনা ৷ বিচারপতি বলেন, "এই দু'টি বিষয় বিচার করব।"
বিচারপতি মান্থা অন্য মামলায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও রকম এফআইআর দায়ের করতে হলে পুলিশকে হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে। কয়েকদিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে শুভেন্দুর কনভয়ের একটি গাড়ির সঙ্গে এক সাইকেল আরোহীর ধাক্কা লাগে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত্যু বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। এমনকী ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসরে নামে তৃণমূলও ৷ তৃণমূলের তরফে সরাসরি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করা হয় ৷ পরে সিআইডি এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। যদিও ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। এদিন শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বলেন, "জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ম্যানুয়াল মেনে বিরোধী দলনেতার যাবতীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। সেখানে কী কী ব্যবস্থা থাকবে তাও বিস্তারিত বলা আছে। রুট লাইনিং, পাইলট কার ওয়াচার, সিকিউরিটি ট্রেন্ড ড্রাইভার, সভার জায়গায় নিরাপত্তা দেখার মতো নজরদারির ব্যাবস্থা রাজ্য করবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী পাহারা দেবে।"
বিরোধী দলনেতার আইনজীবীর অভিযোগ, "গাড়ি, রুট লাইনিং সিসিটিভি দেওয়ার কথা থাকলেও রাজ্য সরকার তা দেয় না। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনা কনভয়ের সামনে ঘটেছে। সেই নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগও করা হয়েছে।" কিন্তু অভিযোগই সার, রাজ্য পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেও জানাচ্ছেন আইনজীবী। উল্লেখ্য, 4 মে আচমকাই কনভয়ের সাত নম্বর গাড়ি রাত সাড়ে ন'টায় ওই সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে ৷ 5 মে জামিন যোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয় চণ্ডীপুর থানায়। আনন্দ পাণ্ডে নামে ওই চালক এনএসজি ট্রেনি হিসাবে কর্মতর বলে জানা গিয়েছে। তাঁকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির 304 জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়। যদিও গ্রেফতারের আগে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
এবার জামিন অযোগ্য 304 পার্ট 2 ধারা দেওয়ার জন্য একদিনে দু'বার আবেদন করে পুলিশ। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই ওই গাড়ি চালককে এক দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। বিচারপতি মান্থা এদিন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "যেদিন জামিন যোগ্য ধারায় মামলা, সেদিনই জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়ার আবেদন ! এর কারণ কী ?" শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীর বক্তব্য, "এটা থেকে স্পষ্ট একজন সরকারি অফিসারকে অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার। একের পর এক ধারা দেওয়ার আবেদনে প্রতিহিংসা দেখা যাচ্ছে। তাই তদন্ত সিবিআইকে হস্তান্তরের আবেদন করা হয়েছে। হাইকোর্টের রক্ষা কবচ থাকায় শুভেন্দুকে এখনও এফআইআরে যুক্ত করা হয়নি।" সেইসঙ্গে, পুলিশের বয়ানে স্পষ্ট রাজনৈতিক জায়গা থেকে এই অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। অন্য কেউ লিখে দিয়েছে, মৃতের বাবা টিপ সই করেছেন মাত্র। আগামিকাল ফের এই মামলার শুনানি।
আরও পড়ুন: 19 মে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ, টুইট করলেন শিক্ষামন্ত্রী