ETV Bharat / state

নেতাজির হাতে শুরু এই পুজোর প্যান্ডেল সাজছে হাজার খুদে-শিল্পীর অঙ্কনে

হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব ৷ এবার তাদের থিম "সহজিয়া।" মণ্ডপসজ্জার কাজ করছে 1 হাজার খুদে-শিল্পী!

হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব
হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব
author img

By

Published : Oct 7, 2020, 12:38 PM IST

কলকাতা, 7 অক্টোবর : বাজছে পুজোর ঘণ্টা । কোরোনা আবহে দুর্গাপুজো নিয়ে প্রথমে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে কলকাতার বড় বড় পুজোগুলির অধিকাংশতেই । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব মণ্ডপের পুজোর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখল ETV ভারত । 1942 সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে শুরু হওয়া এই পুজো এবছর 78তম বছরে পা দিল। এবার তাদের থিম "সহজিয়া।" কিন্তু, কী সহজ করে দেখাতে চাইছে তারা ?

একটি শিশুর মনশ্চক্ষে কেমন হবে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ? কেমন হবে প্রতিমার রূপ ? তা কল্পনা করেই এই বছর দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরি করছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব। অর্থাৎ, খুদেরা দুর্গাপুজো কল্পনা করলে তাদের সারল্য দিয়ে তারা হয়ত আকাশে শুভ্র-সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখবে, দেখবে কাশফুল। সেগুলিকেই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পুজোর মণ্ডপে। আবার বাচ্চারা যেমনভাবে দুর্গামায়ের রূপ ভাবতে পারে তা কল্পনা করেই রূপ দেওয়া হচ্ছে প্রতিমার। পুজো উদ‍্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই বছর হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের দুর্গাপুজো বাচ্চাদের উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করা হচ্ছে। সেই উদ্দেশ্য সাধনে মণ্ডপসজ্জাতেও নিযুক্ত করা হয়েছে 1 হাজার খুদে-শিল্পীকে । যাদের এক হাজার অঙ্কনে সেজে উঠছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের মণ্ডপ । এই বছর হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব একাধিক চ‍্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। প্রথম চ‍্যালেঞ্জ তো অবশ্যই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে চলা পরিস্থিতি । পাশাপাশি, প্রশাসনের নির্দেশে এই বছর হাজ‍রা পার্ক দুর্গোৎসবকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে আগে যে মাঠে পুজো হত ঠিক তার পাশের মাঠে। ফলে, নতুন একটা জায়গায় নতুন করে সেট-আপ তৈরি করাটাও একটা চ‍্যালেঞ্জ ছিল উদ‍্যোক্তাদের কাছে । সেগুলি অতিক্রম করে বর্তমানে জোরকদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ।

এবছরের ভাবনা নিয়ে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের সহ-সম্পাদক সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা সকলে দুঃখ-কষ্ট নিয়েই আলোচনা করছি, আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর হার দেখছি, প্রতিদিন কতজন আক্রান্ত হচ্ছে দেখছি। এই সময়ে যাদের কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি তারা হল বাচ্চারা। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ, বন্ধুদের বাড়ি যেতে গেলে বন্ধুর বাড়ি হয়ত চিন্তা করছে সে এলে সেটা বাড়ির বাচ্চাটার জন্য কতটা ভালো হবে। তারা কিন্তু বাজেভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই পরিস্থিতিতে। এই বছর আমাদের শিল্পী শ্রী কৃষাণু পাল। আমাদের শিল্পী চিন্তা করলেন, আমরা এবছরের পুজোটা ডেডিকেট করব বাচ্চাদের। পুজোটা তো একটা আনন্দের জায়গা। বাচ্চাদের আনন্দের একটা পরিবেশ দিতে চাই । শিল্পীর সঙ্গে এই ভাবনায় কাজ করছে আরও এক হাজার শিল্পী। কারা এই এক হাজার শিল্পী ? তারা হল খুদে-শিল্পী। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে দিই ও বিষয় দিয়ে দিই । তাদের বলি, দুর্গাপুজো বা দুর্গা-মা নিয়ে তাদের ভাবনা আঁকতে । এক হাজার বাচ্চা আমাদের কাছে এক হাজার আঁকা জমা দেয়। সেই আঁকা দিয়েই কিন্তু আমাদের প‍্যান্ডেল সাজছে । একটা বাচ্চা যদি চিন্তা করে দুর্গাপুজো কেমন হতে পারে, প‍্যান্ডেল হতে পারে, সেটাই কিন্তু এবারে আমরা হাজরা পার্কে মানুষকে দেখাতে চলেছি।"

হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের এবারের থিম "সহজিয়া"

খুদেদের কথা ভেবে শুধু থিম করেই থেমে থাকবে না হাজরা পার্ক। মণ্ডপ উদ্বোধন থেকে শুরু করে গোটা উৎসবেই তাদের বিভিন্নভাবে শামিল করার পরিকল্পনা নিয়েছেন উদ‍্যোক্তারা। সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এবার বাজেট অনেকেই কাটছাঁট করতে হয়েছে। তবে, স্বল্প বাজেটেও যে বাচ্চাদের নিয়ে খুব সুন্দর একটা সৃষ্টি করা যায় সেটা হাজরা পার্ক এই বছর দেখিয়ে দেবে। আমাদের মুখ্য-উপদেষ্টা বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় খুব আগ্রহ নিয়েছেন এই ধারণায়। আন্ডারপ্রিভিলেজ়ড একটা বিশাল সংখ্যক বাচ্চা আমাদের আঁকা দিয়েছে। আমরা পুজো বাজেট থেকে যা করণীয় করছি। কিছু NGO-কে আমরা বই-খাতা দিয়েছি তাদের চাহিদা অনুযায়ী। আগামী 16 অক্টোবর 500 বাচ্চাকে নতুন জামাকাপড় দেব। পাশাপাশি, আমাদের ইচ্ছে আছে খুদে শিল্পীদের দিয়েই এই পুজোর উদ্বোধনটা করাব। এবছর হাজরা পার্কের পুরো ব্যাপারটাই বাচ্চাদের নিয়ে, বাচ্চাদের আনন্দ নিয়ে।"

COVID-19 প্রতিরোধে থাকবে যাবতীয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব‍্যবস্থাও । সামাজিক দূরত্ব মেনে যাতে দর্শনার্থীরা দর্শন করতে পারেন তার জন্য যেমন প্রশাসন কাজ করবে, তেমনি সজাগ থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। থার্মাল গান দিয়ে মাপা হবে তাপমাত্রা, করা হবে হাত জীবাণুমুক্ত । ব‍্যবস্থা থাকবে মাস্কেরও । কোনও দর্শনার্থী মাস্ক ছাড়া এলে তাঁকে ফিরিয়ে না দিয়ে তাঁকে দেওয়া হবে মাস্ক। বাড়িতে বসেও যাতে মানুষ হাজরা পার্কে মায়ের দর্শন করতে পারেন থাকবে তার ব‍্যবস্থাও । তবে, শিল্প ও সৃষ্টি উপভোগ করতে মণ্ডপে এসে দর্শনের জন্যই সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের উদ‍্যোক্তারা। সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সিনেমাটা ভার্চুয়ালে হয়। কিন্তু, মায়ের পুজো, শিল্প, সৃষ্টি দেখতে মণ্ডপে কিন্তু আসতেই হবে। আমরা আমাদের দিক থেকে সবরকম সুরক্ষা, নিরাপত্তার ব‍্যবস্থা রাখব। মানুষকে অনুরোধ করব যে, আপনারা আসুন।"

কলকাতা, 7 অক্টোবর : বাজছে পুজোর ঘণ্টা । কোরোনা আবহে দুর্গাপুজো নিয়ে প্রথমে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে কলকাতার বড় বড় পুজোগুলির অধিকাংশতেই । হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব মণ্ডপের পুজোর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখল ETV ভারত । 1942 সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে শুরু হওয়া এই পুজো এবছর 78তম বছরে পা দিল। এবার তাদের থিম "সহজিয়া।" কিন্তু, কী সহজ করে দেখাতে চাইছে তারা ?

একটি শিশুর মনশ্চক্ষে কেমন হবে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ? কেমন হবে প্রতিমার রূপ ? তা কল্পনা করেই এই বছর দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরি করছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব। অর্থাৎ, খুদেরা দুর্গাপুজো কল্পনা করলে তাদের সারল্য দিয়ে তারা হয়ত আকাশে শুভ্র-সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখবে, দেখবে কাশফুল। সেগুলিকেই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পুজোর মণ্ডপে। আবার বাচ্চারা যেমনভাবে দুর্গামায়ের রূপ ভাবতে পারে তা কল্পনা করেই রূপ দেওয়া হচ্ছে প্রতিমার। পুজো উদ‍্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই বছর হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের দুর্গাপুজো বাচ্চাদের উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করা হচ্ছে। সেই উদ্দেশ্য সাধনে মণ্ডপসজ্জাতেও নিযুক্ত করা হয়েছে 1 হাজার খুদে-শিল্পীকে । যাদের এক হাজার অঙ্কনে সেজে উঠছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের মণ্ডপ । এই বছর হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব একাধিক চ‍্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। প্রথম চ‍্যালেঞ্জ তো অবশ্যই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে চলা পরিস্থিতি । পাশাপাশি, প্রশাসনের নির্দেশে এই বছর হাজ‍রা পার্ক দুর্গোৎসবকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে আগে যে মাঠে পুজো হত ঠিক তার পাশের মাঠে। ফলে, নতুন একটা জায়গায় নতুন করে সেট-আপ তৈরি করাটাও একটা চ‍্যালেঞ্জ ছিল উদ‍্যোক্তাদের কাছে । সেগুলি অতিক্রম করে বর্তমানে জোরকদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ।

এবছরের ভাবনা নিয়ে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের সহ-সম্পাদক সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা সকলে দুঃখ-কষ্ট নিয়েই আলোচনা করছি, আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর হার দেখছি, প্রতিদিন কতজন আক্রান্ত হচ্ছে দেখছি। এই সময়ে যাদের কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি তারা হল বাচ্চারা। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ, বন্ধুদের বাড়ি যেতে গেলে বন্ধুর বাড়ি হয়ত চিন্তা করছে সে এলে সেটা বাড়ির বাচ্চাটার জন্য কতটা ভালো হবে। তারা কিন্তু বাজেভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই পরিস্থিতিতে। এই বছর আমাদের শিল্পী শ্রী কৃষাণু পাল। আমাদের শিল্পী চিন্তা করলেন, আমরা এবছরের পুজোটা ডেডিকেট করব বাচ্চাদের। পুজোটা তো একটা আনন্দের জায়গা। বাচ্চাদের আনন্দের একটা পরিবেশ দিতে চাই । শিল্পীর সঙ্গে এই ভাবনায় কাজ করছে আরও এক হাজার শিল্পী। কারা এই এক হাজার শিল্পী ? তারা হল খুদে-শিল্পী। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে দিই ও বিষয় দিয়ে দিই । তাদের বলি, দুর্গাপুজো বা দুর্গা-মা নিয়ে তাদের ভাবনা আঁকতে । এক হাজার বাচ্চা আমাদের কাছে এক হাজার আঁকা জমা দেয়। সেই আঁকা দিয়েই কিন্তু আমাদের প‍্যান্ডেল সাজছে । একটা বাচ্চা যদি চিন্তা করে দুর্গাপুজো কেমন হতে পারে, প‍্যান্ডেল হতে পারে, সেটাই কিন্তু এবারে আমরা হাজরা পার্কে মানুষকে দেখাতে চলেছি।"

হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের এবারের থিম "সহজিয়া"

খুদেদের কথা ভেবে শুধু থিম করেই থেমে থাকবে না হাজরা পার্ক। মণ্ডপ উদ্বোধন থেকে শুরু করে গোটা উৎসবেই তাদের বিভিন্নভাবে শামিল করার পরিকল্পনা নিয়েছেন উদ‍্যোক্তারা। সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এবার বাজেট অনেকেই কাটছাঁট করতে হয়েছে। তবে, স্বল্প বাজেটেও যে বাচ্চাদের নিয়ে খুব সুন্দর একটা সৃষ্টি করা যায় সেটা হাজরা পার্ক এই বছর দেখিয়ে দেবে। আমাদের মুখ্য-উপদেষ্টা বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় খুব আগ্রহ নিয়েছেন এই ধারণায়। আন্ডারপ্রিভিলেজ়ড একটা বিশাল সংখ্যক বাচ্চা আমাদের আঁকা দিয়েছে। আমরা পুজো বাজেট থেকে যা করণীয় করছি। কিছু NGO-কে আমরা বই-খাতা দিয়েছি তাদের চাহিদা অনুযায়ী। আগামী 16 অক্টোবর 500 বাচ্চাকে নতুন জামাকাপড় দেব। পাশাপাশি, আমাদের ইচ্ছে আছে খুদে শিল্পীদের দিয়েই এই পুজোর উদ্বোধনটা করাব। এবছর হাজরা পার্কের পুরো ব্যাপারটাই বাচ্চাদের নিয়ে, বাচ্চাদের আনন্দ নিয়ে।"

COVID-19 প্রতিরোধে থাকবে যাবতীয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব‍্যবস্থাও । সামাজিক দূরত্ব মেনে যাতে দর্শনার্থীরা দর্শন করতে পারেন তার জন্য যেমন প্রশাসন কাজ করবে, তেমনি সজাগ থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। থার্মাল গান দিয়ে মাপা হবে তাপমাত্রা, করা হবে হাত জীবাণুমুক্ত । ব‍্যবস্থা থাকবে মাস্কেরও । কোনও দর্শনার্থী মাস্ক ছাড়া এলে তাঁকে ফিরিয়ে না দিয়ে তাঁকে দেওয়া হবে মাস্ক। বাড়িতে বসেও যাতে মানুষ হাজরা পার্কে মায়ের দর্শন করতে পারেন থাকবে তার ব‍্যবস্থাও । তবে, শিল্প ও সৃষ্টি উপভোগ করতে মণ্ডপে এসে দর্শনের জন্যই সকলকে আহ্বান জানাচ্ছে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের উদ‍্যোক্তারা। সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সিনেমাটা ভার্চুয়ালে হয়। কিন্তু, মায়ের পুজো, শিল্প, সৃষ্টি দেখতে মণ্ডপে কিন্তু আসতেই হবে। আমরা আমাদের দিক থেকে সবরকম সুরক্ষা, নিরাপত্তার ব‍্যবস্থা রাখব। মানুষকে অনুরোধ করব যে, আপনারা আসুন।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.